(ভিডিওসহ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি মৌলভীবাজার সহ দেশের বিভিন্ন চা শ্রমিকদের সাথে কথা বললেন
স্টাফ রিপোর্টার॥ অবশেষে চা শ্রমিকদের চাওয়া পূর্ণ হল। ভার্চুয়াল মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের মুখ থেকে শুনলেন সুখ দুঃখের কথা। এতে আনন্দে আত্মহারা চা শ্রমিকেরা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের পাশে আছি, থাকবো আমি আপনাদের গৃহ নির্মাণ করে দেব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদের জন্য মান সম্পন্ন গৃহ নির্মাণ ও বাগান এলাকায় স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের কথা জানান। তিনি আরও বলেন চা শিল্প ও শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে বাগান মালিকদের সাথে কথা হয়েছে। যাতে এ শিল্পের কোন ক্ষতি না হয়।
এদিকে শ্রমিকেরা জানান বঙ্গবন্ধুর মেয়ে আমাদের কথা শুনলেন, এর চাইতে আনন্দের আর কি কিছু আছে। তিনি আজ সরাসরি শুনলেন আমাদের দুঃখ-কষ্টের কথা।’
দেশের প্রধানমন্ত্রীর আমাদের মতো গরিব মানুষের কথা তিনি শুনলেন, এই জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।’
শনিবার ৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টায় মৌলভীবাজারসহ দেশের চারটি জেলার চা শ্রমিকদের কথা শুনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখলা চা বাগানের মাঠ থেকে চা শ্রমিকরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত হন।
কয়েকজন চা বাগানের শ্রমিক বলেন, ‘এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়ে খুবই আনন্দিত।
শ্রমিকরা জানান শেখ হাসিনা ছাড়া আমাদের দুঃখের কথা শোনার আর কেউ নেই। আমরা অনেক দিন ধরেই উনার সাথে কথা বলার দাবি জানিয়ে ছিলাম। অবশেষে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। আজ দেশের সব চা শ্রমিকের জন্য এক স্বপ্নের দিন বলে তারা জানান।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন, মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকরিয়া, জেলা পরিষদ প্রশাসক মিছবাহুর রহমান, মৌলভীবাজার পৌর সভার মেয়র মো: ফজলুর রহমান, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও শ্রমীক নেতৃবৃন্ধ।
গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি মৌলভীবাজারে সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত ন্যাশনাল টি কোম্পানীর মালিকানাধীন পাত্রখোলা চা বাগান, সিলেট, হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রামের চা শ্রমিকদের সাথে মতবিনিময় করবেন। এজন্য মৌলভীবাজার সহ দেশের ৪টি স্থানে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি ছিল দূর্গাপূজার আগে চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলবেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আজ চা শ্রমিকদের সাথে ভার্চুয়ালি মতবিনিময় করেন। স্মরণকালের দীর্ঘতম ধর্মঘট যখন গভীর সংকটে দেশের চা শিল্প, তখন প্রধানমন্ত্রী আশ্বাসেই ধর্মঘট ভেঙে কাজে যোগ দেন চা শ্রমিকেরা।
টানা ১৯ দিন মজুরী বৃদ্ধির দাবীতে দেশের ১৬৭টি চা বাগানের ন্যায় মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগান, হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্রগ্রাম সহ সারা দেশের চা বাগানে শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করে। এর মধ্যে কয়েক দফা সমঝোতা বৈঠক হয় ও ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন চা শ্রমিক নেতৃবৃন্ধ। তা আবার সাধারণ শ্রমিকদের চাপে প্রত্যাখানও করা হয়।
১৭ আগষ্ট সন্ধ্যায় চা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির দাবী নিয়ে শ্রমিক ও বাগান মালিকদের মধ্যে বৈঠক বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তর ঢাকা কার্যালয় অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বাগান মালিক পক্ষ ১২০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৪০ টাকা করার কথা জানান। পরে শ্রমিকরা মাত্র ২০ টাকা মজুরী বৃদ্ধি মেনে না নিয়ে তা প্রত্যাখান করেন।
২০ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ১৪৫ টাকা ঘোষনা আসার পর শ্রীমঙ্গল শ্রম দপ্তরে বিকেলে বৈঠক বসে। ওই বৈঠকে ১৪৫টাকা মজুরী নির্ধারনের বিষয়টি শ্রমিকদেও জানানো হলে তাৎক্ষনিক মেনে নিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন। এর ঘন্টা খানেক পর চা শ্রমিকরা প্রত্যাখান করে মিছিল করেন।
২৩ আগষ্ট রাত ১০টায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা বৈঠক শুরু হওয়া বৈঠক মধ্যরাতে হয়। পূর্বের মজুরী ১২০ টাকায় কাজে যোগ দেবেন মেনে বৈঠকে ৮ জন শ্রমিক নেতৃবৃন্ধ প্রশাসনের সাথে যৌথ স্বাক্ষর করে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন। পরে তারা সাধারণ শ্রমিকের চাপে তা প্রত্যাখান করেন।
২৭ আগষ্ট সন্ধ্যায় গণভবনে মালিক পক্ষের সাথে বৈঠক শেষে ১৭০ টাকা মুজুরী নির্ধারণ হলে চা শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। পর দিন ২৮ তারিখ তারা কাজে যোগ দেন। ওই দিন দূপুর থেকে শ্রমিকরা অনন্দ মিছিল করেন। আন্দোলন চলা কালে ১২০ টাকা থেকে ২ দফা মজুরী বাড়িয়ে ১৪৫টাকা ও পরে ১৭০ টাকা মুজুরী নির্ধারণ করা হলে চা শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেন।
উল্লেখ্য গত ৯ আগষ্ট থেকে শ্রমিকরা ৩০০ টাকা মজুরীর দাবীতে ধর্মঘটে নামেন শ্রমিকরা। ১৭০ টাকা মুজুরী নির্ধারণ হলে ২৭ আগষ্ট অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের অবসান ঘটে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। এ কথা শোনার পর থেকেই মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগান সহ সারা দেশের ১৬৭টি চা বাগানে এক ধরনের আনন্দের বন্যা বইছে। প্রধানমন্ত্রীর এমন সাড়া ঐতিহাসিক মনে করেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
মন্তব্য করুন