পর্যটক শূন্য মৌলভীবাজার, ক্ষতির মুখে এ শিল্প
স্টাফ রিপোর্টার : প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা ও চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজারে পর্যটন শিল্প নানান প্রতিকুলতায় মাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় পর্যটক শুন্য হয়ে পড়েছে জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্থানগুলো। চলছে দর্শনীয় স্থানগুলোতে সুনসান নিরবতা। পাশাপাশি খালি পড়ে আছে রিসোট,কটেজ ও আবাসিক হোটেল গুলো। এ অবস্থা বিরাজ করছে চলতি বছরের মে মাসে শুরু হওয়া বন্যা থেকে। বন্যার রেশ কাটতে না কাটতে শিক্ষার্থীদের শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কারফিউ বাড়তি যোগ হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক ছুটি সহ ছাটাই করছেন।
মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে পযটকদের আকৃষ্ট করা উঁচুউঁচু টিলা বেষ্টিত চা বাগান, আঁকাবাঁকা পাহাড়ী মেঠোপথ, ১২৫০ হেক্টর আয়তনের জীববৈচিত্র ও বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ অরণ্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, ভারত সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, কমলগঞ্জে নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক ও রোমাঞ্চে ভরা হামহাম জলপ্রপাত, শ্রীমঙ্গলের মহান স্বাধীনতার স্মৃতি বিজরিত বদ্ধভুমি ও বাইক্কাবিল, বড়লেখা উপজেলায় মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, সদর উপজেলায় বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, মনু ব্যারেজ, খোজার মসজিদ, কুলাউড়ার গগনটিলা, কাদিপুরের শিব বাড়ি মন্দির, রাজনগরে সাকেরা চা বাগান লেক ও কমলা রাণীর দিঘি, শ্রীমঙ্গলে রাজঘাট চা বাগান লেকসহ আরও বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। এছাড়া এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি হাকালুকি, কাওয়াদিঘি, হাইল হাওরসহ ছোট-বড় মিলিয়ে বেশ কয়েকটি দৃষ্টি নন্দন হাওর।
জেলার বিভিন্ন রিসোর্ট, কটেজ ও হোটেল মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়। গেল ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে পর্যটক আগমের ভরা মৌসুম ছিল। ঠিক তখনই দেখা দেয় বন্যা। বন্যার রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারো দেশ জুড়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কোটা আন্দোলনের মুখে পড়ে এই জেলার পর্যটন শিল্প। এতে করে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে এই জেলার পর্যটন। কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে কিছু দুস্কৃতিকারী কর্তৃক সংগঠিত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ভ্রমন পিপাসুরা অনেকটা আতংকের মধ্যে রয়েছেন। যে কারনে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত মৌলভীবাজার জেলা এখন পর্যটক শূন্য রয়েছে। এ অবস্থায় চরম লোকসানে পড়েছেন এ শিল্পের সাথে সম্পৃক্তরা।
মৌলভীবাজার ট্যুরগাইড এসোসিয়েশনের সদস্য তাপস দাশ জানান, কাজ নেই এ জেলার প্রায় অর্ধশত ট্যুরগাইডদের। লোকসানে দূরপাল্লার পরিবহন ব্যবসায়ীরাও। এ অবস্থায় কর্মচারী ও স্টাফদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল, ম্যান্টেনেস খরচ সামাল দেয়ার পাশাপাশি সমপরিমান ভ্যাটও দিতে হয়। সরকারের দৃষ্টি আর্কশন করেন এ শিল্পের সংশ্লিষ্টরা।
জেলা পর্যটন সেবা সংস্থার সদস্য সচিব, শ্রীমঙ্গলস্থ নির্সগ নিরব ও চামুং রেস্টুরেন্টে এন্ড ইকো ক্যাফের সত্তাধিকারী মো: শামসুল হক বলেন, গেল মে মাস থেকেই মূলত আমাদের ব্যবসায় লোকসান শুরু হয়। সিলেটে যখন বন্যা শুরু হল পর্যটকরা এ অঞ্চলে আর আসতে চায়নি। এরপর মৌলভীবাজারে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। এরপর গরম ও বৈরী আবহাওয়া। আর এখন দেশে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ও কারফিউর কারণে আমাদের ব্যবসার নাজেহাল অবস্থা। কিভাবে এই ক্ষতি পোষিয়ে উঠব তা ভেবে পাচ্ছিনা। কিছু কর্মচারী ছাটাই করছেন ও বাধ্যতামূলক কিছু অর্ধেক বেতনে ছুটি দেয়া হয়েছে।
পর্যটন সেবা সংস্থার সাবেক সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ জানান, মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় ১৫০টি রিসোট,কটেজ ও আবাসিক হোটেল রয়েছে। ১৫ জুলাই থেকে কোন বুকিং মিলছেনা। ভর্তুকি দিয়ে রিসোর্ট চালাতে হচ্ছে। সিলেট বিভাগে এই বছর ৩ দফার বন্যায় পর্যটন শিল্পের ক্ষতি শুরু হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে জেলার সবক’টি কটেজ, হোটেল, রির্সোটে এখন পর্যটক নেই। এভাবে ভর্তুকি দিয়ে রিসোর্ট চালাতে থাকলে পর্যটন শিল্পে ধস নেমে আসবে। বিশাল আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে না পারলে আমরা পথে বসে যাবো। কাজেই এ পর্যটন শিল্পের লোকসান পুষিয়ে ওঠতে আমরা সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনার দাবি করেন।
শ্রীমঙ্গলস্থ পাঁচ তারকা মানের হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান এন্ড টি রিসোর্ট এর জেনারেল ম্যানেজার আরমান খান জানান দেশের চলমান প্রেক্ষাপটে তাদের ব্যবসার খুবই মন্দা দশা। গেল প্রায় ১৫-২০ দিন থেকে আশানুরুপ বুকিং নেই বললেই চলে। এই লোকসান সামলিয়ে উঠা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গেল ঈদুল আযহার পর থেকে পর্যটকের সংখ্যা একে বারে কমে গেছে। আগে প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫’শ পর্যটক আসতেন। বন্যা ও দেশের চলমান ছাত্র আন্দোল ও কাফিউর পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন পর্যটক আসেন। যারা আসছেন তারা স্থানীয় পর্যটক।
একের পর এক বিশাল ক্ষতির মুখ থেকে পরিত্রানের জন্য পর্যটন মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতা চেয়েছেন মৌলভীবাজারের পর্যটন সংশ্লিটরা।
মন্তব্য করুন