দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় বাড়ছে বানভাসি মানুষের দূর্ভোগ
মু.ইমাদ উদ দীন॥ জেলায় বন্যার প্রায় ১৬ দিন চলমান। এ জেলার ৭টি উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে থাকলেও,হাওর এলাকায় ভিন্ন রুপ। বিশেষ করে হাকালুকি হাওর তীরবর্তী এলাকায় বানের পানি না কমে এখন দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় রুপ নিচ্ছে। তাই চরম দূর্ভোগ বাড়ছে হাকালুকি হাওর তীরবর্তী ৩ উপজেলার বানভাসিদের। বানের পানিতে ডুবে থাকা ঘরবাড়ি আর রাস্তাঘাট যখন জেগে উঠার প্রত্যাশায় ছিলেন দূর্ভোগগ্রস্থরা। ঠিক তখনই উল্টো চিত্র। ধীরগতিতে বানের পানি কমে তা দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় রুপ নিচ্ছে। দিনে বা রাতে পানি কিছুটা কমলেও আবার বৃষ্টিতে যেই সেই। দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া,জুড়ী ও বড়লেখা এই তিনটি উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষ বন্যা কবলিত মানুষ এখন চরম দূর্দশায়। গতকাল বন্যা কবলিত হাকালুকি হাওর তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ও আশ্রয় কেন্দ্রেগুলো ঘুরে দূর্ভোগগ্রস্থদের সাথে আলাপে তারা তাদের দূর্দশার কথা জানান। অনেকটা গাদাগাদি করে আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে ঠাঁই নেওয়া বন্যার্তরা জানান রান্না করা খাবার,বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা প্রকট। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে শিশুসহ বয়স্কদের চর্ম,ডাইরিয়া,জ¦র,সর্দি,কাশি,মাথা ব্যাথা,পেটব্যাথাসহ নানা রোগবালাই। রয়েছে বিসাক্ত সাপ আতঙ্কও। তারা ক্ষোভের সাথে জানালেন ত্রাণের জন্য রাত দিন অপেক্ষায় থাকলেও এপর্যন্ত সরকারি তরফে দুই ধাপে ১০ কেজি চাল ছাড়া আর কিছুই পাননি। আর বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্দ্যোগের ত্রাণ কেবল শুকনো খাবার বিস্কুট,চিড়া,মুড়ি,গুড় পাচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি কোনো মেডিকেল টিম এখনো তাদের দেখতে যায়নি। তাই তারা পানিবাহিত নানা রোগবালাই নিয়ে অর্ধহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তারা জানালেন বন্যায় তাদের আয় রোজগার নেই। তাই এখন ঘরে চাল নেই। ভাত নেই। খানি নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই। নেই স্যানিটেশন সুবিধাও। শুধুই নেই আর নেই। এখন আছে যা তা শুধু বানের পানি আর হাহাকার। একটু পানি কমলে বৃষ্টি তা ভরিয়ে দিচ্ছে। তাই বন্যার পানি কমে যাওয়ার আশা করি কি ভাবে। এখন বাড়ি ফেরা আর পূর্ণবাসনের দুশ্চিন্তায় তাড়া করছে আশ্রয় কেন্দ্র ও অন্যত্র থাকা দূর্দশাগ্রস্থ বানভাসিদের। কিন্তু তাদের অধিকাংশ বাড়িতে এখনো কমর থেকে হাটু পানি। আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে থাকা অনেকেই জানালেন ঈদের দিনও তারা অর্ধাহারে অনাহারে ছিলেন। আর ওই সময় যারা বাড়িতে ছিলেন তারাও রাত দিন পার করেছেন নানা উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। চরম অসহায় বন্যার্ত এ মানুষগুলোর এখন দু’চোখের অশ্রুই যেন তাদের সান্তনার ভাষা। তাদের মত অসহায় ওই এলাকার গৃহগালিত পশুগুলোও। খাদ্য আর বাসস্থান হারিয়ে তারাও পড়েছে চরম সংকটে। খাদ্যহীন গৃহহীন মানুষ গুলোর দুর্ভোগ আর মানবেতর জীবনযাপন এখন তাদের নিত্যসঙ্গী। বানভাসি অসহায় মানুষগুলো রাত পোহালেই ত্রাণের আশায় পথের পাণে চেয়ে থাকেন। জীবন বাচাঁতে পেটের দায়ে। কিন্তু তারা হতাশ হচ্ছেন। কারন তারা দূর্দিনে পাচ্ছেন না আশানূরুপ সাহায্য। সরকারী তরফে যে সহযোগীতা আসছে তা যেমন পর্যাপ্ত নয়। আর এবারের বন্যায় ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণও হচ্ছে কম। এবছর এজেলার ৭টি উপজেলার হাওর ও নদী তীরের মানুষ বন্যায় নাকাল। বন্যা তাদের পিছু নেওয়াতে নানা দূর্ভোগ। কর্ম না থাকা বাসস্থানহীন অসহায় মানুষগুলোর যেমন খাদ্য ঘাটতি। তেমনি নতুন উপদ্রব দূষিত বানের পানিতে নানা রোগবালাই। কোন রকম আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া বানভাসিদেরও দূর্ভোগের অন্তনেই। হাওর তীরে অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতেও নানা প্রতিকূলতা। নীচতলা ডুবন্ত থাকা ওইসকল আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটেরও নেই সু-ব্যবস্থা। হাওর পাড়ের ছোট বড় বাজার গুলোর দোকানীরা জানালেন গেল প্রায় ১৫ দিন থেকে তাদের ব্যবসায় দূর্দিন যাচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ অভাবে থাকায় দোকান মুখী হচ্ছেন কম। আয় রোজগার কমেছে বন্যা কবলিত এলাকার গাড়ি চালকসহ শ্রমজীবী মানুষের। জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায় বানের পানিতে ডুবে জেলার বড়লেখায় ১ জন,কুলাউড়ায় ১ জন ও সদর উপজেলায় ৫ জন শিশু ও কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বন্যার্তদের স্বাস্থ্য সেবায় ৭০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে জানালেও এবিষয়ে দূর্ভোগগ্রস্থদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থদের জোরালো দাবি বন্যা ও দীর্ঘ জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে অবিলম্বে দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি,কাউয়াদিঘি ও হাইল হাওর এবং মনু,ফানাই,বরাক,ধলাই ও জুড়ী নদীসহ অনান্য নদী সংস্কারসহ বাঁধ নির্মাণ। এ জেলার নদী ও হাওর শাসনের পরিকল্পিত উদ্যোগ ও উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার আওতায় এনে হাওর অঞ্চলের জনবসতি,কৃষি, মৎস্য,জলজ প্রাণি,উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রদক্ষেপ নেওয়ার।
মন্তব্য করুন