পরিবেশ সংরক্ষণে ও জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয়
মোহাম্মদ আবু তাহের॥ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতার অসাধারণ কয়েকটি চরণ দিয়েই শুরু করছি। কবি পরিবেশ প্রতিবেশ বিনষ্টকারী মানুষের কর্মকান্ডে ক্ষুদ্ধ হয়ে প্রকৃতির কাছে অনুযোগ করেছিলেন-‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো। তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ তুমি কি বেসেছ ভালো? কবির এই উচ্চারণে বহু বছর পর যখন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের পরিবেশ-প্রতিবেশ মানুষের বহুমুখী আচার অত্যাচারে বিপন্ন তখন দেখা যাচ্ছে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হলেও মানুষের অধিকারকে আচরণ ও অবহেলার কারণে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে তার চারপাশের পরিবেশ। সেই সাথে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। বাংলাদেশে পরিবেশের অবক্ষয় ও দূষণ একটি বড় সমস্যা। উপর্যুপরি বন্যা,খড়া ও ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ জলবায়ু ও আবহাওয়ার অস্থিরতা সহ অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যা এখন মানুষের নিত্যপাঠ। এসবের মূলে মানুষের কর্মকান্ডই প্রধানত দায়ী। যথেচ্ছা বৃক্ষ নিধন, অধিক জনসংখ্যা, দারিদ্র, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, জোড়ালো শব্দের হর্ণ, আবাসিক এলাকায় শিল্প কারখানা ও ইট ভাটার অবস্থান ইত্যাদি পরিবেশকে দূষিত করছে। পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় চীন বিশ্বকে পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। চীনের সরকার তিব্বত অঞ্চলেই একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ২০২০ সালে আরও বড় আকারের বাঁধ নির্মাণের ফলে চীনের এক পঞ্চমাংশ নদীতে পানির প্রবাহ কমে যাবে। অনেক নদীর পানি শুকিয়ে ছোট জলাশয়ে পরিণত হতে চলেছে। ৩৫০টি বড় হ্রদ একেবারে হারিয়ে গেছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব চীনের সীমান্ত ছাড়িয়ে অন্যান্য অঞ্চলেও পড়ছে। চীনের এসব প্রকল্পে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হিমালয় জুড়ে ব্যাপক হারে বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে উঁচু ভূমিগুলোতে অনেক প্রজাতির প্রাণীর বিলুপ্ত ঘটেছে। তিব্বতের মালভূমি এখন বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রার চেয়ে তিনগুণ বেশি উষ্ণ। এর পরিবেশগত প্রভাব এশিয়া ছাড়িয়ে অন্যান্য স্থানেও বাড়ছে। বাংলাদেশও পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যেই আছে। জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনীতি এখন হুমকির মুখে। দেশে এখনও বন্ধ হয়নি পলিথিনের ব্যবহার। নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিনের ব্যবহারের কারণে পরিবেশের মারাতœক ক্ষতি হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীনতার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু মানুষ নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন করে চলছে। পলিথিন ব্যবহার করে যেখানে সেখানে ফেলে দেয়া হচ্ছে। সেগুলো পানিবাহিত হয়ে ড্রেনে গিয়ে পড়ছে। ক্রমাগতভাবে ড্রেন বন্ধ হয়ে এক সময় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে মারাতœকভাবে। বায়ূদূষণে ফিটনেসবিহীন যানবাহন মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এসব নি¤œমানের গাড়ী আমাদের পরিবেশকে ধুলিময় করে তোলে যা মানবস্বাস্থের জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাছাড়া ফিটনেসবিহীন গাড়ীগুলো নিয়ন্ত্রণ করা দূরূহ হওয়ায় মারাতœক দুর্ঘটনায় প্রায় প্রতিদিনই মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে, নরওয়েভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনআইএলইউয়ের সহায়তায় সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ঢাকা শহরের বায়ুর গুণগত মানের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের শুধু গাড়ীর ধোঁয়া থেকে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ টন বস্তুকণা পিএম ২.৫ বাতাসে ছড়াচ্ছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার তথ্য মতে, ঢাকার বাতাসে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সালফার ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে এবং এর অধিকাংশ এসেছে নি¤œমানের যানবাহন থেকে। পরিবেশ সংরক্ষণে সরকারি বেসরকারি নানা উদ্যোগ আয়োজন রয়েছে। তবুও বাংলাদেশ বর্তমানে পরিবেশগত সূচকে ১৮০ দেশের মধ্যে সবচেয়ে তলানির দ্বিতীয় দেশ। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রতি প্রকাশিত এই সূচকে বাংলাদেশ ১৭৯ তম। পরিবেশ সুস্বাস্থ্য সূচকে এদেশের অবস্থান ১৭৮ রাষ্ট্রের মধ্যে ১৭৮ তম। অর্থাৎ সবচেয়ে তলানির দেশ। বায়ূমান সূচকে ১৮০ দেশের মধ্যে সবচেয়ে দ্বিতীয় খারাপ অবস্থা আমাদের বাংলাদেশের। অবস্থান ১৭৯ তম। খাবার পানি ও স্যানিটেশনে ১২৮ দেশের মধ্যে ১২৮তম। কৃষি, বায়ুদূষণ ভারি ধাতু, প্রতিবেশ, বন ও সবুজ আচ্ছাদন, জলবায়ু ও জ্বালানি খাতে ও আমাদের অবস্থান পেছনের কাতারের দেশ। পরিবেশবিনাসী কার্যক্রম এখনই বন্ধ না করলে ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়নে অভিষ্ঠ অর্জনেও আমাদের পিছিয়ে পড়া দেশের কাতারেই থাকতে হবে। সম্পদ ও প্রাচুর্যে পিছিয়ে থাকলেও বিশ্বের উন্নত দেশ সমূহকে পিছনে ফেলে শান্তিপ্রিয় মানুষের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ভুটান। সেই দেশের নাগরিকদের মধ্যে আইন মেনে চলার প্রবণতা খুব বেশী। সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যত জনবহুল জায়গাই হোক, সবখানেই নিরবতা একটা শান্তি শান্তি ভাব, কোথাও ধুলাবালি কিংবা ময়লা আবর্জনা জমে থাকতে দেখা যায় না। এই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ভুটানে কঠোর আইন রয়েছে। আইনের বাস্তবায়ন রয়েছে। ময়লা আবর্জনা রাস্তায় ফেললে মোটা অংকের জরিমানা গুণতে হয়। বিপন্ন পরিবেশের প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সংশি¬ষ্ট আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ১৯৭২ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে মানব পরিবেশ সংক্রান্ত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে পরিবেশের অবনতির জন্য প্রধান দুটি কারণকে চিহ্নিত করা হয়। কারণ দুটি হলো-১. উন্নত দেশ গুলোতে অপরিকল্পিত আর্থিক উন্নয়ন, অতিভোগ ও অপব্যয়, ২. উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে বিরাজমান দারিদ্র। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনিরো শহরে ধরিত্রী শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য শিল্পোন্নত দেশের অভিযোগ ও উন্নয়নশীল দেশের চরম দারিদ্রদের কথাই পুনরায় বলা হয়। এতে বোঝা যায়, পৃথিবীর আর্থিক ও সামাজিক ভারসাম্য পুনরূদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত বিপন্ন পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ কিন্তু এই যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর খনিজ জালানির ২৫ শতাংশ ব্যবহার করছে এবং বায়ূমন্ডলে মোট কার্বন ডাই-অক্সাইডের ২২ শতাংশ ছাড়ছে। এদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় ৭৮ শতাংশ এবং তারা মোট জ্বালানির মাত্র ১৮ শতাংশ ব্যবহার করছে। এসব তথ্য থেকে প্রতিয়মান হয় যে, উন্নয়নশীল দেশগুলো যেসব জটিল পরিবেশগত সমস্যার সম্মূখীন তার অধিকাংশের জন্য উন্নত দেশগুলোর অতিভোগই দায়ী। বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে, এতে করে বাড়বে বন্যা ও সাইক্লোন। ফলে মারাতœকভাবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দূষণের কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশের প্রতিবছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত অসুখ বিসুখে। কিন্তু সারা বিশ্বে এ ধরণের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কার্ন্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী পারালকার বলেছেন নগরাঞ্চলে দূষণ ও পরিবেশের অবনতি হওয়ার কারণে বাংলাদেশকে অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। এর ফলে দেশটির ভালো প্রবৃদ্ধিও এখন হুমকির মুখে। এজন্য বিশ্বব্যাংক জলাভূমি দখল ক্ষতিকর বর্জ্য ঠিকমত না ফেলা ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়েছে। ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ হোটেল সোনার গাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক আয়োজিত ইনহ্যানসিং অপরচুনিটি ফর ক্লিন এন্ড রিজিলিয়েন্ট গ্রোথ ইন আরবান বাংলাদেশ: কান্টি এনভায়রনমেন্টাল এ্যানালাইসিস ২০১৮ শীর্ষক লঞ্চিং এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে তিনটি ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে (১) পরিবেশগত অবনতির মূল্য (২) পরিচ্ছন্ন ও টেকসই শহর (৩) পরিচ্ছন্ন শিল্প প্রসারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এক্ষেত্রে নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। দেশে সবুজ অর্থায়ন, পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির প্রসার, বিপজ্জনক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নতকরণ এবং পরিবেশগত সুরক্ষার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির উপরও গুরুতারোপ করা হয়েছে। বেশ কয়েকবছর পূর্বে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রকাশিত বিশ্বের ৯০ জন পরিবেশ বিজ্ঞানী কর্তৃক প্রস্তুতকৃত এক বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকার কথা বলা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আবহাওয়া চরম আকার ধারণ করবে, তীব্রমাত্রার সাইক্লোন হবে। ফলে খাদ্য উৎপাদন জীবিকা ও অবকাঠামো হুমকির মুখে পড়বে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই বেশী ক্ষতির শিকার হবে। এতে আরও বলা হয়, ২০৫০ সালে সিডর এর মতো সাইক্লোনে তিন মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এতে প্রায় ৯৭ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়তে পারে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে গরীবরাই বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ফসল উৎপাদন কমে যেতে পারে, ফলে গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন বাড়তে পারে। এজন্যই এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে পরিবেশের উন্নয়নে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ অপরিহার্য। মালয়েশিয়া সরকারের উপদেষ্ঠা পর্ষদের সদস্য জাতিসংঘের সাবেক সহকারী মহাসচিব ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোমাকোয়ামি সুন্দরম বলেছেন বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর ৮০ কোটি মানুষ পুষ্ঠিকর খাদ্যের অভাবে রয়েছে। অপুষ্ঠির কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বৈশ্বিক জিডিপির ৫ শতাংশেরও বেশি। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অপুষ্ঠি ও ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা কমাতে হলে দুটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। এক, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে ও পুষ্ঠিকর খাবার সহজলভ্য করতে হবে। দুই, জলবায়ূ পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার কার্যকর পরিকল্পনা নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি ও পরিবেশের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে হলে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ঠা চালাতে হবে। বৃক্ষনিধন, প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট থেকে বিরত থাকতে হবে। কৃষি জমিতে রাসায়নিক সার কীটনাশক ব্যবহার কমাতে হবে। নদীনালা খালবিলে শিল্প ও পয়োবর্জ্য ফেলা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। শিল্পকারখানায় উৎপাদিত বর্জ্যগুলোকে উৎপাদনশীল উপকরণে পরিণত করতে হবে। পরিকল্পিত নগরায়ন করতে হবে। দেশের সর্বত্র বেশী করে বনজ, ফলজ বৃক্ষরাজি সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করে তুলতে হবে। বাংলাদেশে এক কোটি নব্বই লাখেরও বেশী শিশুর জীবন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সরাসরি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। ইউনিসেফের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ শিশু যাদের বসবাস বাংলাদেশের নদীতীরবর্তী এলাকায়। তাদের ক্ষেত্রে নদীভাঙ্গন একটি নিয়মিত ব্যাপার।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ণে সুপারিশ সমূহ-
(১) সব জাতীয় সম্পদের টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশ বান্ধব ব্যবহার বিষয়ে সমন্বিত সচেতনতার জন্য পরিবেশ সংক্রান্ত জ্ঞান ও আইন সম্পর্কে সচেতন করে তোলার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ।
(২) গণমাধ্যমকে সম্পৃক্ত করে এবং এনজিও গুলোর মাধ্যমে জনগনের সচেতনতা তৈরীর কাজ অব্যাহত রাখা।
(৩) পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ীদের বিরূদ্ধে ত্বরিত প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে পরিবেশ আদালত স্থাপন।
(৪) প্রতিটি বিভাগে একটি করে পরিবেশ আপীল আদালত স্থাপন।
(৫) পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালায় যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(৬) অবৈধ পলিথিন ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধে সারাদেশে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে অভিযান জোরদার করতে হবে।
বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যায় যখন বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত হবে বলে স্বপ্ন দেখি তখন আমরা আশাবাদী হই। যখন নোবেল বিজয়ী অমর্ত্যসেন বাংলাদেশের প্রশংসা করেন, যখন বলেন মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ ভালো করছে। যখন বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও বাংলাদেশের প্রশংসা করে, যখন আমরা দেখি আমাদের দেশের গড় আয়ু ভারতের চেয়ে ভালো, পাকিস্তানের চেয়ে অনেক উপরে তখন আমাদের আনন্দের সীমা থাকে না। আবার যখন সংবাদপত্রে দেখি ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে বসবাস অযোগ্য শহর, তখন স্বাভাবিকভাবেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমাদের দেশের জন্য দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
রবীন্দ্রনাথের আরেকটি কবিতার কয়েকটি লাইন দিয়ে লেখাটি শেষ করছি-
বীরের এ রক্ত¯্রােত মাতার এ অশ্রুধারা
এর যত মূল্য সেকি ধরার ধূলায় হবে হারা?
স্বর্গ কি হবেনা কেনা
বিশ্বের ভান্ডারী শুধিবেনা এতো ঋণ?
রাত্রীর তপস্যা সেকি আনিবে না দিন।
লেখক:- ব্যাংকার, গবেষক ও কলামিস্ট
মন্তব্য করুন