দুবাইতে বিট কয়েনের নামে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ৩০০ মিলিয়ন ডলার নিয়ে দুই বাংলাদেশী উধাও
তোফায়েল আহমেদ (পাপ্পু), দুবাই থেকে॥ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে বিট কয়েনের নামে কোম্পানি খুলে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে গ্রাহকের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার নিয়ে পালিয়ে গেছেন দুই বাংলাদেশী। বিষয়টি নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ১ ডিসেম্বর থেকে দুবাইয়ের ক্লক টাওয়ার এলাকায় একটি ভবনে প্রবাসী ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম নামে একটি কোম্পানির অফিসে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীসহ বিট কয়েন’ এ বিনিয়োগকারী অসংখ্য বিদেশী গ্রাহকদের ভিড় করতে দেখা যায়। ঘটনাটি গত ৩০ শে নভেম্বর রাতে ঘটে।
গ্রাহকরা প্রতারক তারেক ও জাহেদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কাছে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। প্রতারকের নাম এইচ এম তারেক ও মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম। দুজনের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও পাঁচলাইশ থানা এলাকায়।
গ্রাহকদের অভিযোগ বিট কয়েনের নামে এই দুই ব্যাক্তি প্রতারণা করে সাড়ে দশ হাজার গ্রাহকদের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার উপর তাদের বিনিয়োগকৃত টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশী গ্রাহকদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে আটহাজার বাকিরা ভারত, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশের। এমন প্রতারকদের কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায় এ নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপর দিকে বাংলাদেশে যেন এই দুই প্রতারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় সে ব্যাপারে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের মাধ্যমে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন। জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর রাতে জাহেদ ও তারেক আত্মগোপন করে বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে দুবাইয়ের ক্লক টাওয়ার এলাকায় একটি বাণিজ্যিক ভবনে প্রবাসী ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম নামে কোম্পানি খুলেন জাহেদ ও তারেক নামের দুই বন্ধু।
সেই অফিসের আওতায় গ্রিন বিট কয়েন কমার্শিয়াল ব্রোকার্স ও পিটপ বিট কয়েন কমার্শিয়াল ব্রোকার্স নামে দুটি লাইসেন্স খুলেন তারা। পাশাপাশি দুবাইয়ের সালাউদ্দিন মেট্রো স্টেশন, আবুধাবি ও আজমানে আরোতিনটি ব্রাঞ্চ অফিস খুলেন তারা।এরপর মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ওয়েবসাইট, অ্যাপস, ব্রুশিয়ার, টিকটক, ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে বিট কয়েন ব্যবসার মার্কেটিং করতে থাকেন।
ফলে ২০২২ সালে এই কোম্পানির গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১০ হাজারের উপর। গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা যে টাকা বিট কয়েন বিনিয়োগ করেছেন তার ৮০ ভাগ অংশ নিয়ে এসেছেন দেশ থেকে। কেউ জমি বিক্রি করে, কেউ গহনাগাটি বিক্রি করে, কেউ বন্ধু-বান্ধব থেকে ধার নিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা নিয়ে এসে বিট কয়েনের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন।
অনেকে ব্যাংকে সঞ্চিত টাকা তুলে হুন্ডির মাধ্যমে নিয়ে এসে এই বিট কয়েন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। অতি মুনাফা লাভের আশায় অসংখ্য প্রবাসী তাদের সর্বস্ব বিক্রি করে এই ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। এদেরমধ্যে সাধারণ প্রবাসী থেকে ট্যাক্সিও ড্রাইভার পর্যন্ত রয়েছে। এদিকে গ্রাহকরা তাদেও বিনিয়োগকৃত অর্থ হারিয়ে হাহাকার করছে।
অসংখ্য গ্রাহক বাংলাদেশ কনস্যুলেটে গিয়েও প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আইনগত সহায়তা চাচ্ছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন। প্রতারক জাহেদ ও তারেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ও প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে চিঠি পাঠিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
মন্তব্য করুন