নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়!

August 2, 2017,

এহসান বিন মুজাহির॥ গুরুত্বপূর্ণ অনেক পর্যায়ে রয়েছে নারীদের অবাধ বিচরণ, সেই দেশে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কখনও কখনও পুরুষদের মানুষ বলে ভাবতে বিব্রত বোধ করি।  রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণে পদে নারীদের উপস্থিতিথাকার পরও দেশে নারী নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা থেমে নেই! নারীরা যখন ধর্ষণের শিকার হয় তখন নারী নেত্রীরা কোথায়? চেতনাধারী নারীবাদীসহ সুশীলরা এসব বিষয়ে নীরব কেনো!

ধর্ষণ, ধর্ষণত্তোর নৃশংস হত্যার ঘটনা এখন যেনো প্রতিদিনের সংবাদ শিরোনাম। মানুষ নামী হায়েনাদের হিংস্র ছোবল থেকে ৩ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৬০ বছরের নারী; সবাই এই ভয়াল থাবার শিকার। এর বাইরেও নিশ্চয় আরও ঘটনা ঘটে, যেসব ঘটনা মিডিয়াতে আসে না। ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় যৌনসন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। গভীরভাবে লক্ষ করলে দেখা যায় এসব ধর্ষণের খবর প্রথম সারির জাতীয় কোনো দৈনিকে তেমন একটা গুরুত্ব পায়না। ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করলেও পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে মিডিয়া থেকে দূরে রাখা হচ্ছে বলেও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এসব ঘটনায় ধর্ষক ও হত্যাকারীদের সনাক্ত ও বিচার প্রক্রিয়া থেকে আড়াল করার অপচেষ্টা চালানো হয়!

গত কয়েক মাস আগে গাজীপুরের শ্রীপুরে পরপর দুটি ঘটনা সারাদেশের বিবেককে নাড়া দিয়ে গেল। ঘটনাদ্বয়ের একটি হলো, মেয়ের লাঞ্ছনার বিচার না পেয়ে মেয়েসহ ট্রেনের নিচে বাবার আত্মহত্যা! সমাজ, নেতা, আইন-আদালত- কোথাও বিচার না পেয়ে বৃদ্ধ বাবা হযরত আলী একেবারে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেলেন এদেশ আর বাসযোগ্য নয়। মানুষরূপী কুকুরদের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।

মাত্র কয়েকদিন আগে রাজধানী বনানীর রেইনট্রি নামক অভিজাত হোটেলের ঘটনায় জাতি নির্বাক!

এ ঘটনার রেষ না কাটতেই বগুড়ায় শ্রমিক নেতা তুফান কর্তৃক কলেজ ছাত্রী সোনালীকে ধর্ষণ!

এঘটনায় দুদিনের মাথায় তানহা নামের ৩বছেের মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা!

আফসানা, রিশা, নিতু, তনুকে ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যা! এ ঘটনা কী সহজে ভুলা যায়!

এসকল নরপশু ধর্ষকরা ক্ষমতার দাম্ভিকে বুক ফুলিয়ে বেচেঁ থাকলেও একদিন বিষাক্ত কীটের মতো পচেঁ গলে মরে। সোনালী ধর্ষণের ঘটনায় এটাই আবার প্রমাণিত হলো যে দেশের নারীরা ঘরে-বাইরে,অফিস-আদালত,পথে-ঘাটে, বাসে তথা কর্মক্ষেত্রে কোথাও নিরাপদ নয়।

অতীতের সকল ঘটনার বিচার ও উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় ধর্ষণ-নিপীড়ন বন্ধ হচ্ছে না।  দিন দিন ধর্ষণের সংস্কৃতি বাড়ছে তো বাড়ছেই। এর একমাত্র কারণ প্রকৃত দোষী-খুনী, ধর্ষক তথা অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি না দেয়া। দেশে ঘটে যাওয়া প্রতি খুন-ধর্ষণের যথার্থ বিচার তথা দোষীদের সর্বেচ্চ শাস্তি প্রয়োগ করলে এমনটি আর ঘটতো না।

যতই ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ক্ষণিকের জন্য আন্দোলন, কয়েক দিনের জন্য লেখকের খোরাক বা টিভিতে টক শো হোক; এ ধর্ষণ থামবে না। দেশে ধর্ষণের মাত্রা দিন দিন যেভাবে বাড়ছে তাতে কারও মা-বোনই আর নিরাপদ নয়।

বাংলাদেশ দ-বিধির ১৮৬০ আইনের ৩৭৬ ধারায় বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ধর্ষণের অপরাধ করে তবে তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- অথবা ১০ বছর মেয়াদে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ-ে দ-িত এবং জরিমানাও করা হবে। মানুষ হত্যা করলে ফাঁসির দ-াদেশ হলে ধর্ষণ মানুষকে হত্যার চেয়ে আরও বড় অপরাধ। কারণ কাউকে খুন করা হলে সে একবারই মরে। কিন্তু যে মেয়েকে ধর্ষণ করা হয় সে সারাজীবন এই কষ্টের কথা মনে করে বারবার মরে। অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। সুতরাং ধর্ষণকারীর শাস্তি হোক মৃত্যুদন্ড।

‘কুকুর পাগলা হলে যেমন তাকে বধ করা মানুষের জন্য কল্যাণকর, তেমনি কিছু মানুষকে তার কার্যকলাপের ওপর ভিত্তি করে দেশ-জাতির বৃহত্তর স্বার্থে দেশের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি’।

কাজেই যৌন সন্ত্রাসীদের শুধু গ্রেফতার, জেল দিয়েই বিচার শেষ নয়; বরং এসব নরপশু ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

লেখকঃ সাংবাদিক, কলামিস্ট

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com