দুশ্চিন্তায় হাওর পাড়ের বাসিন্দারা ‘আফাল ও বলনের’ ক্ষতি দৃশ্যমান
ইমাদ উদ দীন॥ কিছুটা হলেও স্বস্তিতে হাওর তীরের বাসিন্দারা। কারন বড় ধরনের ক্ষতি এখন দৃশ্যমান হলেও। বিদায় নিচ্ছে বিধ্বংসী ‘আফাল’ আর ‘বলন’। এ অল্প ক’দিন হল, এমন ভয়ংকর দৃশ্য পরিবর্তনের। আফাল (বড় ঢেউ) আর বলনের (ঘূর্ণয়মান ঢেউ) তান্ডব এখন আর চোখে পড়ছে না হাওর এলাকায়। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে বানের পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা এখন ততই কমছে। আর ধীরে ধীরে জেগে উঠছে ডুবন্ত ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও কৃষিজমি। আর এতে দৃশ্যমান হচ্ছে আফাল ও বলনের আঘাতে লন্ড ভন্ড হয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত বসতবাড়ি আর রাস্তা ঘাট।
এখন দৃশ্যমান এমন ক্ষতচিহ্নে দিশেহারা হাওর তীরের সর্বহারা কৃষিজীবী লোকজন। কি ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি আর রাস্তা-ঘাট মেরামত করবেন এখন এমন দুশ্চিন্তা তাদের। এবছর মার্চ থেকে শুরু হওয়া কয়েক দফা বন্যায় হাওর ও হাওরের তীরবর্তী এলাকাও ছিল বানের পানিতে টইটুম্বর। হঠাৎ এমন আর্কস্মিক বন্যায় বোরো ধান আর সবজির ক্ষেত দখলে নেয় পানি। রাস্তা-ঘাট,ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির আর হাট বাজারেও ছিল বানের পানির রাজত্ব। বন্যা দীর্ঘ হয়ে রুপ নেয় স্থায়ী জলাবদ্ধতায়। আর এতে প্রলয়ের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে হাওর তীরের বসত ভিটা আর রাস্তা ঘাটে আঘাত হানে আফাল ও বলন। বন্যা,জলাবদ্ধতা আর আফাল ও বলনে নি:স্ব হাওর তীরের মানুষ। এবছর ফসল আর বসত ভিটা সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে একের পর এক এমন সব প্রাকৃতিক দূর্যোগ।
সরজমিনে দেখা গেল হাকালুকি হাওর তীরবর্তী এলাকায় বসত বাড়িতে এখন স্পষ্ট হয়েছে আফাল আর বলনের আঘাতের ক্ষতচিহ্ন। দৃশ্যমান এমন ক্ষতি পোষিয়ে উঠতে অনেকেই চেষ্ঠা করছেন। দেখাগেল অনেকেই নৌকাযোগে দূর থেকে মাটি এনে বসত ভিটা ভরাট করছেন। আবার কেউ কেউ বসত ঘরের বাঁশের বেড়া ও চালা মেরামত করছেন। তবে অধিকাংশ লোকজন আর্থিক অনটনের কারনে ভাঙ্গা ঘরে পরিবার পরিজনকে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছেন। তারা রাত পোহালে নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্য এলাকায় গিয়ে দিনমজুরের কাজ করছেন কিংবা মাছ ধরছেন।
এই কায়িক শ্রমে যা পাচ্ছেন তাই দিয়ে কোন রকম টানাপোড়নের সংসার চালাচ্ছেন। ওই আয় থেকে ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, টিবওয়েল আর স্যানেটারী ল্যাটট্রিন মেরামতের সাধ্য কোথায়। হাওর তীরের অসহায় কর্মহীন এই কৃষিজীবী মানুষগুলো এখন আফাল আর বলনের ক্ষতি পোষাতে চরম অসহায়। বোরো ধানের সময় ঘনিয়ে আসছে তারপরও এখনো কমছেনা জলাবদ্ধতা। সবজি আর বোরো চাষের অধিকাংশ জমিতে এখনো বুক কিংবা কোমর পানি। তাই ব্যস্ত এই চাষীরা বলতে গেলে অনেকটা অলস সময় পার করছেন। হাতে টাকা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ঘর মেরামতে এই সময়টাও কাজে লাগাতে পারছেন না তারা।
একদিকে আফাল আর বলনের ক্ষতচিহ্ন অপরদিকে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় এবছরের মত আগামী বছরও বোরো ধান হারানোর দুশ্চিন্তা। সবমিলিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন হাওর পাড়ের লোকজন। রাস্তা ঘাট আর ঘরবাড়ি জেগে উঠায় আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু মাথাগুঁজার ঠাঁই এখনো নিরাপদ নয়। কারন দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় আর আফাল ও বলনে ব্যাপক ক্ষতিতে পড়েছে তাদের বসত ভিটা আর রাস্তা ঘাট। যে গুলোর মেরামতের সাধ্য নেই তাদের। কিন্তু তারপরও উপায়ান্তু না থাকায় বাধ্য হয়ে নিজেদের ঘর বাড়িতে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছেন।
মন্তব্য করুন