দৈনিক মজুরী ৩’শ টাকা বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন দাবিতে রাজনগরে চা শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট
শংকর দুলাল দেব॥ রাজনগরে চা’বাগান শ্রমিকদের মজুরী ৩’শ টাকা বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন দাবিতে টানা ৪দিন কর্মবিরতী পালন শেষে মালিকপক্ষ দাবি না মানায় ১৩ আগস্ট শনিবার হতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছেন চা শ্রমিকরা। রাজনগরের ১২টি বাগানের হাজার হাজার শ্রমিক কাজ বন্ধ করে বাগান ছেড়ে এখন রাজপথে আন্দোলন করছে। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে ৭টি ভ্যালি এবং এর অন্তর্গত ২৩২টি বাগান পঞ্চায়েত অনির্দিষ্টকালের এ কর্মসুচি পালন করছে।
বাংলাদেশ চা’শ্রমিক ইউনিয়ন ও রাজনগরের বিভিন্ন বাগান পঞ্চায়েত সূত্রে জানাযায়, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে অধিকার বঞ্চিত শ্রমিকদের মজুরী ১২০টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষে চা শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে গত ৯ আগষ্ট মঙ্গলবার থেকে টানা ৪দিন ২ঘন্টা করে কর্মবিরতি পালন করে। কিন্তু মালিক পক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ ১৪টাকা বাড়িয়ে ১৩৪টাকা করলে শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষনা দেয়। এদিকে গত ১১ আগস্ট বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে আগামী ২৮ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের অনুরোধ করলে চা শ্রমিক নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। আন্দেলনরত শ্রমিকরা জানান, বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ চা-সংসদের মধ্যে সর্বশেষ চুক্তি সম্পাদন হয় বিগত ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর। এ চুক্তি অনুযায়ী ওই সময় শ্রমিকদের দৈনিক মজুরী নির্ধারণ করা হয় ১২০টাকা। চুক্তিতে প্রতি দুবছর পরপর মজুরী বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও অতিরিক্ত ১৯ মাস পেরিয়ে গেলে মালিক পক্ষ মজুরী বৃদ্ধি করেনি। বাজারের উর্ধ্বগতি ও স্বল্প মজুরীর কারণে চা শ্রমিকরা না খেয়ে মরার উপক্রম। শ্রমিকদের মানবেতর জীবন যাপন ও মজুরী বৃদ্ধিতে মালিক পক্ষের গাফিলতি ও অযৌক্তি সময় ক্ষেপনের কারণে আজ শ্রমিকরা বাগান ছেড়ে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের এ আন্দোলন চলবে। এ সময় ‘রুটি রুজির আন্দোলন চলবেই চলবে, মালিকদের টালবাহানা চা শ্রমিক মানবে না মানবে না’ ইত্যাদি সেøাগান সহকারে রাজপথে মিছিল-সমাবেশ করে চা শ্রমিকরা। এদিকে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর দৈনিক মজুরি ৩’শ টাকা, যথা সময়ে গৃহ নির্মাণ, ছুটির দিনে মজুরী প্রদান, পর্যাপ্ত শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা প্রদান সহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন কওে আসছিল। দাবি গুলো নিয়ে চা-বাগান মালিকদের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা একাধিক বৈঠক করলেও মালিক পক্ষ ১৩৪ টাকার বেশী বৃদ্ধি করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিলে চা-শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোসের সৃষ্টি হয়।
রাজনগরের চাঁনভাগ চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি মানিক লাল বাউড়ী ও ম্যাথিউড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি সুগ্রীম গৌড় জানান শ্রমিকদের দৈনকি মজুরী ৩০০টাকা বৃদ্ধি সহ গৃহ নির্মাণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদানের সুস্পষ্ট ঘোষনা না দেয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের লাগাতার আন্দোলন চলবে।
বাংলাদেশ চা’শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল ও কোষাধ্যক্ষ পরেশ কালিন্দী জানান, আমরা মালিক পক্ষকে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে চা’শ্রমিকদের দৈনিক মজুরী ৩’শ টাকা বৃদ্ধি অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু তারা মাত্র ১৪ টাকা বৃদ্ধি অর্থাৎ মোট ১৩৪ টাকা দৈনিক মজুরীর ঘোষনা দিলে চা শ্রমিক ইউনিয়ন তা প্রত্যাখ্যান করে ৯ আগস্ট থেকে টানা ৪দিন আংশিক এবং ১৩ আগস্ট থেকে লাগাতার কর্মসূচির ঘোষনা দেয়। এ কর্মসূচি দাবি না মানা পর্যন্ত চলবে। এর ফলে চা শিল্পের সমূহ ক্ষয় ক্ষতির দায়ও মালিক পক্ষকেই নিতে হবে।
মন্তব্য করুন