দেশের চা শিল্পের উৎপাদনে ১৭০ বছরের ইতিহাসে নতুন রেকড
স্টাফ রিপোর্টার॥ দেশে এক বছরে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি বেশি চা উৎপাদন করে ১৭০ বছরের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ।
কয়েক বছর ধরে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এবারই প্রথম লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এমন সফলতা এসেছে। ২০২৩ সালে দেশের বাগানগুলো থেকে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ লাখ কেজি বেশি চা উৎপাদন হয়েছে।
চা বোর্ড সূত্রে জানাযায়, গত সোমবার রাত পর্যন্ত পাওয়া হিসাবে সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট প্রায় ১০ কোটি ২৯ লাখ ৯৯ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। প্রতি মাসে চা উৎপাদনের তথ্য দেশের মোট ১৬৮টি বাগান থেকে সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে সোমবার পর্যন্ত ১৩০টি চা বাগানের তথ্য পাওয়া যায়। বাকি ৩৮টি চা বাগানের তথ্য এলে চা উৎপাদনের পরিমাণ আরও বাড়বে। ২০২৩ সালে দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি। ইতিমধ্যে তা অর্জিত হয়েছে। এখনো ৩৮টি চা বাগানের হিসাব পেতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এতে নিঃসন্দেহে ধরে নেয়া যায়, নতুন রেকর্ড সৃষ্টি বাংলাদেশের চা শিল্পের ১৭০ বছরের ইতিহাসে একটি বিশাল অর্জন। এরআগে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে সবগুলো বাগান থেকে মোট ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৩৮ হাজার কেজি চা উৎপাদনের তথ্য এসেছিল।
সে হিসাবে ২০২৩-এর ডিসেম্বর মাসে ১৩০টি বাগানে আরও ৬৬ লাখ ৫২ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। ২০২১ সালে ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৬ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল, এতদিন সেটাই ছিল চা শিল্পের রেকর্ড। এরপর ২০২২ সালে ১০ কোটি কেজির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বছর শেষে উৎপাদন পাওয়া যায় ৯ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার কেজি। সবশেষ ২০২৩ সালে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি।
দেশে ১৬৮টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চা বাগান মৌলভীবাজার জেলায়। ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় প্রথম চায়ের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। সে হিসাবে প্রায় ১৭০ বছর ধরে দেশে চা উৎপাদন হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এবারই প্রথম লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফলতা এসেছে।
আতিয়াবাগ চা বাগানের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম জমাদ্দার জানান, ‘প্রতি বছরই আমরা চা চাষের আওতা বাড়াচ্ছি। পতিত জমিতে নতুন চারা রোপণ করা হচ্ছে। এর ফলও মিলছে। প্রতিবছরই উৎপাদন বাড়ছে।’
বাংলাদেশীয় চা সংসদ সিলেট ভ্যালি সভাপতি ও শ্রীমঙ্গল জেমস ফিনলের ভাড়াউড়া চা ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ, আগে অনেকে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে চা বাগান কিনতেন। কিন্তু তারা উৎপাদনে মনোযোগী ছিলেন না। সেদিন আর নেই। বিশেষত বড় করপোরেট হাউসগুলো চা বাগানে বিনিয়োগ করার পর থেকেই উৎপাদন বাড়ছে। পুরনো গাছ সরিয়ে নতুন চারা রোপণ এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বেশি পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া এবার পরিমাণমতো বৃষ্টিপাত হওয়ায়ও উৎপাদন বেড়েছে বলে জানান তিনি।
মৌলভীবাজারের শ্রী গবিন্দপুর চা বাগানের মালিক মো: মহসীন মিয়া মধু বলেন, দেশে চায়ের উৎপাদন খরচও অনেকে বেড়েছে। কিন্তু নিলামে অনেক সময় ভালো দাম পাওয়া যায় না। যারা প্যাকেটজাত করেন তারা বাজারে অনেক দামে চা বিক্রি করেন। কিন্তু বাগান মালিকরা তেমন দাম পান না। এই অবস্থা চলতে থাকলে তারা নিরুৎসাহিত হবেন। তাই চায়ের দামের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হিবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ও চা বিজ্ঞানী ড. রফিকুল হক জানান, চায়ের উৎপাদন বাড়াতে সমতলে চা চাষে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিনামূল্যে চারা ও মেশিনারিজ বিতরণ করা হয়েছে। ফলে উত্তরাঞ্চল এবং সমতলেও চা চাষের পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া বাগানগুলোর আয়তন আড়াই শতাংশ হারে বৃদ্ধি করার চেষ্টা চলছে। এসব উদ্যোগের ইতিবাচক ফল মিলছে। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান, ‘বাগান মালিক, শ্রমিকদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই সাফল্য এসেছে। বাগানগুলোতে পুরনো গাছ সরিয়ে নতুন গাছ লাগানোর দিকে নজর দেয়া হয়েছে। চা চাষে প্রণোদনা, সঠিক পরিকল্পনা, পুরনো গাছ সরিয়ে নতুন চারা রোপণ এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর চা শিল্পে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
মন্তব্য করুন