নাব্যতা হারিয়ে অস্থিত্ব-সংকটে ধলাই নদী

May 8, 2017,

ওমর ফারুক নাঈম॥ খনন না করায় নাব্যতা হারিয়ে অস্থিত্ব-সংকটে পড়েছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদী। পলি মাটি, ময়লা-আবর্জনায় তলদেশ ভরাট হয়ে নদীটি নাব্যতা হারানোর কারণে সৃষ্ট হচ্ছে অকাল বন্যা। এ অবস্থা চলে এলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ধলাই নদী বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্ত:সীমান্ত নদী। নদীটির বাংলাদেশ অংশে দৈর্ঘ্য ১৩ কিলোমিটার, প্রস্থ ৫০ মিটার এবং অববাহিকার আয়তন ৩৪২ বর্গকিলোমিটার। ধলাই নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পূর্ব দিকের পাহাড়ে উৎপত্তি লাভ করেছে। সেখান থেকে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে নদীটি রাজনগর উপজেলায় মনু নদীতে মিলিত হয়েছে।
ধলাই নদী ইতিমধ্যে অনেকটাই নাব্যতা হারিয়ে অস্থিত্ব-সংকটে রয়েছে। নদীর আশপাশ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ নদীতে পানি শুকিয়ে চর জেগেছে। ভারী বৃষ্টি আর উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের নদীর নাব্যতা হ্রাসের কারণে ধারণক্ষমতা না থাকায় নদী দু’টির পাড় ভেঙে পানি হানা দেয় তীরবর্তী গ্রামগুলোতে। আর এ পানি ভাসিয়ে নিয়ে যায় নদী তীরবর্তী মানুষের আয়ের একমাত্র সম্বল সবজি ও বোরো ফসল।


ধলাই নদী তীরবর্তী গ্রাম বাদে করীমপুরের কৃষক রহিম মিয়া জানান, ২০-২৫ বছর ধরে নদীর পানি শুকাচ্ছে। নদীর কোনো কোনো জায়গায় চর জেগে ওই এলাকা পুরো শুষ্ক মৌসুম পানিশূন্য থাকে এবং খনন না করায় পাড় ভেঙে পানি হানা দেয় আমাদের ফসলে। তীরবর্তী গ্রামগুলোতে একই ধরনের মতামত ব্যক্ত করেন অন্যান্য নদীতীরবর্তী বাসিন্দা আরজদ মিয়া, জেইত মিয়া, সিজাদ উদ্দিন জানান, নদীগুলোর গভীরতা অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। এ জন্য মানুষকে শুষ্ক মৌসুমে পানিসংকটের পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে অতি বন্যার মুখোমুখি হতে হয়। আমার ছোট বেলায় নদীটিকে যেভাবে দেখে ছিলাম এখন নদীটি তার পুরো অস্বিত্ব হারিয়ে ফেলতে বসেছে। স্থানীয় কোনা গাঁওয়ের বাসিন্দা মিজান উদ্দিন ও ইমান উল্লাহ বলেন, নদীর দুইপারের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে গ্রামের পর গ্রাম, বাড়ি-ঘর আর ক্ষেত খামার ডুবিয়ে নিয়ে যায়। ১-২ দিনের মধ্যেই নেমে যায়। নদী ফুলে-ফেঁপে ওঠা পানি। নদীর ঐতিহ্য নেই বললেই চলে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে হাঁটু পানি, কোমর পানি আর শুকনো মৌসুমে নদী জুড়ে ধূধূ বালুচর।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, নদীটি পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ধলাই নদী বাঁচাতে ড্রেজিং আর দীর্ঘস্থায়ী বাঁধ নির্মাণেরও প্রয়োজন। এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। যার আওয়তায় ড্রেজিং ও স্থায়ী ব্লগের কাজ করা হবে। নদীর তীরবর্তী মানুষের ক্ষতি এড়াতে পানি কমতে শুরু করলে ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলো মেরামতের কাজ শুরু হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর পানিপ্রবাহ প্রতিবছরই কমছে। এ কারণে কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ রকমের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে না পারলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। নদীগুলো বিপন্ন হয়ে পড়ায় জীববৈচিত্র নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কৃষি ও মৎস্য ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পানির অভাবে সঠিক প্রজনন ক্ষেত্রের অভাবে হাওর এবং নদীর মাছও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নদী খননের পাশাপাশি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোও খননের উদ্যোগ নেওয়া গেলেই কেবল নদীর অস্থিত্ব রক্ষা সম্ভব।
শরীরের শিরা-উপশিরায় যেমন রক্ত না থাকলে শরীর টেকে না, তেমনি দেশের নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ না থাকলে বাংলাদেশও টিকবে না। ধলাই নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য যা যা করার দরকার, তার পরিকল্পনা এখনই করতে হবে। তা না হলে অচিরেই ধলাই নদী পরিণত হবে মরুভূমিতে । প্রকৃতি ও ফসলের ওপর পড়বে বিরূপ প্রভাব।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com