নিমারাই গ্রামে রাস্তার বেহাল দশায় হাজারো মানুষের ভোগান্তি
সালেহ আহমদ (স‘লিপক): মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবলা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নিমারাই (হিলরকান্দি) এবং পশ্চিম নিমারাই (সোনাপুর) গ্রামের হাওরাঞ্চলের বাসিন্দাদের একমাত্র যাতায়াতের রাস্তাটি সংস্কারের অভাবে অবহেলায় পড়ে আছে।
চলাচলের অযোগ্য রাস্তার এ বেহাল দশায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাতায়াতকারী ২ গ্রামের হাজারো মানুষ। বর্ষা মৌসুমে এলাকাবাসীকে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু সমান কাদা পানি মাড়িয়ে চলতে হয়। গ্রামের গুরুত্বপুর্ণ একমাত্র রাস্তাটি এখন হয়ে পড়েছে ব্যবহারের অনুপযােগী। দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কারবিহীন থাকায় বর্তমানে এ সড়কের বেহাল দশা। এছাড়াও রাস্তাটি উচু না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তার উপর হাটুপানি জমে যায়।
দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এলাকাবাসী সংষ্কারের দাবি জানিয়ে আসলেও এখনো হয়নি কাঙ্খিত সংস্কার কাজ। এভাবে বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও সড়কটির বিষয়ে এখনো দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারী। বর্তমান সরকারের আমলে দেশে কাঁচা রাস্তা নেই বললেই চলে। এই সরকার উন্নয়নের রোল মডেল। ইতিমধ্যে দেশের অলিতে-গলিতে সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এই একটিমাত্র মাটির সড়ক যেন অভিভাবকহীন! বর্ষা আসলেই নিমারাই এলাকার হাজারোধিক বাসিন্দারা চলাচলে পড়তে হয় সীমাহীন দুর্ভোগে। রাস্তার অবস্থা দেখে মনে হয় যেন আদিম যুগে বসবাস করছেন নিমারাই গ্রামবাসী।
সরে জামিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর রাস্তাটি খানাখন্দের কারণে গাড়ি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একটু বৃষ্টিতেই স্যাৎস্যাতে হয়ে পড়ে রাস্তাটি। আর বর্ষায় হয়ে যায় কাদাতে ভরপুর। দেখলে মনে হয়, যেন চাষের জমি! অথচ এ সড়কেই প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষ চলাচলা করতে হয়।
সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু সমান কাদা পানি মাড়িয়ে হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, অফিস, দোকান, ক্ষেত-খামার কিংবা হাসপাতালে যাতায়াতে হয় নানা অসুবিধা। এভাবে হাঁটু সমান কাদা নিয়ে মধ্যবয়সীরা বহু কষ্টে চলাচল করলেও বয়ো:বৃদ্ধ এবং শিশুরা চলাচলে পড়তে হয় নানান বিপাকে। কখনো কখনো ঘটছে নানান দুর্ঘটনা।
এ পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের চরম ঝুঁকিতে যাতায়াত করতে হয়। বিকল্প রাস্তা না থাকায় দৈনিক এই সড়ক দিয়ে কৃষক যেতে হচ্ছে ক্ষেত-খামারে, মুসল্লী যতে হচ্ছে মসজিদে, মামলা-মুকদ্দমা, হাট-বাজার এবং বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষদের নানা কাজে রাস্তাটি ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে আত্মীয়-স্বজনরা প্রয়োজন হলেও আসতে চান না এ এলাকায়।
জনবহুল বসত-বাড়ি থাকায় বিভিন্ন বয়সের মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটিতে অতিরিক্ত কাদার কারণে চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন এলাকার হাজারো মানুষ।
এখনো রোগীকে আদিম যুগের মতো পলো দিয়ে কাঁধে বহন করে হাসপাতালে নেয়া হয়! স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষার্থীরা জুতা হাতে নিয়ে চলাচল করতে হয়!
এদিকে দীর্ঘ কয়েক যুগ পার হলেও রাস্তার সংস্কার কাজ না করায় জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতা আর অবহেলাকে দায়ী করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বারবার আশ্বাস পেলেও কাজ হয়নি কখনো। রাস্তটির কাজের বাজেট পাস হয়ে গেলেও শুরু হয়নি এখনো কাজ।
এলাকার দোকানী লুবন মিয়া বলেন, বর্ষার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় শহর থেকে কোন কোম্পানির এসআর আসতে পারে না। কিংবা শহরে গিয়েও দোকানের খরচাপাতি আনার সুযোগসুবিধা না থাকায় বেচাবিক্রি একদম নাই বললেই চলে। দোকানে মাল নেই, ক্রেতার চাহিদানুযায়ী জিনিস দিতে পারছি না। এই রাস্তাটা আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই রাস্তার জন্য দয়া ভিক্ষা চাই।
গ্রামের সিএনজি অটোরিকশা চালক রিপন মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন পরে আমাদের গ্রামে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় আমরা আশাবাদী ছিলাম আমাদের রাস্তার দুঃখ দুর্দশা দুর হবে। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু-ই। নিজের ঘরবাড়ি থাকা সত্ত্বেও রাতে বাড়িতে নিয়ে গাড়ি রাখতে পারিনা। রাস্তার কারণে গাড়ি পিচের মুখে রেখে যেতে হয়।
আপার কাগাবলা ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল রকিব জানান, আমাদের গ্রামের একমাত্র রাস্তাটি পাকাকরণ কাজের জন্য চেয়ারম্যান সাহেবকে নিয়ে সকল কাগজাদির কাজ সম্পন্ন করে রেখেছি। অফিসিয়াল অনুমোদন হলেই রাস্তাটি পাকাকরণ কাজ শুরু হবে।
মন্তব্য করুন