পৃথিবীর বুকে চাঁদে ভ্রমণের অনুভূতি! বুর্জ খলিফার পর এবার নজর কাড়বে মুন দুবাই
তোফায়েল আহমেদ (পাপ্পু) দুবাই থেকে॥ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফা। এমনিতেই বিশ্বজোড়া তার আকর্ষণ। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দুবাই। আর এই দুবাইয়েরই অন্যতম আকর্ষণ বুর্জ খলিফা। যা ইদানীং অসংখ্য পর্যটককে এ শহরে টেনে আনে। এবার সেই আকর্ষণ সম্ভবত বহুগুণ বাড়তে চলেছে। এবার দুবাইয়ে চাঁদের আদলে রিসোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেখানে গেলে চন্দ্রপৃষ্ঠে ভ্রমণের অনুভূতি পাওয়া যাবে।
অ্যারাবিয়ান বিজনেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডিয়ান আর্কিটেকচারাল কো¤পানি মুন ওয়ার্ল্ড রিসোর্টস ইনকর্পোরেটেড (এমডব্লিউআর) দ্বারা ৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে, যার নাম হবেমুন দুবাই। মুন ওয়ার্ল্ড রিসোর্ট ইনকরপোরেশন প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা স্যান্দ্রা ম্যাথিউজ ও মাইকেল হেন্ডারসন জানান, প্রস্তাবিত রিসোর্টের ভবনের উচ্চতা হবে ৭৩৫ ফুট বা ২২৫ মিটার।অর্থাত প্রায় ৬০ তলা অট্টালিকার সমান উঁচু।প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হতে পারে। আগামী ৪ বছরের মধ্যে এর কাজ স¤পূর্ণ হবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ২০০ মিটারের অধিক উচ্চতাস¤পন্ন এ টাওয়ারের বাইরে অংশটি দেখতে হুবহু চাঁদের মতোই হবে। চাঁদের মতোই গোলাকার এই রিসোর্টটির ব্যাস হবে ১৯৮ মিটার। ভেতরের সমতল চাকতির মতো করে গড়ে তোলা হবে। লুনার সারফেস ঘিরে থাকবে লুনার কলোনি। যেখানে দর্শনার্থীরা জিরো র্গ্যাভিটিতে হাঁটার মতো অভিজ্ঞতা পাবেন। এমনকি পরিবেশবান্ধব স্থাপনাটিতে নভোচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য থাকবে স্কাই ভিলা। এই চাঁদ রিসোর্ট নির্মাণ করতে কার্বন ফাইবার ব্যবহার করার পাশাপাশি নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মূল কাঠামোতে সোলার সেলও সংযুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মুন ওয়ার্ল্ড রিসোর্টের বিশেষ সুবিধা হচ্ছে, দর্শনার্থীরা সেখানে এসে চাঁদের পিঠে ভ্রমণের মতো অনুভূতি পাবেন। কারণ, সেখানে লুনার কলোনি নামের একটি স্থান থাকবে। সেখানে বছরজুড়ে ২৫ লাখ ভ্রমণকারী চন্দ্রপৃষ্ঠে ভ্রমণের আস্বাদ নিতে পারবেন। দুবাইয়ের মুন ওয়ার্ল্ড রিসোর্টে স্কাই ভিলা থাকবে। আনুমানিক ৩০০টি ‘স্কাই ভিলা’ ইউনিট কেনার জন্য উপলব্ধ হবে এবং তাদের ক্রেতারা একটি বিশেষ প্রাইভেট মেম্বার ক্লাবের সদস্য হবেন। লুনার কলোনি বা ‘চন্দ্র উপনিবেশ’, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বৃহত্তম শহরটিতে অতিথিদের ‘সাশ্রয়ী মূল্যের মহাকাশ পর্যটন’ অনুভব করতে সহায়তা করবে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চাঁদের আদলে নির্মিত বিলাসবহুল অভিজাত এই রিসোর্টে প্রতিবছর এক কোটি দর্শনার্থী ভ্রমণ করতে পারবেন।দর্শনার্থীদের জন্য রিসর্টে থাকবে ¯পা, নাইট ক্লাব, মিটিং রুম, লাউঞ্জ, থাকার জন্য রুমও। সেখানে আধুনিক ও অভিজাত সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ভবনটি মহাকাশ প্রতিষ্ঠান ও নভোচারীরা প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। ভবনটির নকশা তৈরি ও নির্মাণে ব্যবহার করা হবে স্থাপত্য ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সর্বাধুনিক কলাকৌশল ও প্রযুক্তি।
জানা যায়, প্রকল্পটি খঊঊউ (ঊহবৎমু ধহফ ঊহারৎড়হসবহঃধষ উবংরমহ) গোল্ড এর সার্টিফিকেশন নিয়ে তৈরি হচ্ছে। হেন্ডারসন বলেছেন, পর্যটন, বাণিজ্যিক, আবাসন ব্যবসা, আর্থিক সেবাপ্রতিষ্ঠান, বিমান চলাচল ও মহাকাশ, জ্বালানি স¤পদ, কৃষি, প্রযুক্তি, শিক্ষা-সহ সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রতিটি ক্ষেত্রে মুন ওয়ার্ল্ড রিসোর্ট তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতিতে মুন ওয়ার্ল্ড রিসোর্ট নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা উদ্যোক্তাদের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুবাইয়ের উন্নতির মূলে এতদিন অপরিশোধিত তেলের ব্যবসা ছিল। তবে এই স¤পদেরও একটি সীমা রয়েছে। আগামী দিনে অপরিশোধিত তেলের ভান্ডার শেষ হওয়া বা না হওয়ার কথা চিন্তা করে নিজেকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে বিশ্বসেরা করে তুলতে মরিয়া দুবাই।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহির অর্থনীতিতে মুন ওয়ার্ল্ড রিসর্ট নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা উদ্যোক্তাদের। দুবাই ছাড়াও ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ায় আরও তিনটি চাঁদের আদলে বিলাসবহুল রিসর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে এমডব্লিউআরে-এর। হেন্ডারসন বলেছেন, পর্যটন, বাণিজ্যিক, আবাসন ব্যবসা, আর্থিক সেবাপ্রতিষ্ঠান, বিমান চলাচল ও মহাকাশ, জ্বালানি স¤পদ, কৃষি, প্রযুক্তি, শিক্ষা-সহ সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রতিটি ক্ষেত্রে মুন ওয়ার্ল্ড রিসর্ট তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
মন্তব্য করুন