পিঠার দোকানকে ঘিরে বাড়ছে জটলা
ইমাদ উদ দীন॥ গাছের পাতায় ঘরের চালায় টুপ টাপ কুয়াশা বৃষ্টি। চার পাশের প্রাকৃতিক পরিবেশের এমন অবয়বই জানান দিচ্ছে আসছে শীত। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে এখন আর পঞ্জিকার পাতা ছুঁয়ে ঋতুর পরিবর্তন হয়না। প্রকৃতির সাথে মানুষের দানবীয় আচরনে তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে মানুষের ওপরেই। প্রকৃতির সাথে মানুষের নিষ্টুর আচরনে এখনকার প্রকৃতিও অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তাই শীত আসতে যেমন বিলম্ব হচ্ছে তেমনি বিদায় নিতে চাচ্চেনা গরমকালও। গেল ক’দিন থেকে গ্রামের হাঠ বাজারে ওঠতে শুরু করেছে নানা স্বাদ ও জাতের আগাম শীতকালীন শাক সবজি। দাম চওড়া হলেও কুয়াশার শিশির লাগানো এসকল শাক সবজি জানান দিচ্ছে আসছে হাড় কাপাঁনো শীত। শীত মৌসুমে নানা জাত ও স্বাদের পিঠা পুলি আর মন্ডা মিঠাই শীতের কদর বাড়ায় নি:স্বংকুচে। শীতের সকালে কিংবা রাতে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে চলে উষ্ণতার আয়োজন । উষ্ণতার এআয়োজনের পচন্দের তালিকায় র্শীষে শীতের রকমারী পিঠা। শীতকে বরণ করতে আবহমান কাল থেকেই রেওয়াজে পরিনত হয়েছে গ্রামের ঘরে ঘরে পিঠা পুলির উৎসব। গ্রামের এই রেওয়াজী উৎসবকে বাচাঁতে শহরেও বসে মৌসুমি পিঠার দোকান।এসব দোকান গুলোতে হরেক রকমের পিঠা না পাওয়া গেলেও মিলে শীত মৌসুমের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও স্বাদের পিঠা ভাপা ও চিতল পিঠা। স্বাদ ও সাধ্যের সমন্বয় থাকায় সকলেই স্বাদ নিতে চান এসকল পিঠার। সকলের চাহিদা থাকায় ছোট দোকানীরা এসময় ব্যাস্ত হয়ে ওঠেন চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে। তৈরী হচ্ছে পিঠা। পাশে বসেই ক্রেতারা গরম গরম স্বাদ নেন পিঠার। পড়ন্ত বিকেল থেকে মধ্য রাত জমজমাট পিঠার ব্যবসা। পিঠার দোকানের চারপাশ ঘীরে চলে পিঠা খাওয়ার উৎসব। গতকাল মৌলভীবাজারের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা কুসুমবাগ পয়েন্টের পশ্চিমদিকে রাস্তা পাশে নতুন পিঠার দোকান খুলেছেন দু’জন মৌসুমি ব্যবসায়ী। কথা হল পিঠা বিক্রেতা ও কয়েকজন ক্রেতার সাথে।
পিঠা তৈরীতে ব্যস্ত বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন কাজের ফাঁকে ফাঁকে জানালেন তার এই মৌসুমি ব্যবসার আদ্যো পান্ত। জানালেন এ ব্যবসাই তার সারা বছরের পরিবারের রুটি রুজির মূল ভরসা। যদিও এটা মৌসুমি ব্যাবসা তারপরও এটাই তার সব। তার পরিবারের মোট সদস্য ৬জন। এই আয় দিয়েই চলেন তারা। মূল বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় হলেও দীর্ঘ দিন থেকে স্বপরিবারে থাকেন মৌলভীবাজার শহরের পাশ্ববর্তী একটি গ্রামে। ১ছেলে ১ মেয়ে, স্ত্রী আর বৃদ্ধ মা বাবা নিয়েই তার ছোট সংসার। চার থেকে পাঁচ বছর হল তার এই ব্যবসার। প্রতিদিন বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত একটানা চলে তার এ দোকান। প্রতিপিছ পিঠা বিক্রি করেন পাঁচ টাকা। বিক্রিহয়ও ভালো। জানালেন প্রদিনই তিনি ১২শ থেকে ১৫শ টাকার পিঠা বিক্রি করেন। নারিকেল, গুড়, আর চালের গুড়া এই হল মুলধন। কমপুঁিজতে লাভ বেশি কিন্তু পরিশ্রমটা শক্ত।
তিনি জানালেন এখনো পুরো পুরি শীত মৌসুম আসেনী তার পরও তিনি আগাম এব্যবসায় নেমেছেন। আজ থেকে প্রায় ১০ দিন আগেই শুরু করেছেন এ ব্যবসা। চলছে ভালো হাঁসি মুখে জানালেন লোকজন শীতের পিঠার আগাম স্বাদ নিতে ভীড় জমাচ্ছেন তার দোকানে। বাস্তবে দেখা গেল তাই।ক্রেতা ব্যবসায়ী সাম দেব,কলেজ ছাত্র খছরু আহমদ, ইলিয়াছ আহমদ,তানিম ও আবু হানিফ জানালেন শীত আসছে নিতে হবে ভাপা পিঠার স্বাদ। শীতের পিটার আগাম স্বাদ নিতে তারা ওখানে এসেছেন। শহরের কসুমভাগ পয়েন্ট,চৌমোহনা ও প্রেসক্লাব মোড় (এলাকার রাস্তার পাশে) ছাড়া এখনো শহরে তেমন পিঠার দোকান বসেনী। ওইসকল স্থানের পিঠা বিক্রেতারা জানালেন আর সপ্তাহদিন গেলে শহরের সবস্থানেই বসবে এসকল মৌসুমি পিঠার দোকান। গরম গরম শীতের পিঠা সন্ধ্যায় চায়ের সাথে বেশ মানায়।তাই স্বাদে ভিন্নতা আনতে বাসা বাড়িতেও নেন গৃহিণীরা। তারা জানালেন এসব দোকাননীরাই শহরেও ধরে রাখেন গ্রামীন সেই শেকড়ের সংস্কৃতি ।
মন্তব্য করুন