(ভিডিওসহ) দূর্গাপূজার শেষ মূহুর্থে প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্থ আয়োজকরা : ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী, ১০০৭টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে
স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজার জেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ দূর্গা উৎসব করোনার পর জাঁক-জমকপূর্ন পালনের সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। দ্রুত গতিতে চলছে প্রতিটি মন্ডপে প্রতিমা সাজানোর কাজ। আর অন্যান্য বছরের ন্যায় শান্তিপূর্ন ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে আশা করছেন আয়োজকরা। পূজা উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্প্রীতি কমিটি ঘটন সহ নেয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজাকে সামনে রেখে মৌলভীবাজার জেলার পূজা ম-পগুলোতে প্রতিমা তৈরীর শেষ মূহুর্তের সাজ-সজ্জার কাজ এগিয়ে চলছে। সর্ববৃহৎ এই পূজা সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুতি চলছে প্রতিটি মন্ডপে। পূজাম-প গুলোতে একরপর এক প্রতিমা তৈরীর পাশাপাশি প্রতিমাকে সাজিয়ে তোলতে প্রতিমা শিল্পীরা মনের মাধুরী মিশিয়ে দিন রাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে গত দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে পূজার আয়োজন হলেও মানুষের মাঝে একটা উদ্বেগ উৎকন্ঠা ছিলো। পাশাপাশি মন্ডপগুলোতে মানুষের চলাচল সীমিত ছিলো। এবছর করোনার প্রাদুভাব না থাকায় সবার মাঝে একটা উৎসাহ উদ্দীপনা কাজ করছে।
চিত্ত রঞ্জন ও জয় দেব নামের প্রতিমা শিল্পী জানান, মূর্তি তৈরীর জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে হতাশা। বিগত বছরগুলোতে মাঠি, খেড়, বাশ, দুগা প্রতিমাসহ অন্যান্য দেবদেবীর শাড়ী, চুড়ি আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কম থাকলেও এবছর সেটা কয়েকগুন বেড়ে যাওয়ায় তাদের হিমসীম খেতে হচ্ছে। তবে প্রতিমা তৈরীর আনুসাঙ্গিক জিনিস পত্রের দাম স্থিতিশিল না থাকায় অনেক প্রতিমা শিল্পী শুধু মজুরী ভিত্তিতে কাজ করছেন।
মৌলভীবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মহিম দে জানান, গত ২ বছর করোনার কারণে জাঁক-জমকপূর্ন ভাবে পূজা উদযাপন করতে পারেননি। তবে এবার জেলায় সার্বজনীন পূজা মন্ডপের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শান্তিপূর্ন ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে তারা আশাবাদী। প্রতিটি মন্ডপের ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। অপরদিকে শহর ছাড়াও শহরের বাইরে চা বাগান অধ্যুষিত এলাকা এবং গ্রামগঞ্জের মন্ডপগুলোতে তারা নিজেদের উদ্দোগে বিদ্যুতের ব্যবস্থাসহ পূজার ৫ দিন মন্ডপ পাহাড়ার জন্য কমিটি করা হয়েছে।
জেলার ৬টি স্থানে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবছরও ব্যাতিক্রমি আয়োজনে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। স্থান গুলো হচ্ছে রাজনগরের পাঁচগাঁও, কুলাউড়ার কাদিপুরে শিব মন্দির, সদর উপজেলার ত্রিনয়নী, আবহান, মহেশ^রী ও শ্রীমঙ্গরের রুপসপুর মন্ডপ।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, এবার ১০০৭টি মন্ডপ থাকায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সবকটি উপজেলায় নেয়া হয়েছে সকল ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পাঁচ দিনের বৃহৎ এই পূজাকে ঘিরে বড় বড় মন্ডপগুলোতে দিন রাত মিলিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে। ফলে অধিক ঝুকিপূর্ণ ৮২টি পুজামন্ডপসহ আইনশৃঙ্খলার সার্বিক নিরাপত্তায় ৭৪৭ জন পুলিশ সদস্য এবং ৬ হাজার ৮২০ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। তাছাড়া সাদা পোষাকে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম।
দূর্গাপূজা সুষ্টু ও শান্তিপুর্নভাবে পালনের লক্ষ্যে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ সভা করেছেন। প্রত্যেকটি পূজা মন্ডপের আশপাশের সকল ধর্মের লোকজনদের নিয়ে সম্প্রীতি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রশাসন আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ সহ অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে।
আয়োজকরা জানালেন ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রেখে জেলায় সার্বজনীন ও ব্যক্তিগত মিলে মোট ১০০৭টি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০৮টি, রাজনগর উপজেলায় ১২৮টি, কুলাউড়া উপজেলায় ২২০টি, জুড়ী উপজেলায় ৭২টি, বড়লেখা উপজেলায় ১৫১টি, কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৬০টি ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় মোট ১৬৭টি পূজাম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এ বছার জেলায় সরকারি ভাবে প্রত্যেকটি সার্বজনীন পূজা মন্ডপে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন