ধীর গতিতে বন্যার উন্নতি : বাড়ছে দুর্ভোগ : আশ্রিতরা বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে নারাজ : অসুখে ভোগছে নারী ও শিশুরা : মেডিকেল টিম কাগজে কলমে
আব্দুর রব॥ হাকালুকি হাওরপাড়ের বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের ভোলারকান্দি গ্রামের ২ বছরের শিশু কন্যা হুমায়রা। বন্যায় বসতঘর তলিয়ে যাওয়ায় বাবা-মা আর ভাইবোনের সাথে ঈদের আগে ছিদ্দেক আলী উচ্চ বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। অব্যাহত ভারী বর্ষণে বন্যার অবনতি ঘটতে থাকায় বাড়ি ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সরকারী-বেসরকারী সাহায্য সহযোগিতায় এতদিন দিনে ১-২ বেলা তরকারী ভাত খেতে পারলেও বুধবার ৫ জুলাই থেকে তেমন কেউ আর ত্রাণ নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসেননি। ফলে বাধ্য হয়ে শিশু হুমায়রার পরিবারকে শুক্রবার থেকে লবন ভাত খেয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। কিন্তু এখন যেন হুমায়রার গলা দিয়ে আর লবন ভাত ঢুকতে চাচ্ছে না। বড়ভাই তাজির উদ্দিন (১৮) শনিবার সকাল থেকে চেষ্টা করেও ভাত গিলাতে পারছে না। এ চিত্র শুধু হুমায়রার পরিবারের নয়, এখানে আশ্রয় নেয়া হতদরিদ্র ৮৪ পরিবারের।
জানা গেছে, বন্যার অবনতি ঘটায় বড়লেখার তালিমপুর, বর্নি, সুজানগর, উত্তর শাহবাজপুর, দাসেরবাজারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়া দুর্গত ২৫৩ পরিবার আশ্রয় নেয়। পানি বাহিত নানা রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়া রোধে গঠন করা হয় ১০টি মেডিকেল টিম। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে মেডিকেল টিমের এসব চিকিৎসকরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় অনেকেই নানা অসুখে ভোগছে। বন্যার কিছুটা উন্নতি হলে তাদেরকে বাড়ি ঘরে ফিরতে চাপ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আশ্রিতরা বলছেন এখনও তাদের বসত ঘর থেকে পানি নামেনি। তাই এখন তারা যাবে কোথায়।
শনিবার সরেজমিনে গেল হুমায়রার বাবা মাসুক মিয়া ও মা ফরমিনা বেগম জানান, প্রথম প্রথম সাহায্য পেলেও এখন আর ত্রাণ মিলছে না। নিজেরা না খেলেও কষ্ট নেই। কিন্তু ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা না খেয়ে থাকলে কষ্টের সীমা থাকে না। একেতো অর্ধাহারে অনাহারে লবন ভাত খেয়ে দিনাতিপাত করছি। প্রশাসনের লোকজন আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে দেয়ার চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের বাড়ি ঘরে এখনও হাঠু ও কোমর পানি। এ অবস্থায় আমরা যাব কোথায়।
আশ্রয় নেয়া মিনা বেগম (৬০) জানান, তিন দিন ধরে কেই কিছু দেয়নি। প্রচন্ড জ্বরে ভোগছেন। এ আশ্রয় কেন্দ্রের জাসমা বেগম (২০), সায়মন (২) রাহিম আহমদ (৯), আয়ফুন বিবি (৭০) জাহাঙ্গির আলম (৭) অনেককে জ্বর-কাশিসহ বিভিন্ন অসুখে ভোগতে দেখা গেছে। আশ্রিতরা জানান, ৪ দিন আগে একজন ডাক্তার এসে যান। এরপর আর কেউ আসেনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গত ৫ জুলাই মাধ্যমিক ও প্রাইমারী স্কুলের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বন্যার কারণে তা ১১ জুলাইয়ে পরিবর্তন করা হয়েছে। বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন স্কুলে খোলা হয়েছে। বন্যার অনেক উন্নতি হয়েছে। আশ্রিতরা না ফিরলে পরীক্ষা নেয়া অনিশ্চিত হয়েপড়বে। আমাদেরকে শিক্ষার্থীদের বিষয়টিও ভাবতে হবে।
মন্তব্য করুন