নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা:
নিয়ামূল হক (এডভোকেট)॥ আমরা সবাই জানি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্টান। যাহা বাংলাদেশ সংবিধানের ১১৮ নং আনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে। আমরা অনেকে হয়ত বা নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও দায়িত্ব সম্পর্কে তথটা অবগত নেই, নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্টান সেহেতু উক্ত প্রতিষ্টান সম্পর্কে সকল নাগরিকের জ্ঞান অর্জনের লক্ষই সংক্ষিপ্তকারে আলোচনা করিলাম।
নির্বাচন কমিশনের গঠন: বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ০১ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক ০৪ জন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার নিয়ে গঠিত যাহারা কিনা মহামন্য রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত। একাধিক নির্বাচন কমিশনারের ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনার উক্ত কমিশনের সভাপতি হিসাবে কাজ করেন।
সকল নির্বাচন কমিশনারগনের ক্ষমতা কি সমান? বাংলাদেশ সংবিধানে একাধিক নির্বাচন কমিশনারের ক্ষেত্রে কাহার কি রুপ ক্ষমতা থাকবে বা প্রয়োগ করবেন সে বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ নেই, সেহেতু সকল নির্বাচন কমিশনারগন সমানভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারেন।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়: বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিব আইন ২০০৯ অনুসারে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি সতন্ত্র সচিবালয় এবং একজন নির্বাচন সচিব আছেন। তিনির কাজ হল নির্বাচন কমিশনের সকল সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়ন করা।
নির্বাচন কমিশনারগনের মেয়াদ: বাংলাদেশ সংবিধানের ১১৮ নং আনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ ০৫ বছর। নির্বাচন কমিশনারগনের দায়িত্ব গ্রহনের তারিখ হইতে ০৫ বছর। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন। সংসদ কর্তৃক প্রণীত যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনারদের কর্মের শর্তাবলী রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ হইবে:
নির্বাচন কমিশনারগনের অপসারন: বাংলাদেশ সংবিধানের ১১৮ নং আনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রীম কোর্টের বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোন নির্বাচন কমিশনারকে অপসারিত করার কোন আইন নেই।
নির্বাচন কমিশনারগনের পদত্যাগ: বাংলাদেশ সংবিধানের ১১৮ নং আনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশনারগন রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারেন।
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব: বাংলাদেশ সংবিধানের ১১৯ নং অনুচ্ছেদ মোতাবেক নির্বাচন কমিশন যে সকল দায়িত্ব পালন করেন তা হল রাষ্ট্রপতি পদের ও সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার-তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অনুরূপ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং নির্বাচন কমিশন এই সংবিধান ও আইনানুযায়ী
(ক) রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন অনুষ্ঠান;
(খ) সংসদ-সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠান;
(গ) সংসদে নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ; এবং
(ঘ) রাষ্ট্রপতির পদের এবং সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার-তালিকা প্রস্তুত করিবেন।
(২) উপরি-উক্ত দফাসমূহে নির্ধারিত দায়িত্বসমূহের অতিরিক্ত যেরূপ দায়িত্ব এই সংবিধান বা অন্য কোন আইনের দ্বারা নির্ধারিত হইবে, নির্বাচন কমিশন সেইরূপ দায়িত্ব পালন করিবেন।
নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা: বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮(৪)ও ১২৬ এবং রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্যা পিপল অর্ডার-১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ (৪) অনূযায়ী বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্টান। নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন মনে করিলে বাংলাদেশের নির্বাহী কর্তৃপক্ষ কে নির্বাচন সহযোগীতা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করিতে পারেন। তাহার মানে হল(পুলিশ, সেনাবাহিনী, বি.ডি.আর সহ প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বেরত সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষ)।
নির্বাচন কমিশনারগনের আচরন বিধি: বাংলাদেশ সংবিধানে এবং নির্বাচনী আইন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনারগনের কোন প্রকার আচরন বিধি নেই, যেমন তাহারা কি ধরনের বক্তব্য জনসম্মুখে প্রেস করতে পারবেন বা বলবেন তাহাদের কাজের জন্য তাহারা কাহার নিকট দায়বদ্ধ থাকবেন ইত্যাদি।
পরিসংহার: বাংলাদেশ সংবিধান অনুসারে ইহা সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি সম্পুর্ন স্বাধীন প্রতিষ্টান এবং নির্বাচন কমিশনারগন নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সম্পুর্ন ক্ষমতা রাখেন। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশনারগনকে তাহাদের কাজে বাধা দেবার মতো কোন আইনগত প্রষ্টিষ্টান বা ব্যাক্তি নেই যাহা কিনা বলা যায় নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য তাহারা অগাত ক্ষমতার ক্ষমতার মালিক। তাছাড়া ইহা বলা যেতে পারে নির্বাচন কমিশনারগন সুষ্ট নির্বাচন পরিচালনার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জনগনের সরকার প্রতিষ্টার মাধ্যমে ক্ষমতা পালাবদলের অভিভাবক। এমন একটি মহান দায়িত্বভার গ্রহন করে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনারগন সুষ্টভাবে ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচিত সরকারের নিকট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্পণ করবেন এটাই বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা।
মন্তব্য করুন