দ্বিতীয় বিয়ে করায় মোড়লদের অত্যাচারে এলাকা ছাড়া হিন্দু দম্পতি

October 2, 2016,

কুলাউড়া অফিস॥ প্রায় ৬ বছর সাড়ে ৩ মাস আগে বিয়ে হয়েছে রাজনগর উপজেলার সিতেন্দ্র রাম বিশ্বাস এর সাথে জুড়ী উপজেলার জ্যেতি রাণী বিশ্বাস এর। ইতোমধ্যে তাদের ৫ বছরের ছেলে শাওন বিশ্বাস ও ৩ মাসের মেয়ে স্বর্ণা বিশ্বাসের জন্ম হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ে করে ছেলে সন্তানদেরকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী সবার মতো ধর্মীয় অনুশাসন মেনে জীবন কাটাতে চাইলেও গ্রাম্য মোড়লদের মনগড়া ধর্মীয় আইনের কারণে স্বাভাবিক ভাবে জীবন কাটাতে পারছেনা ওই হতদরিদ্র পরিবার। মোড়লদের অত্যাচারে ২ মাস ধরে তারা এখন এলাকা ছাড়া।
জানা যায়, জুড়ী উপজেলার শাহাপুর গ্রামের ছুনন্ত বিশ্বাসের মেয়ে জ্যেতি রাণী বিশ্বাসের বড়লেখা উপজেলার দাসরবাজার গ্রামের বিধু বিশ্বাসের সাথে ২০০৭ সালে বিয়ে হয়। বিধু বিশ্বাস মানষিক রোগী থাকায় উভয় পরিবারের সম্মতিক্রমে বিয়ের ৩দিনের মাথায় আইনি প্রক্রিয়া তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর প্রায় ৩ বছর নিজের বাপের বাড়িতে ছিলেন জ্যেতি রাণী বিশ্বাস। পরে ২০১০ সালে রাজনগর উপজেলার সুরিখাল গ্রামের মৃত জগেশ রাম বিশ্বাস এর ছেলে সিতেন্দ্র রাম বিশ্বাস এর সাথে মৌলভীবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে এফিডেভিট এর মাধ্যমে তাদের দ্বিতীয় বিবাহ সম্পন্ন হয়।
সিতেন্দ্র রাম বিশ্বাস দ্বিতীয় বিয়ের মেয়েকে বিবাহ করায় ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী পন্ডিত মন্ডলীর মাধ্যমে পরাচিৎ করেন। এটা এলাকার মোড়লনা না মানায় ১৫ মে ২০১৫ সালে ধর্মীয় পন্ডিত মন্ডল জ্যেতি রাণী বিশ্বাসের এলাকায় মুরব্বিদের উপস্থিতিতে আবার পরাচিৎ করেন। পরে প্রায় ৪ বছর সিতেন্দ্র শাশুড় বাড়িতে ছিলেন। ২ বছর ধরে নিজ বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। ২১ জুন তাদের দ্বিতীয় মেয়ের জন্মের পর থেকে আবার পুরাচিৎ করার জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন এলাকার মোড়লরা। সিতেন্দ্র রাম বিশ্বাস পুরাচিৎ করতে রাজি না হ্ওয়ায় গ্রাম্য মোড়লরা থাকি বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করে এলাকা ছাড়া করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। বর্তমানে দরিদ্র সিতেন্দ্র অসহায় অবস্থায় সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে নিজের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার মজনুর রহমান বলেন, এ বিষয় সমাধানের জন্য ২ মাস ধরে বিভিন্ন সময় বৈঠকে বসেছিলাম। শেষ বৈঠকে ৯টা গ্রামের হিন্দু সমাজ সেবকদের মধ্যে ১৫ জন নিয়ে কমিটি গঠন করে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সিতেন্দ্র রাম বিশ্বাস পূঁজা দিয়ে লুট খাবানোর। কিন্তু তিনি এটা না করায় থাকে পঞ্চায়েতের বাদ করা হয়েছে।
স্থানীয় হিন্দু সমাজ প্রতিনিধি ধরনি বিশ্বাস বলেন, রাজনগর পূঁজা উৎসব কমিটি সিতেন্দ্রকে বলেছিল আবার একটি লুট দিয়ে সমাজে উঠার জন্য। কিন্তু তিনি এটা মানেননি। উত্তরভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান ছালিক বলেন, গ্রাম ছাড়ার বিষয়টি আমি জানি না। দুই দিন আগে আমি বিষয়টি জেনেছি তাই স্থানীয় মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আগামী রোববার বসব।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com