পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে জুড়ীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠে চুঙ্গা পিঠা
হারিস মোহাম্মদ॥ পৌষ সংক্রান্তিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠে গ্রামীণ জনপদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী চুঙাপিঠা। পৌষ সংক্রান্তি এলে উপজেলার চা শ্রমিক ও হিন্দু পরিবারগুলোতে চুঙ্গাপিঠার দৃশ্য দেখা গেলেও আগের মতো এখন আর জমে উঠে না।
কারণ গেল কয়েক বছরে বনদস্যুদের কবলে পড়ে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার উল্লেখযোগ্য পাহাড়গুলো প্রায় উজাড় হয়ে গেছে। যার ফলে বর্তমান সময়ে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। জানা গেছে, সিলেটিদের ঐতিহ্যবাহী কয়েকটি দেশীয় পিঠার মধ্যে চুঙ্গাপিঠা অন্যতম। আগেকার দিনে অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসের শীতের সময়ে গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে এ পিঠার উৎসব দেখা যেত।
পাহাড়ী বাঁশের (ঢলু বাঁশ) ভিতরে নতুন চালের গুড়ো ঢুকিয়ে, আমন ধানের খড়ের আগুনে পুড়ে সাধারণত এ পিঠা তৈরি করা হয়। চুঙাপিঠা আগুন দিয়ে পুড়ার সময় ছোট, বড় ও মাঝারি পরিবারের সকলের হইচই জমে উঠতো। আশপাশ থেকে ছুটে এসে যোগ দিতেন পাড়া প্রতিবেশীরাও। গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী সেই দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। সময়ের ব্যবধানে চুঙ্গা পিঠা প্রায় বিলুপ্তির পথে।
প্রবীণদের মতে, এখন সেই আগের মতো পাহাড়, জঙ্গল না থাকায় ঐতিহ্যবাহী চুঙাপিঠার বাঁশ (ঢলু বাঁশ) পাওয়া কষ্ঠকর হয়ে পড়েছে। দিন যত গড়াচ্ছে পাহাড়, জঙ্গলের সংখ্যা ততই কমছে। পাহাড়-জঙ্গলের স্থলে স্থান করে নিচ্ছে অর্থ উপার্জনকারী বিভিন্ন ধরণের গাছ ও বাগানের সংখ্যা।
জানা যায়, উপজেলার ছোট-বড় স্থানীয় বিভিন্ন পাহাড়, লাঠিটিলা, হরমা ও উজান পাহাড়ই ছিল ঢলুবাঁশের জন্য বিখ্যাত। ভূমি দস্যুদের কবলে পড়ে সেই পাহাড়গুলো হারিয়েছে স্বসৌন্দর্য্য। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, বিগত কয়েক বছরে জুড়ী উপজেলায় প্রতিযোগীতামূলক যেভাবে পাহাড় কাটা হয়েছে, সে অনুযায়ী অত্রাঞ্চলে ঢলু বাঁশসহ অনেক ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ী সম্পদ দৃশ্য থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে। এ কারণেই অদূর ভবিষ্যতে চুঙ্গাপিঠা মতো আরো অনেক ঐতিহ্যের নামও থাকবে কি না, তা আজ দূশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মন্তব্য করুন