নবী (সা.) ও ধর্ম অবমাননায় কঠোর শাস্তির আইন প্রণয়ন করুন

October 28, 2019,

এহসান বিন মুজাহির॥ বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে মুসলমানরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছেন এ ভূখ-ে। আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে বহু সম্প্রদায়ের সম্প্রীতিমূলক অবস্থান বিশ্বের অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের এই সুনামকে নস্যাৎ করার জন্য যন্ত্রকারী মহল এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সহাবস্থানকে কলঙ্কিত করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। মসজিদ-মন্দিরে হামলাসহ ইসলাম ও নবী (সা.) নিয়ে একটি বিশেষ মহল নানাভাবে ষড়যেন্ত্র লিপ্ত। বিভিন্ন স্থানে একের পর ইসলাম ধর্ম ও নবী নিয়ে কটূক্তি হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়েও হামলা হচ্ছে। বাংলাদেশের শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে মুসলমানদের ধর্ম, এবং নবী ও সাহাবিদের সম্মান রক্ষার্থে কঠোর আইন প্রণয়ণ করা জরুরি। অন্যথায় সম্প্রতি ভোলায় ঘটে যাওয়া ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ধর্ম এবং নবীকে নিয়ে কেউ কটূক্তি করলে মুসলমানরা দুঃখে, ক্ষোভে-ক্রাধে ফেটে পড়বেন। শুরু হবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা। সূত্রপাত ঘটবে মারামারি-হানাহানির মতো ঘটনার। উত্তাল হবে দেশ। রক্তাক্ত হবে রাজপথ। তাজা প্রাণ যাবে অনেকের। বিপর্যস্ত হবে মানবতা, ডেকে আনবে ভয়াবহ বিপর্যয়।

ধর্ম এবং নবী (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। শুধু মুসলমান নয়, সকল ধর্মের অনুসারীদের কাছেই তাদের ধর্মবিশ্বাস আবেগের সাথে জড়িত। তাই মতামতের স্বাধীনতার নামে কারো ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করা রাষ্ট্রীয়ভাবেও অপরাধ। বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র কর্তৃক সকল নাগরিককে দেওয়া হয়েছে স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধানে ১৫ (গ), ১৫ (ঘ), ১৯ এবং ২৭ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এবং রাষ্ট্র সকল ধর্ম, বর্ণের নাগরিককে নিরাপত্তা, সমান সুযোগ দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ধর্ম অবমাননা কিংবা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অপরাধগুলো আমাদের বিদ্যমান আইনে শাস্তি যোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে বহু বছর আগে থেকেই।

পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়া সত্ত্বেও বারবার ইসলাম এবং নবীকে নিয়ে কটূক্তি করা হচ্ছে। এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়ার পরও এক ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদরা ক্রমাগতভাবে ইসলামের ওপর আঘাত করে আসছে। এই ধর্ম অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রতিকারে এ দেশের আলেম-ওলামাসহ তৌহিদী জনতা তীব্র প্রতবাদ আন্দোলন করার পাশাপাশি ধর্ম অবমাননার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করে আইন পাসের দাবি জানিয়ে আসছেন অনেক আগে থেকেই। কিন্তু সরকারের কাছে মুসলমান সম্প্রদায়ে গুরুত্বপূর্ণ এ গণদাবি আজও উপেক্ষিত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার বক্তৃতায় বলেছেন-মহানবী (সা.) নিয়ে কটূক্তি এবং ধর্ম অবমাননা করলে সহ্য করা হবে না, কটূক্তিকারীদের  দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। তিনি বলেছেন-আমি একজন মুসলমান। এখন নবী করিম (সা.) সম্পর্কে কেউ যদি আজেবাজে কথা লেখে, আমি চুপ করে বসে থাকতে পারি না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ হয়তো ধর্ম না মানতে পারে, তার মানে এই না যে তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথা বলবে বা নোংরা কথা লিখবে। তিনি আরও বলেছিলেন বাংলাদেশে সব ধর্মের সমান অধিকার আছে। কোন ধর্মের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেবার অধিকার কারও নেই। বাস্তবে কি আমরা এমন বক্তব্যের প্রয়োগ দেখতে পাচ্ছি? ব্যক্তি নিয়ে কটূক্তি করলে ছাড় দেয়া হয় না; কিন্তু ধর্ম ও নবী নিয়ে কটূক্তি করলে কটূক্তিকারীরা কঠোর শাস্তি থেকে ছাড় পেয়ে যায়!

গত ২০ অক্টোবর ভোলার বোরহানুদ্দিন উপজেলায় এক সনাতন ধর্মাবলম্বী যুবকের ফেসবুক স্ট্যাটাসে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোকে কেন্দ্র করে ভোলায় তাওহিদি জনতা এবং পুলিশ সংঘর্ষে ৪জন নিহত হয়েছেন এবং পুলিশসহ আহত হয়েছেন শতাধিক। মহানবীকে কটূক্তি করার প্রতিবাদে ভোলার আলেম-ওলামাসহ নবীপ্রেমিক তাওহিদি জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর প্রতিবাদে নেমেছিলেন। প্রশাসন আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং পূর্ব অনুমতি না নেয়ার অজুহাতে নবীপ্রেমিক জনতার প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে বাঁধা প্রদান করেন। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী-এসময় হঠাৎ করেই প্রতিবাদি যুবকরা পুলিশের উপর ইটপাটকেল ছুড়ে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে তখন তাওহিদি জনতার উপর গুলি করে। পুলিশ এবং তাওহিদি জনতার সংঘর্ষে ভোলায় ৪টি তাজা প্রাণ মুহূর্তে ঝরে যায়। উত্তপ্ত হয়ে উঠে পুরো দেশ। নবীপ্রেমিকদের রক্তে কালো পিচঢালা রাজপথ রক্তে রঙিন হয়ে ওঠে। এই ঘটনার পেছনে কেউ কেউ গুজবকে দায়ি করছেন, আবার কেউ কেউ বিশেষ একটি মহলের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে প্রেরিত প্রেসবিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়- যুবকের আইডি হ্যাক করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যইএকটি বিশেষ মহল এ কাজটি করেছে। অথচ কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কোনো অধিকার কারো নেই। দেশে ধর্ম ও নবী নিয়ে বারবার কটূক্তি হচ্ছে। ২০১৩ সালে শাহবাগের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্লগারদের ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে চরম অবমাননা ও কটূক্তির খবর জনসমক্ষে আসে। তার আগে সর্বোচ্চ আদালত ব্লগারদের ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও সরকার সংশ্লিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করেনি। এর আগে সালমান রুশদী-তসলিমা নাসরিনের মতো ব্যক্তি বিচ্ছিন্নভাবে ধর্ম অবমাননা করেছে। তৌহিদী জনতার প্রতিবাদ আন্দোলনের মুখে তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। ধর্ম অবমাননার এই প্রবণতা এখন মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। নাস্তিক-মুরতাদ ও ভিন্নধর্মী ইসলামবিদ্বেষীরা এখন সংঘবদ্ধভাবে এই কাজটি করছে। অনলাইনে ব্লগে, ফেসবুক-টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করে, কার্টুন এঁকে তারা এই কাজটি করে যাচ্ছে। তাদের এসব কর্মকান্ড কোটি কোটি তৌহিদী জনতার হৃদয়কে আহত করছে। তাই নবী ও ধর্ম অবমাননার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করে আইন পাস করা বাংলাদেশের কোটি কোটি মুসলমানদের প্রাণের দাবি।

লেখক: সাংবাদিক কলামিস্ট

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com