“নিউক্লিয়াসের জনক, স্বাধীনতার সংঘটক, মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক আধিনায়ক, তাত্বিক সিরাজুল আলম খাঁন অসুস্থঃ সুস্থতা, দীর্ঘায়ূ ও শুভ কামনা॥
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ বাংলাদেশের সমকালীন সমাজ, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বহুল আলোচিত-আলোড়িত ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব, স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষে গঠিত গোপন সংঘটন নিউক্লিয়াসের জনক, স্বাধীনতার সংঘটক, মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক-তাত্বিক সিরাজুল আলম খান চিকিৎসা শেষে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পথে বিমানে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমিরাত এয়ার কর্তৃপক্ষ তাঁর উন্নত ও উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য আন্তরিকতার সাথে দুবাই নামিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। গত দোসরা ডিসেম্বর পঁচাত্তোর উর্ধ্ব এই প্রবীন স্বাধীনতা সংগ্রামী স্বাধীনতার মাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁর প্রিয় স্বদেশ ভূমিতে ফিরছিলেন। হৃদরুগ, ব্লাড প্রেসার সহ বিভিন্ন জটিল ও বার্ধক্য জনিত ব্যাধিতে ভূগছিলেন। দোসরা ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এই দুঃসংবাদটি পাই তাঁর একান্ত সূহৃদ ও ¯েœহভাজন স্বাধীনতা সংগ্রামী এস.টি.পি. করিমের কাছ থেকে। সিরাজুল আলম খানের রাজনৈতিক সচিব, চৌদ্দ দফা চেতনা পরিষদের মুখপাত্র এম.এ.রহিম ও আমাকে এই দুঃসংবাদ জানিয়ে তাঁর জন্য দোয়া করতে বল্লেন।
আমি নিজেই ইদানিং কালে বিভিন্ন বার্ধক্য জনিত দূরাযোগ্য কঠিন ও জটিল ব্যাধিতে আক্তান্ত হয়ে শয্যাশায়ী না হলেও সোফাশায়ী হয়ে কালাতিপাত করছি। এমন দূঃসংবাদটি শুনে মনটা দারুন খারাপ হয়ে গেল। তাঁর সঙ্গেঁ আমার রাজনীতি ব্যবসা বানিজ্য দুনিয়া দারির লেনাদেনার কোন সম্পর্ক না থাকলেও একটি অলিখিত ভালোবাসা, ¯েœহ মমতা ও আত্বীক বন্ধনে আবদ্ধ আছি। তিনি আমার ছাত্র রাজনীতির শিক্ষা গুরু, মুক্তিযোদ্ধের দিক্ষা গুরু। ষাটের দশকের শুরু-সেই সে কাল থেকে একাল পর্য্যন্ত তিনি তাঁর ভক্ত শুভানুধ্যায়ীর নিকট দাদা হিসাবে অভিহিত ও সুপরিচিত। মাঝারি উচ্চতার চাপ দাড়ি সমেত গোলবাটা মুখ, বৃদ্ধিদীপ্ত দুই চোখসহ সাধারন পোষাকের অসাধারন মানুষ, সহজ সরল সাদামনের মানুষ, সিরাজুল আলম খাঁন তার সূহৃদ- স্বজনদের কাছে দাদা হিসাবে পরিচিত। তাঁর আহার বিহার, সাধারণ পোষাকাদি এবং উচ্চ মার্গীয় জীবন দর্শন সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করে। বৃহত্তর নোয়াখালির উচ্চ শিক্ষিত, অভিজাত, খান্দানী পরিবারের কৃতি সন্তান সিরাজুল আলম খাঁন বাল্যকাল থেকেই অসম্ভব রকমের মেধাবী ও কৃতি ছাত্র ছিলেন। শিক্ষা বিভাগীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পুত্র সিরাজুল আলম খাঁন পাঠাভ্যাস পঠন-পাঠনের সাথে সাথে ছাত্র রাজনীতির প্রতিও অধিকতর উৎসাহী ছিলেন। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে পাকিস্তানী সমাজ ও রাজনীতিতে গণতন্ত্র হীনতা ও শিক্ষা সাংস্কৃতিক অনগ্রসরতা আজীবন আধুনিক গণতন্ত্রী সিরাজুল আলম খাঁনকে পিড়া দেয়। তৎকালীন পূর্ব পশ্চিমের বৈষম্য, বাংলা ও বাঙ্গাঁলীদের অবজ্ঞা, অবহেলা ও অসদাচরন মরমে মরমে অনুধাবন করে উপলব্দি করেন প্রাসাদ ষড়যন্ত্রী, প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তানী, পাঞ্জাবী চক্রের সাথে বাংলা ও বাঙ্গাঁলিদের স্বার্থ সংরক্ষন সম্ভব নয়, বাঙ্গাঁলির সভ্যতা-সংস্কৃতির বিকাশের জন্য জাতি রাষ্ট্র-স্বতন্ত্র-স্বাধীন আবাস ভূমি প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে রাষ্ট্র ও সমাজ চিন্তক সিরাজুল আলম খাঁন ১৯৬২ সালে স্বাধীন বাংলা দেশ প্রতিষ্টার উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁর দুই সহযোগি আব্দুর রাজ্জাক (মরহুম সাবেক মন্ত্রী) এবং কাজি আরিফ আহমদ (জাসদ সভাপতি। মরহুম)-কে নিয়ে “নিউক্লিয়াস” গঠন করেন।
গোপন সংঘটন নিউক্লিয়াস বাংলাদেশের তৎকালীন সমাজ, রাজনীতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে গৌরবোজ্জল অবদান রাখে। রাষ্ট্র ও সমাজ চিন্তক সিরাজুল আলম খাঁন একাত্তোরের মহান মুক্তি যুদ্ধে সংঘটক ও তাত্বিক হিসাবে যে গৌরবোজ্জল অবদান রাখেন তা ইতিহাসের অংশ। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবের নামে গঠিত “মুজিব বাহিনীর অন্যতম আঞ্চলিক অধিনায়ক ছিলেন তিনি। অধিনায়কদের বাকি তিনজন হলেন শেখ ফজলুল হক মনি (কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগ এর সাবেক সম্পাদক। আওয়ামী যুব লীগের প্রতিষ্টাতা চেয়ারম্যান। পঁচাত্তোরের পনেরোই আগষ্ট নির্মম ভাবে সস্ত্রীক নিহত।), আব্দুর রাজ্জাক এবং তোফায়েল আহমদ (আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। সাবেক বানিজ্যমন্ত্রী), মুজিব বাহিনীর চার আঞ্চলিক অধিনায়কদের মধ্যে দূঃখ ও দূর্ভাগ্য জনক ভাবে দুই জনই পরলোকে।
ষাটের দশকের শুরু থেকে সর্বজন শ্রদ্ধেয় সবার প্রিয় দাদা সিরাজুল আলম খাঁন এর সঙ্গেঁ আমার পরিচয় সম্পর্কও সখ্যতা। এই সুদীর্ঘ চলার পথে পথ পরিক্রমায় অনেক কিছু গ্রহণ বর্জন করেছি, মত, পথের ভিন্নতা এসেছে, পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু তার সাথে সম্পর্ক শেষ হয়নি, বরং তা মমতা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আরো মজবুত হয়েছে।
১৯৬২ সালে মেট্রিক ক্যেন্ডিডেট ছিলাম। আমরাই ছিলাম মেট্রিকুলেশন এর শেষ ব্যাচ, এরপর শুরু হয় এস.এস.সি. সিস্টেম। বাষট্টি সালে কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের দাবীতে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় ছাত্র আন্দোলন শুরু এবং পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারী ছাত্র নিহত হলে স্কুলের ছাত্রাবস্থায় “ছাত্র হত্যার বিচার চাই” বলে সেই যে মিছিলে যোগ দিয়েছিলাম, বেলা শেষে এই পড়ন্ত বেলায় এখন ও শ্লোগানের মায়া ত্যাগ করতে পারিনি-যদিও এখন আর মিছিলে যাওয়া যায় না, সম্ভব হয় না। তখন তৎকালীন ইকবাল হলে বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক ছিল ছাত্র রাজনীতির প্রাণ কেন্দ্র-রাজধানীই বলা চলে। ছাত্র লীগের বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতাদের আবাস স্থল ছিল এই ইকবাল হল। এই ইকবাল হলেই দাদা সিরাজুল আলম খাঁনের সঙ্গেঁ সাক্ষাত। তাঁর দেশ প্রেম, সাংঘটনিক দক্ষতা ও সহজ সরল সাধারন জীবনাচরন আমাকে বিমুগ্ধ করে। তখন বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর (যদি ও তখন তিনি বঙ্গঁবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন নি) রহমানের নেতৃত্বে বাঙ্গাঁলি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দানা-বেধে উঠছে। ছাত্র লীগ এর মাধ্যমেই আমার ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ। ঐ দশকে প্রথম মৌলভীবাজার কলেজ শাখা অতঃপর মহকুমা শাখা ছাত্র লীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। দাদা ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমদ, আশম রব, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাহ জাহান সিরাজ, স্বপন চৌধুরী প্রমুখ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেঁ আমার জানাশুনাও সু-সম্পর্ক ছিল।
আটষট্টি সালে হায়ার সেকেন্ড ক্লাশ নিয়ে বি.এ.পাশ করলে পিতা-মাতার ইচ্ছায় অধিকতর উচ্চ শিক্ষার জন্য ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্ত্তি হই। ইকবাল হলের একশত একষট্টি নম্বর রুমের বাসিন্দা ছিলেন অগ্রজ প্রাতিম গিয়াস উদ্দিন (মনির ভাই। স্বাধীনতার সংঘটক। সাবেক হাই কমিশনার গ্রেট বৃটেন)। তখন ছাত্রলীগের মধ্যে আভ্যন্তরীন ভাবে দুটি ধারা প্রচলিত ছিল- এক- নিউক্লিয়াস ও স্বাধীনতা পহ্ণী দুই অখন্ড পাকিস্তান পহ্ণী। আমি নিউক্লিয়াস সমর্থক ও স্বাধীনতা পহ্ণী ছিলাম। দাদার ভক্ত অনুরক্ত ছিলাম। তেইশে মার্চ একাত্তোরে আমি স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে দাদাও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা মোতাবেক মৌলভীবাজার চৌমুহনা চত্বরে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে ছিলাম, পাকিস্তানী জাতির কথিত জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি পুড়িয়ে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আপোষহীন নেতা স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবের ছবি উড়িয়ে ছিলাম। তেইশে মার্চ এর সেই প্রতিরোধ সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন মহকুমা ছাত্রলীগের নব নির্বাচিত সভাপতি দেওয়ান আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় এর ছাত্রাবস্থায় দাদার ইচ্ছায় আমাকে ইকবাল হল থেকে হাজিমোহাম্মদ মহসিন হলে স্থানান্তরিত করা হয়, সেখানে ছাত্রলীগ নেতা মনিরুল হক চৌধুরী (সাবেক সাংসদ) মিয়া মুশতাক আহমদ (অবঃসচিব) প্রমুখ ছিলেন। ঢাকায় অবস্থান কালে ছাত্রলীগ সংঘটক হিসাবে দাদাও কেন্দ্রীয় নেতাদের সংস্পর্শে যাই, সাহচর্য্য পাই, তখন অর্থকড়ির ছড়া ছড়ি চাঁদাবাজি-ধান্দাবাজি ছিল না, নেতৃবৃন্দ সহকর্মিগণকে সহোদরের মত ¯েœহ মমতা করতেন সহমর্মিতা দেখাতেন। কেয়ারটেকার সরকারামলে আমলা রাজনীতিবিদ ব্যবসায়ী সমাজের কতেকাংশের উপর আজাব ও গজব নেমে আসে। জাতীয় অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মাঝে একদিন খবরের কাগজে দেখা গেল সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার এর সেনা প্রধান জেনারেল মঈন ইউ.আহমদ এর সাক্ষাতকার ও প্রাসঙ্গিঁক উক্তি- আই ওয়ান্ট এপিসফুল রিটায়ারমেন্ট”। কোন বিষয়ভিত্তিক লেখা আমার মনে রেখাপাত করলে আবেগ তাড়িত-আবেগ আপ্লুত হই, এই প্রসঙ্গেঁ একটি প্রাসঙ্গিঁক লেখালিখি-যা দেশও জাতির জন্য কল্যান কর-মঙ্গঁলজনক।
জেনারেল মঈন এর প্রাসঙ্গিঁক সাক্ষাতকার প্রসঙ্গেঁ একটি কলাম লিখলাম উয়েল, মিষ্টার জেনারেল, জেনো তাই হয়”। তখন বলা বলি হচ্ছিল তিনমাইয়া- কেয়ার টেকার সরকার সহজে ক্ষমতা ছাড়ছেন না। দেশকে বিরাজনীতি করনের প্রক্রিয়ায়-মায়নাসটু-ফরমূলা বাস্তবায়নের বিভিন্ন প্রক্রিয়া চলছে। দেশীয় রাজনীতির বাজারে গুজব ছিল দেশে মার্শাল ল’ হচ্ছে। জেনারেল মঈন সি.এম.এল.এ. হবেন রাষ্ট্রপতি হবেন। আমার এতদ্ সংক্রান্ত রচনাটি দারুন পাঠক প্রিয়তা পেয়েছিল। লিখেছিলাম জেনারেল সাহেব এমন কাজ করবেন না, যাতে দেশ ও সেনাবাহিনীর বদনাম হয়। সে সময়কার জাতীয় দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা সহবিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে প্রশংসিত হয়। দাদা সিরাজুল আলম খাঁন ও লেখাটি পছন্দ করে আমাকে স্থায়ী ভাবে ঢাকাবাসি হতে প্রস্তাব দিলেন। পেশাদার সিনিয়র আইনজীবী হিসাবে কোন নামকরা প্রতিষ্ঠানের আইন উপদেষ্টা, পাক্ষিক আলোর মিছিল পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বভার সহ বহুবিধ লোভনীয় অফার ছিল। তাছাড়া আইনজীবী হিসাবে মহামান্য হাইকোর্টে তালিকা ভূক্তিতে আমার সিনিয়রিটি তিনদশকের অধিক বলে ঢাকাবাসি হলে লাখ টাকা আয় রোজগারে কোন অসুবিধা হবে না-সর্ব্বোপরি জাতীয় পর্য্যায়ে পরিচিতি ও নাম ডাক হবে। কিন্তু আমি দাদার প্রস্তাবে সম্মত হয়ে ঢাকাবাসি হতে চাই নি, আমি একজন মফস্বল প্রেমিক। কাদিপুরের কদম ফুল, অন্তেহরির উত্থাল পাতাল দখিনা-হাওয়া আমাকে মাতাল করে, সবকিছুর মাঝে ও ঢাকা আমার কাছে ফাকা মনে হয়। যদিও সোয়া চার শত বৎসরের প্রাচীন নগরী ঢাকা আমার প্রিয় শহর। অধ্যায়ন-অধ্যাপনা-লেখালেখি-গবেষনা-শুভানুধ্যায়ী গণকে নিয়েই ব্যস্ত সেকাল থেকে একাল পর্য্যন্ত অগ্রজ প্রতীম দাদা সিরাজুল আলম খাঁনকে দেখছি আর অবাক হচ্ছি। তিনি কোন দলীয় রাজনীতিতে নেই, প্রশাসনিক সংস্কার মূলক চৌদ্দ দফা প্রস্তাবনা, অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা তাঁর দিবারত্রির মহাকাব্য। দাদার অসুস্থতার সংবাদ শুনে তার জন্য দোয়া করা এবং দেশে বিদেশে ছড়িয়ে থাকা তার শুভাকাংখী গণকে জানান দেয়া এ লেখার মূল উদ্দেশ্য। একজন প্রকৃত শ্রেণীচ্যোত বর্জুয়া সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে একজন প্রকৃত সর্বহারা। নিখাদ দেশ প্রেমিক অকৃতদার সিরাজুল আলম খাঁন এর ব্যবসা-বানিজ্য-প্লট-ফ্ল্যাট-অর্থকড়ি কিছুই নেই। সহোদর অবসর প্রাপ্ত আমলা আখতারুল আলম খাঁন এর বাসায় থাকতেন তিনি। তার ও তার সহধর্মিনীর মৃত্যোর পর দাদা পারিবারিক ভাবে ও নিঃসঙ্গঁ ও একা হয়ে গেলেও তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মি শুভাকাংখী শুভানুধ্যায়ী ঘর গেরস্থালি ছিল তাঁর দিবা রাত্রির মহাকাব্য। মাননীয় সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ¯েœহভাজনেষুকে মোবাইল মারফত দাদার অসুস্থতার দুঃসংবাদটি জানিয়েছি। যোগাযোগ ও প্রয়োজনীয় সংযোগিতা প্রদানের কথা বলেছি। সাংসদ সুলতান মনসুর বরাবরই অগ্রজদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং রাজনৈতিক-সামাজিক দায়িত্ব পালনে দায়িত্ববান। ঢাকাবাসি দাদার প্রিয়জনদের মধ্যে সাবেক সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা কাজি আব্দুল লতিফ সাজু এখন কবর বাসি। দাদার সৈনিক বেলাল উদ্দিন আশরাফি ও চট্টগ্রাম বাসি। জাসদ নেতা সাংসদ মঈনুদ্দীন খাঁন বাদল ও সম্প্রতি পরলোক গমন করেছেন।
ষাটের দশকের সূর্য্য সৈনিক একাত্তোরের বীর যোদ্ধারা এখন-সত্তোরোর্ধ আশির কোঠায়-জীবন সায়াহ্ণে। ইতিপূর্বে মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক আব্দুর রাজ্জাক অর্থাভাবে কিডনি জটিলতায় প্রায় বিনা চিকিৎসায় বিলেতে মৃত্যো বরণ করেছেন, বৃহত্তর নোয়াখালি অঞ্চলের মুজিব বাহিনীর বীর যোদ্ধা সাবেক সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান, কাজি আব্দুল লতিফ সাজু ও চিকিৎসার অভাবে অকাল মৃত্যো বরণ করেছেন। বৃহত্তর সিলেটের বীর যোদ্ধা সাবসেক্টার কমান্ডার মাহবুবুর রব ছাদী চৌধুরী ও এক বুক দুঃখ ও বেদনা নিয়েই মায়াময় এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুজিব বাহিনীর বীর যোদ্ধা আয়ূব খান অর্থাভাবে-আমলাদের হাতে অপমাণিত হয়ে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বরাবরে-ডেথনোট-লিখে আত্ব হত্যা করেন। সম্প্রতি পত্রিকান্তরে খবরে প্রকাশ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক-স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতা শাহ জাহান সিরাজ জীবন মৃত্যের সন্ধিক্ষনে। ঘুষ, দূর্নীতি, চাঁদাবাজি, ব্যাংক ঋণ এর নামে ব্যাংক লুটপাট করে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্বসাত করা হলেও অর্থাভাবে জাতীয় বীরদের প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহায়তা ও সম্মান প্রদর্শন সম্ভব হচ্ছে না। আশা করা যায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ ও বিভাগ এ ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক হবেন, প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করবেন। ব্যবস্থা নেবেন। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাটি চূড়ান্ত করবেন।
স্বাধীনতার মাসে স্বাধীনতার সংঘটক তাত্বিক সিরাজুল আলম খান এর সুস্বাস্থ্য দীর্ঘায়ূ ও সার্বিক কল্যান কামনা করছি, মহান মালিক তাঁকে ছহি ছালামতে রাখুন, নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনুন এই মোনাজাত করছি। সামনের মাসে ছয় জানুয়ারী দাদার শুভ জন্মদিন। তাঁকে তার জন্ম দিনের আগাম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
[লেখক: ষাটের দশকের ছাত্র ও সংবাদ কর্মি। মুক্তিযোদ্ধা। কলামিষ্ট। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব। সিনিয়র এডভোকেট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট]
মন্তব্য করুন