পুণ্যে ভরা মওসুম মাহে রমজান
এহসান বিন মুজাহির॥ আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযম ও আত্মোৎসর্গের মাস পবিত্র রমজান। মহান আল্লাহতায়ালা অত্যন্ত দয়া পরবশ হয়ে আমাদের দান করেছেন পুণ্যে ভরা মওসুম, অসীম রহমত ও সীমাহীন বরকতপূর্ণ পবিত্র রমজানুল মোবারক। আল্লাহতায়ালার নিয়ম অনুযায়ী কোনো মাসকে অন্য মাসের উপর কোনো দিবসকে অন্য দিবসের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আর পবিত্র রমজানুল মোবারক হলো উৎকৃষ্ট মাসের মধ্যে অন্যতম একটি মাস। মহান আল্লাহতায়ালা কোরআন কারীমে এরশাদ করেন-‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে করে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো’। (সূরা বাকারা : ১৮৩)। আল্লাহপাক আরও এরশাদ করেন, রমজান এমন একটি মাস, যে মাসে মানবতার মুক্তর সনদ মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়েত এবং সুপথ প্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর হক্ব-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাস পাবে সে যেনো অবশ্যই রোজা রাখে। (সূরা বাকারা : ১৮৫)। হজরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন শয়তান ও দুষ্ট জিনদেরকে রমযজান মাসের প্রথম রাতেই শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং এর একটি দরজাও তখন আর খোলা হয় না, খুলে দেওয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো এবং এর একটি দরজাও তখন আর বন্ধ করা হয় না। এ মাসে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত! বিরত হও। আর বহু লোককে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এ মাসে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ হতে থাকে। (তিরমিজি, হাদিস নং : ৬৮২)। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা রমজান মাসের প্রত্যেক দিবস ও রাত্রিতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং : ৭৪৫০)।
হজরত কাব ইবনে উজরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনÑএকদা রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে বললেন, তোমরা মিম্বরের নিকট সমবেত হও। আমরা সকলেই তথায় উপস্থিত হলাম। যখন তিনি মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলেন, তখন বললেন, আমীন, যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন, আমিন, যখন তিনি তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন, আমীন। হজরত কা’ব ইবনে উজরা (রা.) বলেন, যখন তিনি (মিম্বর থেকে) অবতরণ করলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আজ আমরা (মিম্বরে উঠার সময়)আপনাকে এমন কিছু কথা বলতে শুনেছি, যা ইতোপূর্বে কখনো শুনিনি। উত্তরে তিনি বললেন, জিবরাইল (আ.) আমার নিকট আগমন করেছিলেন, যখন আমি প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে রমজান মাস পেলো, তবুও তার গুনাহ মাফ হলো না। আমি বললাম, আমিন। যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম তখন বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যার নিকট আপনার নাম উচ্চারিত হলো অথচ সে আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করলো না। আমি বললাম আমিন। যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে বৃদ্ধ পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেলো অথচ তারা উভয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারলো না। অর্থাৎ তাদের খেদমতের মাধ্যমে নিজেকে জান্নাতবাসী করতে পারলো না। আমি বললাম, আমিন। (মুসলিম, হাদিস নং : ২৫৫১)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রমজান মাস লাভকারী ব্যক্তি যে উত্তমরূপে সিয়াম ও কিয়াম (রোজা, তারাবি ও অন্যান্য আমল) পালন করে তার প্রথম পুরস্কার এই যে, সে রমজান শেষে গোনাহ থেকে ওই দিনের মতো পবিত্র হয় যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলো। (মুসলিম, হাদিস নং-৮৯৬৬)। হজরত যায়েদ ইবনে খালেদ আলজুহানী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) আলাইহি এরশাদ করেন যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার (রোজাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজাদারের প্রতিদান হতে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করা হবে না। (তিরমিজি, হাদিস নং : ৮০৭)। হজরত রাসুলে কারিম (সা.) এরশাদ করেন, রমজান মাসে সিয়াম পালন পূর্ববর্তী রমজান থেকে কৃত গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয়; যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়’। (মুসলিম : ২৩৩)। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর রজনীতে নামাজ আদায় করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’। (বুখারি : ১৯১০)। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘রমজান মাসে সিয়াম পালন বছরের দশমাস সিয়াম পালন তুল্য’। (মুসলিম : ১১৬৪)। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন-‘রোজা এবং কুরআন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমজানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতে বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে’। (বায়হাকি : ১৪২৬)। হজরত যায়েদ ইবনে খালেদ আলজুহানী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) আলাইহি এরশাদ করেন যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার (রোজাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজাদারের প্রতিদান হতে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করা হবে না। (তিরমিজি, হাদিস নং : ৮০৭)।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও প্রিন্সিপাল, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার।
মন্তব্য করুন