“পাঁচ সেপ্টেম্বর, উনিশ সাল আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ভাষা সৈনিক মরহুম অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম, সাইফুর রহমান দশম এর মৃত্যো বার্ষিকী স্মৃতিতে অম্লানঃ স্মরন ॥
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ পাঁচই সেপ্টেম্বর দুই হাজার উনিশ সাল, ভাষা সৈনিক আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশের দীর্ঘ মেয়াদী সফল অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী জন নেতা এম.সাইফুর রহমান এর দশম মৃত্যো বার্ষিকী। দুই হাজার নয় সালের পাঁচই সেপ্টেম্বর নিজ বাড়ি বাহার মর্দান থেকে সড়ক পথে ঢাকা যাওয়ার পথে ব্রাহ্মনবাড়িয়া এলাকায় তাকে বহন কারী টয়োটা আলফার্ড গাড়িটি মারাত্মক সড়ক দূঘটনায় পতিত হয়। গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাঁকে নিকটস্থ ব্রাহ্মন বাড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষনা করেন। তাঁর এই বেদনা দায়ক মৃত্যো অকাল না হলেও আকস্মিক ছিল। টেলিভিশনের ব্রেকিং নিউজে তাঁর আকস্মিক মৃত্যো সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী শোকের ছায়া নেমে আসে। ঢাকা-চট্রগ্রাম-সিলেট মৌলভীবারে আকুল কান্নায় ব্যাকুল হন তাঁর স্বজন, ভক্তাকাংখী শুভানুধ্যায়ীগণ। ঢাকা, সিলেট, মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিশাল জানাজার নামাজ শেষে মরহুমের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলাধীন ঐতিহ্যবাহী বাহার মর্দান গ্রামে তাঁদের পারিবারিক গোরস্থানে তাঁর প্রিয় জীবন সঙ্গিনী বেগম দুররে সামাদ রহমানের কবরের পাশে তাঁকে চীর শয়ানে শায়িত করা হয়। দেখতে দেখতে এক দশক হয়ে গেল। এই ক’বছরে প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী মরহুমের কবরের মাটি শুকিয়ে গেছে, গজিয়েছে অনেক নাম না জানা ঘাস, ফুটেছে অনেক ঘাসফুল। ফুল আর ঘাসের গালিছা তাঁর কবর গাহে জড়িয়ে আছে অনেক মায়ায়-মমতায়। হয়ত তাঁর কবর গাহ কে বুক আগলে রক্ষা করছে রোদ-ঝড়-বৃষ্টি-বাদল থেকে। পাঁচ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যো দিবস এলে বাদ ফজর থেকে বৃহত্তর সিলেটের বিএনপি ও অঙ্গ সংঠন সমূহের নেতা, কর্মি ও আত্মীয় স্বজনের জিয়ারত, রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল শেষে ফুলে ফুলে ভটে উঠে তাঁর কবর। একদশক পেরিয়ে গেলে ও জননেতা এম.সাইফুর রহমান এখন ও স্মৃতিতে অম্লান। তিনি আছেন অন্তরে, অনুভবে। বৃটিশ ভারতের শেষ প্রান্তে ১৯৩০ সারের ৫ইং অক্টোবর মৌলভীবাজার সদর উপজেলাধীন ঐতিহ্যবাহী বাহারমর্দান গ্রামে এক শিক্ষিত সম্ভান্ত স্বচ্ছল মুসলিম পরিবারে এম.সাইফুর রহমানের জন্ম। শিক্ষাবিদ পিতা আব্দুল বাছির এবং মাতা তালেবুন্নেছার প্রথম সন্তান সাইফুর রহমান বাল্যকাল থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। মাত্র ছয় বৎসর বয়সে তাঁর পিতা আব্দুল বাছির আকস্মিক ভাবে ওলাউটায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তিকাল করলে মাতা তালেবুন্নেছা তাঁর কনিষ্ট দুই ভ্রাতা সিরাজুল ইসলাম (মরহুম বিচারপতি) এবং ফয়জুর রহমান-কে নিয়ে কিং কর্তব্য বিমুখ হলেও মুসড়ে পড়েন নি, দিশাহারা হন নি। তিনটি অবুঝ এতিম শিশুকে নিয়ে কঠিন হস্তে সংসারের হাল ধরেন গুনবতী রমনী- ধৈর্য্যশিলা নারী বেগম তালেবুন্নেছা। এম.সাইফুর রহমানের চাচা মোঃ সফি
পিতৃ¯েœহে নিজের সন্তানের মত ভ্রাতপুত্রগণকে মানুষ করে তুলার দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। একজন আদর্শ চাচা-একজন আদর্শ অভিভাবক হিসাবে আজীবন তিনি সে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। মেধাবী ছাত্র এম.সাইফুর রহমান নিজ গ্রামের পাঠশালা, জগৎসী জি.কে. হাই স্কুল মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, এম.এম. কলেজ, সিলেটে অধ্যায়ন শেষে উচ্চ শিক্ষার জন্য ঐতিহ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভত্তি হন। কোন ছাত্র সংগঠনের সক্রিয় কর্মি নেতা না হলেও তাঁর রাজনীতি বিমুখতা ছিল না, বরং বলা চলে তিনি ছিলেন অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ছাত্রাবস্থায় ভাষা আন্দোলন বেগবান হলে, মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে
এম.সাইফুর রহমান ভাষা সৈনিক হিসাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন, পুলিশ কর্তৃক গেপ্তার হন। নীতিবান ও প্রতিবাদী কন্ঠ এম.সাইফুর রহমান সরকার ও পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন নি, কারা যাতনা ভোগ করেন, আইনী লড়াই ও আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। পঞ্চাশের দশকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিলাত যাত্রীদের সংখ্যা ছিল খুব কম, হাতে গুনা, সে সময় বিলেতে অধিক আয়-রোজগারের আশায় অনেকেই বয় ভাউচার সহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বিলেত যেতেন। কিন্তু এম.সাইফুর রহমান আয় রাজগার নয় উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য লন্ডনগমন করতঃ অধ্যয়ন অনুশীলন-কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ৫৯ সালে চাটার্ড একাউন্টেসীতে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে, মা চাচা, আত্মীয় স্বজনের মুখ উজ্জল করতঃ স্বপ্ন পূরণ করেন। সফল
শিক্ষাজীবনের পরি সমাপ্তি ঘটনি। ৫৯ সালে বৃটিশ অক্সিজেন লিঃ এর পাকিস্তান সাব সিডিয়ারীতে সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতন করাচীর অভিজাত এলাকা ক্লিবডনে বাংলো বাড়ি দামি গাড়ির সুযোগ সুবিধা সমেত উচ্চ পদে যোগ দিয়ে বর্নাঢ্য, কর্ম জীবনের শুভ সূচনা ঘটান। প্রসঙ্গঁত উল্লেখ্য তখন পাকিস্তানের লোভনীয় চাকরি সি.এস.পি. অফিসার এর প্রারম্ভিক বেতন ছিল কয়েক শত টাকা মাত্র। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বহুজাতিক কোম্পানীর উচ্চ পদে আকর্ষনীয় বেতনের চাকরি এবং অভিজাত এলাকায় বসবাস করলেও পাকিস্তানী সমাজ ও রাজনীতি এবং পাক শাসক গোষ্ঠীর বাঙ্গালিদের প্রতি বৈষম্য ও বিমাতা সূলভ আচরনে বেদনা হত হন এম.সাইফুর রহমান। এ সময় জাষ্টিস ইব্রাহিমের
সাথে তাঁর সাক্ষাত ও মতবিনিময় তাঁর মনোজগতে পরিবর্তনন আনয়ন করে। ১৯৬০ সালে পাকিস্তানে অবস্থান কালে সুপাত্র এম.সাইফুর রহমান বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন চট্রগ্রামের এক অভিজাত খান্দানী পরিবারের কৃতি কন্যা বেগম দুররের সামাদ রহমানের সাথে। সাইফুর দুররে সামাদ দম্পতির আল্লাহর দান চার সন্তান, এক কন্যা ও তিন পুত্র সন্তান। তাদের প্রথম পুত্র এম.নাসের রহমান পিতার পদাংক অনুস্মরণ করে বিএনপি’তে যোগদান করে জেলা সদরের সাংসদ হন এখনও জেলা বিএনপি’র সভাপতির দায়িত্ব পালনরত। একমাত্র কন্যা সাইফা রহমান চট্রগ্রামে উচ্চ ঘরে ভালো বরে পাত্রস্থ। অপর দুই সন্তান কাওসার রহমান টিটু এবং শফিউর রহমান বাবু উচ্চ শিক্ষিত ও কর্ম জীবনে সু-প্রতিষ্ঠিত। রাজনীতিবিদ না হলেও রাজনীতি সচেতন এম.সাইফুর রহমান বৃটিশ অক্সিজেনের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তানে প্রবাস জীবনের অবসান ঘটান। প্রদেশিক রাজধানী ঢাকায় এসে তার দুইজন সহ কর্মীকে নিয়ে (রেজাউর রহমান ও তাসফিন হক) গঠন করেন সি-এ-ফার্ম-রহমান-রহমান হক এন্ড কোম্পানী- আর- আর-এইচ। তাঁর পেশাদারিত্ব প্রজ্ঞা ও পান্ডিত্য কঠোর শ্রম ও নিয়মানুবর্র্তিতার কারনে এই কোম্পানী একটি শীর্ষ স্থানীয় কোম্পানী হিসাাবে খ্যাত হয়, স্বীকৃতি লাভ করে, তাদেরকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। পচাত্তোরের পনেরোই আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের একাংশের মৌনং সম্মতিতে কতেক জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা এক কথিত আংশিক সেনা বিদ্রোহের মাধ্যমে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মম ভাবে হত্যা করে, রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসিন হন। তার ভাষায় পনেরো আগষ্টের সারথী হয়ে আসেন বঙ্গবন্ধুর আজীবনের বন্ধু খুনী খন্দকার মুশতাক আহমদ। অতঃপর তেছরা সেপ্টেম্বর জেল খানায় চার জাতীয় নেতাকে হত্যা, সতনবেম্বরের সিপাহী বিপ্লব ক্যু-কাউন্টার ক্যুতে দেশীয় সমাজ ও রাজনীতি টালমাটাল রুপ ধারন করে। এমনি অস্থিরতা, বিশৃংখলা ও অশান্তির মাঝে স্বাধীনতার মহান ঘোষক বীর সিপাহ সালার জেড ফোর্স এর অধিনায়ক জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়ে সেনা বাহিনীতে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনেন, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য দেশের জ্ঞানী গুনী জনকে নিয়ে একটি টেলেন্টেড মন্ত্রিসভা গঠন করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আহ্বানে দেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্টা, আইনের শাসন কায়েম ও দেশীয় উন্নয়নের লক্ষ্যে ভাষা সৈনিক এম.সাইফুর রহমান জাগদল প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং প্রেসিডেন্ট এর মন্ত্রী সভায় বানিজ্য উপদেষ্টা হিসাবে যোগ দিয়ে পরে অর্থমন্ত্রীর গুরু দায়িত্ব পালন করেন। ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক নেতাদের মন্ত্রী সভায় ইন-আউট, দপ্তর রদবদল এর রেওয়াজ আছে কিন্তু এম.সাইফুর রহমান এর ব্যাপারে ছিল তার ব্যতিক্রম। তিনি প্রেসিডেন্ট জাস্টিস সাত্তার প্রেসিডেন্ট জিয়া এবং বেগম খালেদা জিয়া তথা জাতীয়তা বাদী সকল সরকারামলে তিনি মন্ত্রী ছিলেন তার দপ্তর ও পরিবর্তন হয়নি, বরং ২০০১ সালে অর্থের সঙ্গে তাকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এর দায়িত্বও দেয়া হয়ে ছিল। দলের প্রতিষ্টাকারীন প্রভাবশারী নেতা হিসাবে স্থায়ী কমিটির চীরস্থায়ী সদস্য ছিলেন তিনি। বায়ান্নের ভাসা আন্দোলনে কারা বরণ, বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০০৫ সালে একুশের পদকে ভূষিত হন। নব্বইর দশকে ৯৪ সালে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসাবে বিশ্বব্যাংকের সভাপতি এবং আই.এম.এফ.এর বোর্ড অব গর্ভনস এর চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হয়ে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ ও ভাব মুর্তি বৃদ্ধি করেছিলেন। বিশ্ব ব্যাংক এর সভাপতি হিসাবে নিজ নির্বাচনী এলাকা মৌলভীবাজার প্রথম এলে তাঁকে যে সম্মান ও নাগরিক সিম্ভর্ধনা দেয়া হয়েছিল সম্ভর্ধনার ইতিহাসে তা ছিল নজীর বিহিন। বিরল। অর্থমন্ত্রী হিসাববিজ্ঞানী গরিবের অর্থনীতিবিদ এম.সাইফুর রহমান ছিলেন একজন ব্যতিক্রমশীল ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব। তার প্রজ্ঞা ও পান্ডিত্য শিক্ষা ও জ্ঞান, মেধা ও মনন দিয়ে এদেশের অর্থনীতিকে একটি পর্য্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ৮২ সালে সামরীক স্বৈরশাসক লেঃ জেনারেল হোসেইন মোহাম্মদ এর্শাদ বন্দুকের মুখে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ কায়েম করে বৃদ্ধ বিচারপতি আব্দুস সাত্তার এর সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে অর্থমন্ত্রী এম.সাইফুর রহমানকে কারাবদ্ধ করে, মন্ত্রীত্ব গ্রহনের লোভ দেখান। সামরীক স্বৈরাচারের সঙ্গে ক্ষমতার রুটি মাখনের আশায় অনেকেই নির্লজ্জের মত হাত মেলালেও প্রেসিডেন্ট জিয়ার ঘনিষ্ট ও বিশ্বস্থ সহচর এম.সাইফুর রহমান এর্শাদের ফাদে পা দেন নি মন্ত্রীত্বেও প্রস্তাব ঘৃনায় প্রত্যাখ্যান করতঃ কারা যাতনা ভোগ করেছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির নাড়ি-নক্ষত্র ছিল তার নখ দর্পনে। মন্ত্রনালয়ের পিয়ন থেকে সচিব পর্য্যন্ত তার নজরে থাকতেন। তাঁর ভয়ে অনেকেই তটস্থ থাকতেন। কাজে ফাকি কিংবা অতি চালাকির কোন উপায় ছিল না, তিনি ছিলেন একজন মিঃ ক্লিন। তাঁকে বলা হত বাজেট যাদুগর, বিনিয়োগের বর পুত্র। তাঁর সময়ে মুদ্রাস্ফিতি ছিলনা, মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রনে ছিল, শেয়ার বাজার চাঙ্গা ছিল। খেলাপি কাল চারের জোয়ার ছিল না, ব্যাংকিং সেক্টরে শৃংখলা ছিল, এখনকার মত মুদ্রাপাচার, হুন্ডির গণ জোয়ার ছিল না। আমার মত এক অভাজন নালায়েককে আমার অজান্তে একটি রাস্টায়াত্ব বানিজ্যিক ব্যাংক এর সরকার মনোনীত পরিচালক বানিয়ে বলেছিলেন, ভালো বলতে পার, বেশ লিখতেও পারো। তোমার কাজ হল চেক হুন্ডি ইউজ ব্যাংকিং চ্যেনেল বলা লিখা, একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলা। তার নির্দেশে আমি জোট সরকারের পাঁচ বছর তাই করেছি বলেছি, প্রথম আড়াই বছর পর আমার ব্যাংক আমাকে নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান বানিয়ে ছিলেন। আমি পাঁচ বছর মাসিক চার হাজার টাকা ভাতা নিয়েছি, ঋণ দেয়া এবং সুদ মাফে কারো কাছ থেকে এক পয়সাও কমিশন খাইনি, এখন দেখা যায় ব্যাংক এর পিয়ন দারোয়ান, সোনালী ব্যাংক এর একজন প্রাইমারী স্কুলের মিষ্ট্রেস পরিচালক কোটি টাকা কামান কমিশন খান। এম.সাইফুর রহমান আমাকে পুত্রবৎ ¯েœহ মমতা ও বিস্বাস করে আমাকে আমার জেলায় পাবলিক প্রসিকিউটার বানিয়ে ছিলেন দৈনিক আড়াই শত টাকা বেতনের চাকুরি করেছি, কোন সাইলেন্স ফি নেই নি, এমন মায়ের এমন কোন প্রত্র জন্ম এখন ও হয়নি যিনি আমাকে এমন অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারেন। যদিও জেলার পি.পি. শীপ.এ লাশ বানিজ্য ও লেনদেন করে অনেকেই কোটিপতি হয়েছেন-হচ্ছেন। এম.সাইফুর রহমান আমাকে বিশ্বাস করে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমি শতকরা একশত ভাগ সততা ও বিশ্বস্থতার সাথে সে দায়িত্ব পালন করেছি। তাঁকে কাছে থেকে দেখেছি তিনি একজন সাচ্চা জাতীয়তাবাদী, নিখাদ দেশ প্রেমিক সহজ সরল সাদামনের মানুষ ছিলেন। দেশীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে তিনি ট্যেক্স আদায়ে ভ্যেলু এ্যাড্ড ট্র্যেক্স ভ্যেট সিস্টেম চালু করে ছিলেন। ভ্যেট সিস্টেম চালুতে প্রথমত তিনি দারুন সমালোচিত হয়েছেন, ভ্যেট মিনিষ্টার হিসাবে অভিহিত হয়েছেন, এখন দেখা যাচ্ছে বাজেটের এক বিশাল পরিমান অংক ভ্যেট বাবত আদায় হয়ে থাকে। দেশীয় অর্থনীতির বর্তমান বিশৃংখলার মাঝে অনেকেই বলেন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সাহেবের আমলে এমন ছিল না, তিনি থাকলে এমন হত না। বাংলা সাহিত্যের কাল জয়ী প্রতিভা বিশ্ব কবি রবীন্ত্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভূবনে মানবের মাঝে আমি বাঁচি বারে চাই। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই বেঁচে থাকার আকাংখা শারীরিক ছিল না, ছিল কাব্যিক-কার্য্যকি। কবি গুরু এখনও বেঁচে আছেন তাঁর কাজের মাঝে, কবিতার ভূবনে। কর্মবীর এম.সাইফুর রহমান ও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন তার কাজের মাঝে, তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য গঠিত হয়েছে সাইফুর রহমান স্মৃতি সংসদ। বৃহত্তর সিলেটের জ্ঞানী গুনীজন নিয়ে গঠিত এই সংসদ স্মারক পত্র প্রকাশ ও অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করে থাকেন। কর্মবীর এম.সাইফুর রহমানের দশম মৃত্যো বাষিকীতে তাঁর উজ্জল স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি, তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহ তাঁর বেহেশত নসীব করুন এই মোনাজাত করছি।
[ লেখক একটি রাষ্ট্রায়াত্ব বানিজ্যিক ব্যাংক এর সাবেক পরিচালক এবং চেয়ারম্যান নির্বাহী কমিটি। সিনিয়র এডভোকেট হাইকোর্ট। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব]
মন্তব্য করুন