নতুন সিলেটের স্বপ্নদ্রষ্টা একজন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ঃ এখন তাঁর এগিয়ে যাবার পথ চলা
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ উপমহাদেশের খ্যাতিমান সাধক পীরানেপীর ইয়েমেনীবীর হযরত শাহ জালাল ইয়েমেনী (রঃ) র পূন্য স্মৃতি বিজড়িত পূন্য ভূমি সিলেট একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ও সম্বৃদ্ধ জনপদ। প্রাচীন কালে সমগ্র বৃহত্তর সিলেট ১. লাউড়, ২. গৌড় ৩. জয়ন্তিয়া, ৪. তরফ ও ৫ ইটা-যে প্রধান পাঁচটি সামন্ত রাজ্যে বিভক্ত ছিল তন্মধ্যে গৌড়-ছিল প্রধান, প্রাচীন ও বৃহত্তম। গৌড় এর সর্বশেষ স্বাধীন সামন্ত শাসক ছিলেন গোবিন্দ। গৌড় এর রাজা হিসাবে তিনি ইতিহাসে গৌড় গোবিন্দ নামে খ্যাত। ত্রয়োদল শতাব্দিতে ইয়েমেনী বীর পিরানে পীল শাহ জালাল (র) তিন শত ষাট জন আওলিয়া সমেত আওলিয়া বাহিনী নিয়ে প্রধান সেনাপতি সিপাহশালার সৈয়দ নাসিরুদ্দীনির নেতৃত্বে গৌড় এর অত্যাচারি শাসক গোবিন্দ কে পরাজিত করে ইসলামের বিজয় নিশান উড়ান। রাজা গোবিন্দের গৌড় হয় ছিল ইট, সিলহেট থেকে সিলেট-পূন্যভূমি শ্রীহট্ট। সিলেট এর মাটির একটি স্বতন্ত্র স্বকীয়তা এবং ব্যতিক্রমি বৈশিষ্ট আছে। প্রচলিত ইতিহাস অনুযায়ী-কথা ছিল হযরত শাহ জালালের সঙ্গে আনা মাটির সঙ্গে যে মাটির মিল পাওয়া যাবে সেখানেই হুজরা স্থাপন করবেন হযরত শাহজালাল ও তার সফর সঙ্গীগণ। মাঠ-ঘাট প্রান্তর পেরিয়ে তারা রাজা গোবিন্দের গৌড় আসেন। ১৩০৩ সালে গৌড় বিজয় শেষে শাহজালালের সফর সঙ্গী হযরত চাষনীপীর এই মাটির সঙ্গে সেই মাটির মিল খুজে পাওয়াতে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় এখানেই হুজরা স্থাপন করেন পীর শাহ জালাল ইয়েমনী।
গৌড় কালক্রমে ছিলহট থেকে শ্রীহট্ট হয়ে শাহ জালালের সিলেট নামে খ্যাত হয়। সিলেট টাউন কামিটি থেকে পৌরসভা হয়ে ২০০২ সালে বিএনপি-র নেতৃত্বাধীন বিগত চার দলীয় জোট সরকারামলে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর হয়।
সিলেট পৌরসভার সর্বশেষ চেয়ারম্যান ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য, নির্ভিক মুজিব সৈনিক, সুদর্শন ও সুবক্তা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। দুই হাজার দুই সালে সিলেট পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হলে সিটি মেয়র পদে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ২০০৮ সালের দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র পদে নির্বাচনে কারাগারে থেকেও নির্বাচিত হন তিনি। দুই হাজার তেরো সালের তৃতীয় মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৫ই জুন। সিলেট জেলা বিএনপি’র সাবেক সম্পাদক নির্ভীক জিয়ার সৈনিক কেন্দ্রী বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য, সিলেট সদর আসনের সাবেক সাংসদ সিলেট বিভাগ ও উন্নয়নের রূপকার অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান মরহুমের ¯েœহ ও আস্থা ভাজন নেতা আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসাবে মেয়র পদে পরিবর্তন চাই শ্লোগান নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করতঃ চমকদেখান-বিজয়ের শেষ হাসিটি হেসে। সিলেট পৌরসভা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে দীর্ঘকালের সম্পর্ক ও সখ্য-হোল টাইমার পলিটিশিয়ান সার্বক্ষনিক সমাজ সেবক জননন্দিত নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের। স্বাধীনতা উত্তর কালে মহান স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ভোদ্ধ তরুন মুজিব সৈনিক বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সিলেট পৌরসভার নির্বাচনে কনিষ্ট কমিশনার হিসাবে অংশ গ্রহনের মাধ্যমে সিলট পৌরসভায় তাঁর জনপ্রতিনিধিত্ব ও জনসেবার কর্ম জীবন শুরু করেছিলেন, আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কমিশনার থেকে পৌর চেয়ারম্যান অতঃপর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনে বার বার বিজয় মাল্য পরিধন করতঃ বিজয়ের শেষ হাসি হেসে নিজের অবস্থান সক্ত ও সুদৃঢ় করে নিয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ১৫ই জুনের নির্বাচনে বি.এন.পি সমর্থিত প্রার্থী হিসাবে চমক দেখান সাবেক কমিশনার আরিফুল হক চৌধুরী। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামীলীগ সমর্থিত শক্ত প্রার্থী হেভীত্তয়েট বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে শক্তিমান সংগঠক পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ পরিক্ষিত জিয়ার সৈনিক আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়ের নির্বাচিত হলেও মনের মাধুরী দিয়ে কাজ করতে পানের নি, তাঁকে সে সুযোগ দেয়া হয়নি। মরহুম অর্থমন্ত্রী এ.এস.এম কিবরিয়ার মামলায় তাকে আসামীভুক্ত করা হয়। মেয়রের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়, কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। সকল ঝুলুম নির্যাতন ধৈর্য্যরে সাথে মোকাবিলা করেন-সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আইনী লড়াইর মাধ্যমে মেয়র পদ ফিরে পান, করামুক্ত হন।
করামুক্ত হয়ে পদ ফিরে পেয়ে দ্রুত গতিতে কাজে ঝাপিয়ে পড়েন মেয়র আরিফুল। দখল দুসনের বিরুদ্ধে বলতে গেলে জেহাদ ঘোষনা করেন। দায়িত্ব পালনে তিনি স্বজনপ্রীতি দূর্ণীতিকে প্রশ্রয় দেননি। তার রাজনৈতিক মিত্রের মালিকানাধীন সিলেট মহিলা মেডিকেল কলেজের দেয়াল ভাঙ্গা ও দখল মুক্তিতে তিনি যে ব্যক্তিত্ব ও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছিলেন তা মিডিয়া ভ’বন ও সুশীল সমাজ কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে। দখলকৃত ছড়াও খাল অবৈধ দখলদারগণ এর কবল থেকে উদ্ধার করতঃ প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর প্রশংসনীয় ভূমিকা নগরবাসি যে ভুলেন নি তার প্রমান মিলেছে বিগত মেয়র নির্বাচনে। সিসিক মেয়র হিসাবে বিএনপি’র বলিষ্ট নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর সিলেট সদরের সাংসদ, মাননীয় অর্থমন্ত্রী এবং সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুরব্বি আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও সু-সম্পর্ক তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও পরিপক্ক তারই পরিচয় বহন করে। অর্থমন্ত্রী আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় বর্ষীয়ান নেতা বলে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী তাকে অবমুল্যায়ন, অবহেলা কিংবা এড়িয়ে চলেন নি, বরং তাকে সম্মান দিয়েছেন সম্মান করেছেন। মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও গুরুজন হিসাবে বয়োঃ কনিষ্ট সিটি মেয়রকে মমতায় আন্তরিকতায় কাছে টেনে নিয়েছেন। বড়মনও উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়েছেন। দু’জনে এক রিকসার যাত্রী হয়ে শহরও দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। প্রবলও তুমুল প্রতিদ্ধন্ধী দুই রাজনৈতিক দল-আওয়ামীলীগ ও বিএনপির দুইজন অসম পিতা পুত্রের বয়সী দুইজন নেতা একজন মাননীয় অর্থমন্ত্রী এ মুহিত এবং আরেকজন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন ও কল্যানে এক রিকসার যাত্রী হয়েছেন, কাজ করছেন-দেশের অসহিষ্ণু রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন চমৎকার দৃশ্য ব্যতিক্রমি ও অনুকরনীয় অনুসরনীয় বটে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিগত নির্বাচনে মেয়র পদে পুনরায় প্রার্থীহন আরিফুল হক চৌধুরী। এবার আর দলীয় সমর্থন নয়, মনোনয়ন নিয়ে। শুরুতেই দারুন ধাক্ষা খান পাক্কা রাজনীতিবিদ আরিফ চৌধুরী। দলীয় মনোনয়ন পেতে তাকে প্রতিযোগীতার সম্মুখীন হতে হয়। নিজ দল বিএনপি থেকে একাধিক যোগ্য প্রার্তী প্রার্থীতা ঘোষনা করেন, দলীয় হাই কমান্ডের কাছে মনোনয়ন চান। বিশ দলীয় জোটের প্রধান শরীক জামাতে ইসলামী বাংলাদেশ সিলেট থেকে দলীয় প্রার্থী ঘোষনা করেন নগর নেতা এডভোকেট এহছানুল মাহবুব জোবায়রকে। আরিফুল হক চৌধুরী নিজ দল থেকে মনোনয়ন পেলেও নগর জামাতের নেতা নাগরিক কমিটির ব্যানারে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থেকে যান, দশ হাজারের মত ভোটও পান। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিগত নির্বাচন ছিল দারুন উৎসব মুখর। তুমুল প্রতিদন্ধিতাপূর্ণ। আরিফ কামরান ভোটের লড়াই এগিয়ে চলে সমানে সমান। টান টান উত্তেজনা নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের নিরন্তর গবেষনার অবসান ঘটিয়ে আবার বিজয়ের শেষ হাসি হাসেন ভোট বিশেষজ্ঞ আরিফুল হক চৌধুরী। তার অপূর্ব সাংগঠনিক দক্ষতা ও ক্ষমতা, তীক্ষè বুদ্ধি ও কারিসমাটিক ব্যক্তিত্বতাকে মহান আল্লাহর রহমত ও বরকতে বিজয়ের শেষ হাসি হাসায়।
সম্প্রতি শপথ গ্রহন শেষে দায়িত্বভার নিয়েছেন টানা দ্বিতীয় মেয়াদে। নির্বাচিত সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী শুরুতেই একটি মহৎ কাজ করলেন তিনি। সিলেটের কৃতি সন্তান জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর ডক্টর জামিলুর রাজা চৌধুরীকে নাগরিক সম্ভবনা দিয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। আবেগ আপ্লুত হয়ে প্রফেসর চৌধুরী প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধের মিত্র আমাদের নিকট প্রতিবেশি ভারত বর্ষের উপহাই কমিশনার মিষ্টার কৃষ্ণা মূর্তি সিসিক মেয়রের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষ্যাত করে তার দেশের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। পূন্যভূমি সিলেটের বিজ্ঞ ভোটারগণ সরকার দলীয় যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রার্থীর পরিবর্তে বিরোধী দলীয় আরিফুল হক চৌধুরীকে পাঁচ বছর মেয়াদের জন্যে কর্পোরেশনের দায়িত্ববার দিয়েছেন নগরবাসি আশা করেন নাগরিকদের ভোটাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সরকার সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে পূর্ণ মেয়াদে তার দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেবেন।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে তুমুল প্রতিদন্ধীতাকারি সাবেক সিসিক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান পরাজয় মেনে নিয়ে বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একে অন্যের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন। সৌজন্যমূলক আচরন করত মিষ্টি মুখ এর সঙ্গে নগর বাসিকে মিষ্টি হাসিও উপহার দিয়েছেন। কর্পোরেশনের একটি সভায় ভাষনদান কালে সিলেট জেলা বারের সভাপতি সিলেটের বিশিষ্ট আইনজীবী ও বিজ্ঞ জন এডভোকেট মোহাম্মদ লালা সিলেটকে আধ্যাত্বিক নগরী উল্লেখ করতঃ সিসিক মেয়রকে আধ্যাত্বিক মেয়র বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রশংসা করতঃ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নব অভিসিক্ত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর এখন এগিয়ে যাবার পালা। যে শহরের মাটি পূত পবিত্র, যে মাটির সঙ্গে মিল পাওয়া যায় শাহজালালের সঙ্গে আনা মাটির যে মাটিতে চীর শয়ানে শায়ীত আছেন পীরানে পীর-ইয়েমেনীর বীর হযরত শাহ জালাল ইয়েমেনী (র) সে শহরে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, ময়লা, আবর্জনা, দখল দূষণ থাকতে পারে না। কর্মবীর আরিফুল হক চৌধুরী সে গুরু দায়িত্ব পালনে এ আশাবাদ ব্যক্ত করাই যায়। সিলেট বিভাগের একজন প্রবীন নাগরিক সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর একজন গুনগ্রাহী, অগ্রজ ও সহযোদ্ধা হিসাবে তাঁকে এবং সকল সিসিক কাউন্সিলারগণকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। তাদের সকলের সুস্বাস্থ্য দীর্ঘায়ূ ও কল্যান কামনা করি।
(ষাটের দশকে এমসি কলেজ সিলেটের ছাত্র। মুক্তিযোদ্ধা। সিনিওর এডভোকেট, হাইকোর্ট। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাব। মুক্তিযোদ্ধা। কলামিষ্ট)
মন্তব্য করুন