দুবাইয়ে বাড়ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ
তোফায়েল পাপ্পু (দুবাই) থেকে॥ আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। গেল কয়েক বছরে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে অর্থনৈতিক আর সামাজিকপূর্ণ গঠন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে দেশটি। যে কারনে বাড়ছে বিদেশী বিনিয়োগ আর দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা।
২০২২ সালে প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে ১৮ শতাংশ বেড়েছে লাখপতিদের আনাগোনা। দেশটিতে বেড়েছে দশ লাখ ডলার সম্পদের অধিকারী কোটিপতির।
বর্তমানে এই সংখ্যা ৬০ হাজারের বেশি হলেও ২০২৬ সাল নাগাদ ৩৯ শতাংশ বেড়ে এই সংখ্যা পৌঁছাবে ২ লাখ ২৮ হাজার। সংযুক্ত আরব আমিরাত কোভিড চ্যালেঞ্জ থেকে মোবাবেলা করেছে।
এই দেশটাকে মোটামোটি নিরাপদে রাখতে সক্ষম হয়েছিলো তা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ধর্নাঢ্য ব্যক্তিদের আকর্ষণ করে এবং তারা অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ২০২০ সালের শেষ দিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকা শুরু করে।
যদিও এখানে অস্থায়ীভাবে থাকা তারপরেও এই দেশের সুযোগ সুবিধা আইন শৃঙ্খলা আর অগ্রগতি দেখে এই দেশে বিনিয়োগ করার উদ্যোগী হয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। বর্তমানে বিনিয়োগের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত।
যেখানে বাংলাদেশিদের শ্রমিক হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হতো। সেখানে এখন ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
করোনা মহামারি কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন শহরে প্রতিদিনই বাড়ছে বাংলাদেশি মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে একদিকে যেমন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়ছে তেমনি এসব প্রতিষ্ঠানে সৃষ্টি হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান।
সেই সঙ্গে বাড়ছে রেমিট্যান্স। সম্প্রতি দেশটিতে ২৬ জন বাংলাদেশিকে সিআইপি পর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আমিরাতে বিনিয়োগের বিষয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলেছেন, এই দেশের সুযোগ সুবিধা আইন-শৃঙ্খলা উন্নত থাকায় দুবাইতে ব্যবসায়েরে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়ে চলছে।
বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চট্ট্রগ্রাম ও সিলেটের লোকজন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এগিয়ে আসছেন। পাশাপাশি ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন দুবাইতে ব্যবসায়ে বিনিয়োগের চেষ্ঠা করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে সোনাপুর এলাকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বাংলাদেশি পণ্যের সমাহার।
যেসব এলাকায় আগে প্রবাসীরা শ্রমিক হিসেবে বসবাস করতেন, সেইসব এলাকায় এখন বহু বাংলাদেশিরা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিনিয়োগকারী হিসেবে।
দুবাইয়ের সোনাপুর নামে এলাকায় রয়েছেন প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক, যাদের মধ্যে বাংলাদেশি প্রায় দুই লাখ। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন শ্রমিক থেকে বিনিয়োগকারী হয়ে ওঠা অনেক বাংলাদেশি। ফলে ওই এলাকায় বাংলাদেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ব্যাপক হারে।
শুধু বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে তা নয়, এসব প্রতিষ্ঠানে দেশীয় পণ্যের সমাহার ও চাহিদাও বেড়েছে।
এসব পণ্যের জন্য দেশি-বিদেশি গ্রাহকদের ভিড়ও লক্ষ করা যায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে। পাশাপাশি বহু বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, দুবাইয়ে ব্যবসা-বানিজ্য করা একদম নিরাপদ। সব ধরনের সিকিউরিটি থাকায় শান্তিতে ব্যবসা করা যায়।
নিজের চিন্তা ভাবনা বা মেধাকে কাজে লাগিয়ে এখানে নির্ভয়ে ও নি:সন্দেহে ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করা যায়। দিনদিন বাংলাদেশি ভাইয়েরা এখানেই নভেষ্ট করছেন। এতে আমাদের সকলের জন্য ভালো। আমাদের দেশের লোক আমাদের প্রতিষ্ঠানেই চাকুরির সুযোগ পাচ্ছেন।
আরেক বাংলাদেশী ব্যবসায়ী রিংকু লাল চন্দ জানান, বিনিয়োগের জন্য দুবাই সবদিকে পারফেক্ট। যে কেউ এখানে নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ করতে পারলে আশা করি লাভবান হবেন।
দুবাইয়ের মোহাইছেনা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতীয়দের আধিপত্যের মাঝে বর্তমানে সেখানে বাংলাদেশিরা জায়গা করে নিয়েছেন।
শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সুযোগ-সুবিধা পেলে এই এলাকা বাংলাদেশিদের বিজনেসহাবে পরিণত হতে পারে।
উল্লেখ, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন প্রবাসীরা।
দীর্ঘদিনের লোকসান কাটিয়ে লাভের আশায় খুলছেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ ধারা অব্যাহত থাকলে শিগগিই ভারত ও পাকিস্তানকে টপকে বাংলাদেশ শীর্ষে উঠে আসবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
মন্তব্য করুন