“প্রকৃতি ও পক্ষীপ্রেমী গোলাম মোস্তফা রাজা প্রথম মৃত্যেবার্ষিকীর মোনাজাত ও ভাবনা
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ ত্রিশে ডিসেম্বর আঠারো সাল প্রকৃতি ও পক্ষীপ্রেমি সহজ সরল সাদা মনের মানুষ গোলাম মোস্তফা রাজার প্রথম মৃত্যো বার্ষিকী। সতেরো সালের ত্রিশে ডিসেম্বর সত্তোরের কোঠায় এসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই মায়াময় মাটির পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মানব প্রেমিক গোলাম মোস্তফা রাজা মহান মৃত্যোকে আলিঙ্গঁন করেন। গোলাম মোস্তফা রাজার মৃত্যো সংবাদটি পেয়েছিলাম তাঁর চাচাতো ভ্রাতা জাসদ নেতা ও সংবাদপত্র সেবী এম.এ.রহিম মারফত। মরহুমের শেষ নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাঁর স্বপ্নের মৎস্য খামার শ্রীমঙ্গল উপজেলাধীন হাইল হাওর এলাকাধীন রাজা ফিশারীও হ্যেচারী এলাকায়। মরহুমের ঘনিষ্টজন এবং আমার বন্ধু পেরামাউন্ট গ্রুপ এর চেয়ারম্যান এস.টি.পি করিম সহ তার নামাজে জানাজায় যোগ দেই। ঐ দিন সন্ধ্যারাত ছিল ঐ এলাকার আপামর মানুষের জন্য একটি বেদনাময় রজনী। বৈদ্যোতিক বাতির আলোতে ঝলমল করছে এলাকাটি। ফিশারির দপ্তর সংলগ্ন এলাকায় আল্লাহ ও রাসুল প্রেমিক গোলাম মোস্তফা রাজা নিজস্ব অর্থায়নে জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা করে দিয়েছেন। আগ জানাজা তাঁর অনাত্বীয় ইমাম সাহেব হাউ মাউ করে কান্নাকাটি করতঃ তাঁর ধর্মানুরাগের বহান করছিলেন, উপস্থিত মুসল্লীয়ানদের কাছে তাঁর জন্য দোয়া চাই ছিলেন আর আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য বেহেশ্ত প্রার্থনা করছিলেন। এলাকার সর্বস্তরের উল্লেখযোগ্য পরিমান মুসল্লিয়ানের উপস্থিতিতে মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে তাকে চীর শয়ানে শায়িত করা হয় তাঁর স্বপ্নের ফিশারী হ্যাচারি এলাকায় মসজিদ প্রাঙ্গঁনে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই-যেনো মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই। রাজা ফিশারি ও হ্যাচারি জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন সাহেব রোজ কিয়ামতের দিন পর্যন্ত প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আযান দেবেন। গোলাম মোস্তফা রাজা রোজ কিয়ামত পর্য্যন্ত
চলমান পাতা- ০২
পাতা- ০২
মোয়াজ্জিনের আযান ধ্বনি শুনবেন ছয়াবের ভাগিদার হবেন। মহান মালিক শ্রদ্ধেয় মামা গোলাম মোস্তফা রাজার রুহের মাগফিরাত দিন তাঁর বেহেশ্ত নসীব করুন তাঁর প্রথম মৃত্যোবার্ষিকীতে এই মোনাজাত করছি।
মরহুম গোলাম মোস্তফা রাজা লন্ডন-ঢাকা- হয়ে শ্রীমঙ্গলস্থ মোতিগঞ্জ এলাকায় বসতি স্থাপন করলেও তাঁর আদি নিবাস মৌলভীবাজার সদর উপজেলাধীন আসিয়া গ্রামে। আসিয়া এলাকাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপরূপ লীলাভূমি বেষ্টিত। উত্তরে হাওর আর দক্ষিনে কুলকুল ধ্বনিতে বয়ে যাওয়া মনুনদীর হাওর বাওরের মায়ায় হাওয়ায় মমতায় বেড়ে উঠা রাজা মরহুম মৌলভী ছনাওর এর দ্বিতীয় পুত্র। ষাটের দশকে সেই সময়ের রেওয়াজ অনুযায়ী বৃটেন গমন করেন বালক রাজা। লাল মেম সাহেবদের দেশে গিয়ে রাজা লাল পানি পান আর লারে লাপ্পা গান গেয়ে লাল মেম সাহেবদের পিছু ছুটেন নি বরং বৃটেনে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে কর্মজীবন শুরু করেন। সকাল সন্ধ্যা পরিশ্রম-চাকরি-ব্যবসা করতঃ বিপুল বিত্ত বেসাতের মালিক হন তিনি। একদা তিনি অনুভব করেন বয়স হয়ে গেছে এবার ঘরের ছেলে ঘরে ফেরা উচিত। মনু-র মায়ায় যিনি বেড়ে উঠেছেন টেমসের মোহ তাকে আটকিয়ে রাখতে পারে না বিত্ত বেসাত পানির দামে বিক্রি করে স্বদেশে ফিরে আসেন। রাজধানীর ঢাকার উত্তরায় বিশাল বাসা-বাড়ি আর শ্রীমঙ্গঁলের মোতিগঞ্জ এলাকায় হাজার একরের ফিশারি হ্যাচারি গড়ে তুলেন। অবশেষে উত্তরার বিশাল সম্পত্তি নাম মাত্র মূল্যে বিক্রী করে মোতিগঞ্জেই স্থায়ী হন গোলাম মোস্তফা রাজা। হাওর এলাকায় মৎস্য খামার সমূহে স্থানীয় ও অতিথি পাখি সমূহ খামারের মৎস্য সম্পদ খেয়ে ও পয়মালি দিয়ে আর্থীক ক্ষতিগ্রস্থ করলে সংরক্ষিত মৎস্য খামার সমূহে পক্ষীবিতাড়নের ব্যবস্থা করা হলেও প্রকৃতি ও পক্ষীপ্রেমি গোলাম মোস্তফা রাজা তাঁর মৎস্য খামারকে পক্ষীকুলের অভয়ারন্য হিসাবে ঘোষনা করতঃ তাদের আহারও বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেন। ফলতঃ তাঁর খামারটি দেশী-বিদেশী, পাখ-পাখালির, নিরাপদ আশ্রয় ও বসবাস স্থলে পরিণত হয়। প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ায় এতদ্সংবাদ পরিবেশিত হলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
রাজা ফিশারি পর্য্যটক এবং প্রকৃতি প্রেমীদের দর্শনীয় ও গবেষনার স্থানে পরিণত হয়।
গোলাম মোস্তফা রাজা এবং তাঁর কাজিন আব্দুর রহিম আমার আত্মীয়। মামা হন। বাল্যকাল থেকেই তাঁর সঙ্গেঁ আমার পরিচয়। বিগত দশকে তাঁর মামলা মোকদ্দমা পরিচালনা করতে গিয়ে দেখেছি তিনি একজন পুষ্পপ্রিমিকও বটেন। আমার যৌবন কালে আমি জেলা গোলাপ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান হিসাবে বাগান চর্চা, সেমিনার, সমাবেশ, মতবিনিময় করেছি, এখনও এখানে সেখানে বিশেষতঃ শহীদানের সমাধিতে নিজস্ব অর্থায়নে বৃক্ষরোপন করি। তিনি তা জানতেন বলেই প্রায় প্রতি সপ্তাহে তাঁর বাগানের তাজা গোলাপের একটি বিশাল তোড়া নিয়ে আসতেন। আর আমি তখন জেলা বারের সভাপতির দায়িত্ব পালন রত। জেলা জজ ছিলেন সৎ, ন্যায়, বিচারক ও পুষ্প প্রেমিক হাসান শহীদ ফেরদাউস, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ও তাঁর প্রতি আমার আলাদা দূর্বলতা। রাজা মামার সম্পূর্ণ গোলাপ তোড়াটি জেলা জজ সাহেবকে উপহার দিতাম। তিনি খুবই খুশী হতেন। অবস্থা দৃষ্টে রাজা মামা তোড়ায় গোলাপ ফুল ও পাপড়ির সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে ছিলেন।
গোলাম মোস্তফা রাজার স্মৃতি রক্ষার্থে আমাকে সভাপতি এবং শ্রীমঙ্গঁলের বিশিষ্ট সাংবাদিক ইটিভির জেলা প্রতিনিধি মুক্তিযুদ্ধের গবেষক তাঁর ও আমার ¯েœহভাজন বিকুল চক্রবর্তীকে সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। এস.টি.পি করিম এবং এম.এ.রহিম যথাক্রমে প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষকের দায়িত্ব নিয়েছেন। এবার ত্রিশে ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের নির্বাচন থাকায় ঐ দিন কোন অনুষ্ঠান করা হবে না। পরবর্তীতে তাঁর স্বপ্নের ফিশারী এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচী নেয়া হবে।
ত্রিশে ডিসেম্বর প্রকৃতি প্রেমি গোলাম মোস্তফা রাজার স্মৃতির প্রতিশ্রদ্ধা এবং মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। মহান মালিক তাঁর বেহেশ্ত নসীব করুন এই মোনাজাত করছি।
[ ষাটের দশকের সাংবাদিক। সিনিয়র এডভোকেট, হাইকোর্ট, মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসকøাব]
মন্তব্য করুন