দূর্নীতির সরল মন ও আমাদের কথা

July 28, 2019,

আশরাফ আলী॥ বাংলাদেশ! বিশ্বের মানচিত্রে হিরক খন্ড একটুকরো জমিনের নাম। আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ। হাজারও সাফল্য গাঁথা এদেশে কি নেই- মাঠ ভরা ধান, জল ভরা দিঘি, পাহাড় টিলা গাছ গাছালি, আছে ১৬ কোটি মানুষের কোমল হৃদয় আর ৩২ কোটি কর্মঠ হাত। যে হাত খাটিয়ে মনের মাধুরি দিয়ে দেশকে সোনার বাংলাদেশ করতে কি আর বেশি দিনের প্রয়োজন? পাঠক, আমরা মনে করি-না। শুধু সুন্দর মনের সাথে সূদৃঢ় চারিত্রিক গুনাবলি থাকলে দেশকে গড়তে বেশি দিন লাগার কথা না। কিন্তু দূভাগ্য! স্বাধীনতার হাফসেঞ্চুরির কাছে আসলেও আমাদের সেই আকাংখা পূরণ হয়নি। কারণ চারিত্রিক গুনাবলির যে উল্লেখযোগ্য নিয়ামত তার একটিও অবশিষ্ট আছে বলে মনে করি না। কারণ দূর্নীতি মতো একটা অভিশাপ আমাদের অক্টুপাসের মতো ধরে আছে। যার কারণে আমরা পথ হারিয়েছি অনেক আগেই। সচেতন পাঠক মহল অবশ্যই অবগত আছেন যে,  গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ  অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন দূর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নের জবাবে তার একটি বক্তব্য দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়-যে সরকারি কর্মকর্তারা সরল বিশ্বাসে দুর্নীতিতে জড়ালে তা অপরাধ হবে না। আসলে সরল বিশ্বাসটা কি খুব জানতে ইচ্ছে করছে। সরল বিশ্বাসের সংজ্ঞাটা যদি বুঝিয়ে বলতেন তিনি? সকল সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশে সরল মনে কত কিছু হয় তা বলাই বাহুল্য। এদেশে সরল মনে বালিশ  দূর্নীতির ঘটনা ঘটে। কয়লা গায়েব হয়, সোনা তামা হয় আর শেয়ার বাজার কেলেংকারীর কথা নাই বা বললাম। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ব পর্যন্ত পাচার হয়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা তার কথাকে প্রত্যাখান করি। আমরা মনে করি তার বক্তব্যে সরকারি কর্মকর্তাদের দূর্নীতি করতে উৎসাহ পাবেন। আমরা আরোও মনে করি কাগজে কলমে তিনি দূর্নীতিকে বৈধ বলে জাতির সামনে তুলে ধরলেন।

দূর্নীতি কাকে বলে: ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কর্তৃক অবৈধ পন্থায় নীতি-বহির্ভূত বা জনস্বার্থ বিরোধী কাজই দূর্নীতি। রাজনৈতিক এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনে দূর্নীতি বলতে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা লাভের জন্য কার্যালয়ের দায়িত্বের অপব্যবহারকে বুঝায়। সাধারণত ঘুষ, স্বজনপ্রীতি, বলপ্রয়োগ বা ভয় প্রদর্শন, প্রভাব খাটানো এবং ব্যক্তি বিশেষকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে প্রশাসনের অপব্যবহার করে ব্যক্তি স্বার্থ অর্জনকে দূর্নীতি বলে। সরকারি কর্মকর্তারা যদি সরল মনে ফাইলের কাজের বিনিময়ে ঘুষ, বকশিশ, কমিশন, চা-নাস্তা বাবদ খরচ ও দ্রব্য সামগ্রী আদায় করে থাকেন তাহলে এটা কি দূর্নীতির মধ্যে পড়বে? দেশে একদিকে কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা এবং অন্যদিকে বেকারত্ব। এ অবস্থায় যুব সমাজ যেকোন চাকরির প্রত্যাশায় বিপুল পরিমাণ ঘুষ দিতে বাধ্য হয়। এটা যদি সরল মনে হয়ে থাকে তাহলে এটাকে কি দূর্নীতি বলা যাবে না? আজ আমাদের মাঝে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার মাধ্যমে সর্বোপরি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে, ৩০লক্ষ বীর শহীদের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে এমন চারিত্রিক দৃঢ়তা সম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন। যারা প্রতিটি শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন চিন্তার দারিদ্র্যকে জয় করতে পারবে। বিশ্বের অতীতের ক্রান্তিকাল ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখব, মানুষ যখনই চিন্তার দারিদ্রে আক্রান্ত হয়েছে, তখনি সৃষ্টি হয়েছে অচলায়তন। অবরুদ্ধ হয়েছে মানব সভ্যতা। তৈরী হয়েছে অস্থিতিশীল পরিবেশ। আমরাও এই অবস্থার বাহিরে নই। এদেশের বাতাস আজ বিভিন্ন অস্থিতিশীল কাজে ভারী হয়ে গেছে। হালকা-পরিচ্ছন্ন-সুস্থ বাতাসের আজ বড়ই আকাল। দুঃসময়ের ভারী বাতাসে নুয়ে পড়া সমাজকে গড়ার মানুষের আজ বড়ই সংঙ্কট। বাংলার এই বৈরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং সু-বাতাসের আভা নিয়ে মানবিক মূলোবোধ জাগ্রত করা একান্ত প্রয়োজন। তাহলে এই মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রতরা বলবে না সরল মনে দূর্নীতি করলে অপরাধ হবে না। তারা সরল মনে দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাবে। আর তাদের সাথে থাকবে দেশপ্রেম এবং দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা।

লেখক: আশরাফ আলী,

তরুণ লেখক সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com