নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হচ্ছেনা মসজিদের নির্মাণ কাজ, নানা জটিলতায় শুরু হয়নি আরও দুটির কাজ

March 5, 2024,

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম॥ সৌদি অর্থায়নে ও সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধিনে মৌলভীবাজার জেলা আইকনিক মডেল মসজিদ সহ জেলায় নির্মিত হচ্ছে ৮টি মডেল মসজিদ। মসজিদগুলোর নির্মাণ কাজে জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, বৃষ্টি সহ নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় দেখা দিয়েছে ধীর গতি। গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও ৮টি মসজিদের মধ্যে ৫টি মসজিদের সার্বিক অগ্রগতির চিত্র ৪০ শতাংশ বলে দাবি গণপূর্ত অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার। ইতিমধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ ৯৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পাঁচমাস দেড়িতে শুরু হওয়ায় জেলা আইকনিক মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ১২ শতাংশ, রাজনগর উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ অগ্রগতি ৬০ শতাংশ,বড়লেখা উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ অগ্রগতি ২৭ শতাংশ। কুলাউড়ায় মাত্র ১ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। সবমিলিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের মেয়াদ আর মাত্র তিনমাস বাকি থাকলেও জেলার ৮টি মসজিদের মধ্যে একটি মসজিদও হস্তান্তর করা হয়নি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মৌলভীবাজারের শহরতলীর ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কের জগন্নাথপুর এলাকায় ২০২৩ সালের জুনে চারতলা বিশিষ্ট আইকনিক জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের অন্তত ৫ মাস পর গত বছরের নভেম্বরে শুরু হয় এর নির্মাণ কাজ। মূলত হাওর এলাকা হওয়ায় বর্ষার জমে থাকা পানির কারণেই এখানে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মার্ক বিল্ডার্স কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো: আব্দুস সাত্তার মুঠোফোনে জানান, শ্রমিকরা পুরোদমে কাজ কারছে। আশা করছি আরও ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে শেষ হবে নির্মাণ কাজ।

ওই মসজিদটি দেশের ৮ জেলার মধ্যে একটি। এতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ১৭৪৩. ৬৮ লক্ষ টাকা। প্রায় ৪৭ শতাংশ জমির উপর ১১০ ফুট প্রশস্ত ও ১৭০ ফুট দৈর্ঘ্যর মসজিদটি ১৯ হাজার তিনশত স্কয়ার ফিট আয়তনের। মূল ভবনের এরিয়া আনুমানিক ১৪ হাজার ফিট। আর মসজিদটির মিনার হবে ৯০ ফুট উচ্চতার।

সরেজমিন দেখা যায়, নির্মাণাধীন প্রকল্পের ভিতরে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। কাজ করছেন প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ জন শ্রমিক। সেখানে বিশাল উচ্চতার টাওয়ার রিগ মেশিনের সাহায্যে ৬০ ফুট উচ্চতার একেকটা পিলার মাটির গভীরে ঢুকানো হচ্ছে। ৬ থেকে ৭ টন ওজনের প্রতিটি পিলার ঢুকাতে সময় লাগে অন্তত একঘন্টা। এমন বিশালাকারের মোট ২২৭ টি পিলার ঢুকানো হবে মাটির ৬৫টি ফুট গভীরে। নির্মাণ কাজের দ্বায়িত্বরত প্রকৌশলী  মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন জানান, রমজানের আগেই তারা পিলার ঢুকানো সহ ফাইলিং এর কাজ শেষ করতে চান। পাশাপাশি চলতি মার্চে শুরু হবে বেইজ ঢালাই ও বাউন্ডারী নির্মাণ কাজ। সব মিলিয়ে চলমান প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ১২ শতাংশ বলে দাবী এই কর্মকর্তার।

এ দিকে জেলার রাজনগর উপজেলায় মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের মনসুরনগর ইউনিয়নের কাটাজুড়ি নামক এলাকায় ৪৩ শতাংশ ভুমির উপর ১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যায়ে তিনতলা বিশিষ্ট উপজেলা মডেল মসজিদ এর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ। ইতিমধ্যে টাইলস, প্লাস্টার, থাই ও রঙের কাজ শুরু হয়েছে। সবকিছ ঠিকটাক থাকলে নির্ধারিত মেয়াদেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

কমলগঞ্জ উপজেলায়ও মডেল মসজিদ প্রকল্পের কাজ ৯৯ শতাংশ শেষ হয়েছে। তবে কাজ অসম্পূর্ণ থাকলেও শতভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া দেশের ২০০ মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনের সাথে ওই মসজিদটিও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে মসজিদটির ফাইনাল ফিনিশিং এর কাজ শেষ হলেই পুরোপুরি শেষ হবে পুরো প্রকল্পের কাজ। এতে ব্যায় হচ্ছে ১৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

সীমান্তবর্তী বড়লেখায়ও চলমান রয়েছে মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ। জানা যায়, কাজে ধীর গতির অভিযোগে বঙ্গ বিল্ডার্স নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ ২৭ শতাংশ শেষ হবার পর বাতিল হয়ে যায় কার্যাদেশ। পরবর্তীতে পূর্ণ দরপত্রের মাধ্যমে স্টার লাইট ও আলী নামক যৌথ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নতুন কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করে। একই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধিনে পাশের কুলাউড়া উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে। একই নকশায় ডিজাইন করা তিনতলা বিশিষ্ট এ দুটি মডেল নির্মাণে ব্যায় হচ্ছে ২৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বর্ষিজোড়া এলাকায় ১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে মসজিদ নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যেই দরপত্র অনুমোদনের জন্য ঢাকার গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি সূত্র। এর আগে ওই এলাকায় মসজিদ নির্মাণের জন্য ভুমি অধিগ্রহন সম্পন্ন হয়।

মৌলভীবাজার গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহকারি প্রকৌশলী রাহুল রায় জানান, বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ভুমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে জেলার অধিকাংশ মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। প্রকল্পের মেয়াদ কতদিন বাড়ানো হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, এটা ৬ মাসও হতে পারে আবার একবছরও হতে পারে। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালের জুনের আগেই পুরো জেলার ৮টি মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।

সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় চার দফায় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। শহরের হবিগঞ্জ সড়কে মনাই উল্লাহ উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে ভূমিও চূড়ান্ত করা হয়। পরে একাধিক স্থানে ভূমি দেখার পর নানাবিদ কারণে হয়নি প্রকল্পের কাজ। সর্বশেষ শহরের হবিগঞ্জ সড়কের ছকিনা পেট্রোল পাম্পের কাছে ৫০ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুই মাস আগে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই ৫০ শতাংশ ভুমির মধ্যে কিছু ভুমি সরকারি আর কিছু অংশ রয়েছে ব্যক্তি মালিকানাধীন।

জুড়ী উপজেলার জন্য উপজেলা সদর থেকে ২ কিলোমিটার দূরের দক্ষিণ ভবানিপুর এলাকায় সাড়ে ৪৮ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণের অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। ওই জায়গায় ৭ ধারার নোটিশ চলমান থাকায় এখনও ভূমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে শীঘ্রই এর সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ভুমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ।

সদ্য যোগদান করা ইসলামিক ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফারুক আলম জানান, দেশের অনেক জায়গায় মডেল মসজিদ হস্তান্তর হলেও এখানে এখন পর্যন্ত একটি মসজিদও হস্তান্তর করা হয়নি। তিনি বলেন, কাজের ধীর গতির কারণে এগুচ্ছেনা প্রকল্পের কাজ। এছাড়া ভুমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতাও অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com