দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় হাকালুকি হাওর তীরের মানুষদের ঘরে নেই ঈদের আমেজ

July 6, 2016,

কুলাউড়া অফিস॥ কিলা (কেমনে) থাকতাম, আফালে (বাতাসে সৃষ্ট বড় বড় ঢেউ) বাড়ি ঘরর মাটি ছাড়াইয়া (ধুয়ে) লইয়া (নিয়ে) যারগি (যাচ্ছে)। বন্যার আড়াই মাস পার অই গেছে (অতিক্রম করেছে), বাড়িঘর থাকি (থেকে) পানি নামলেও রাস্তাঘাট পানির তলে (নিচে) আটাচলার (চলাচলের) কুনু (কোন) উপায় নাই। আর ঈদ…এভাবেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে এ প্রতিবেদকের কাছে কথাগুলো বললেন হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের কাড়েরা গ্রামের রেজিয়া, রেশমা, সবুজ, কানেহাত গ্রামের রফুল মিয়া, চান মিয়া, রজাক, চিলারকান্দি গ্রামের সমছু মিয়া, বশির মিয়া, জুনাব আলী, মখতই। তাদের কথায় ফুটে উঠে যেন গোটা হাওর তীরের মানুষের ঈদ আনন্দের চিত্র।

Moulvibazar-Hakaluki-(2)
এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি তীরের মানুষ স্মরণকালের দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে পড়েছে। বন্যার কারণে বিশেষ করে রোযায় মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ ছিলো না। রোযা শেষ হলেও এখানে মানুষের কাছে ঈদের কোন আনন্দ নেই।
স্থানীয় লোকজনতের মতে, এবার বন্যার শুরু হয়েছে বৈশাখ মাসের শুরু থেকে। জৈষ্ঠ্য মাসে এর তীব্রতা এতই বেশি যে, বাড়িঘরে বন্যার পানি উঠে। এখন আষাঢ়। বন্যার পানি ঘর নামলেও বাড়ির অক্টোপাঁশ জুড়ে রয়েছে। চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা। হাওর পাড়ের মানুষ এবার সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা করছেন।
হাওর তীরের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ও জয়চন্ডী। জুড়ী উপজেলার জায়ফর নগর ও পশ্চিম জুড়ী। বড়লেখা উপজেলার বর্নি ও সুজানগর ইউনিয়নের মানুষ।

Moulvibazar-Hakaluki
ভুকশিমইল ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার হোসেন খান, ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সাহেদ আহমদ ও ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার নজরুল ইসলাম জানান, ২৩ এপ্রিল ইউনিয়ন নির্বাচনে তারা মেম্বার হয়েছেন। এখনো দায়িত্ব পাননি। তাদের এলাকার মানুষ সরকারি কোন সহযোগিতাও পায়নি। পানির সাথে যুদ্ধ করে বসবাস করছেন। এখানে শুধু অভাবি মানুষ নয়, বিত্তবানদের কাছেও ঈদের কোন আনন্দ নেই।
সরেজমিন হাকালুকি হাওর তীরবর্তি ভুকশিমইল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ৩১ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত ভুকশিমইল ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি। ২১ টি গ্রামের ছোট বড় শতাধিক রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। ইউনিয়নের বড়দল, কানেহাত, কালেশার, জাব্দা, মুক্তাজিপুর, শশারকান্দি, চিলারকান্দি, কাড়েরা, বাদে ভুকশিমইল, ভুকশিমইল, জালালপুর, মদনগৌরি, মহেষগৌরি, গৌড়করণ, কুরবানপুর, নবীপুরও সাদিপুর গ্রামের কোন মানুষ নৌকা ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারেন না। গত আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে একই চিত্র।
ভুকশিমইল ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, ভুকশিমইল ইউনিয়নের দুর্গত মানুষের কাছে কোন সরকারি ত্রাণ বা সাহায্য পৌঁছায়নি। শুধু ভুকশিমইল ইউনিয়নে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন জীবন যাপন করছেন। তার মধ্যে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশী। এসব মানুষ বাঁচার জন্য লড়াই করছে। ঈদ আনন্দ তাদের কাছে গৌণ।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com