প্রবাসী সাংবাদিক সেলিমের সাথে সিলেটে একটি মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যা
সাইফুর রহমান কায়েস: ৯ জুলাই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জম্পেশ আড্ডাটা স্মৃতি হয়ে থাকবে জীবনভর। ফ্রান্স প্রবাসী লেখক, গবেষক, সাংবাদিক ও ফ্রান্স-বাংলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি দেলওয়ার হোসেন সেলিম ভাইয়ের সাথে লোক গবেষক সালেহ ভাইকে নিয়ে মেতে উঠেছিলাম পরম আনন্দঘন আড্ডায়। আমি বৃষ্টিস্নাত বিকেলের ক্লান্তি মুছে দিতে অনেকদিন থেকে এরকম একটি সন্ধ্যার অপেক্ষায় ছিলাম। আমার সময় হলে সেলিম ভাইয়ের হয় না। আবার আমার হলে উনার হয় না। আবার দুজনের হলে সালেহ ভাইয়ের সময় মিলছিলো না। কিন্তু আজ সেটা কিভাবে যেনো মিলে গেল। আর সময় ক্ষেপণ করলে কোনোদিনই হবে না। সেলিম ভাইয়ের হাতে সময় আর মাত্র মাঝখানে একটি দিন। খুব সহসাই পারিবারিক প্রয়োজনে চলে যাচ্ছেন লণ্ডনে। ভ্রমণপিপাসু মন তার ছুটে চলে এক দেশ থেকে আরেক দেশে। এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে। সব মিলিয়ে তিনি ভ্রমণ করেছেন ২৫টিরও বেশী দেশ। সুযোগ পেলেই দেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। সুযোগ পেলেই দেশ মাতৃকার টানে জন্মভভুমিতে চলে আসেন। ভালোবাসেন সাহিত্য-সংস্কৃতিমোদীদের দ্বারা পরিবৃত হয়ে থাকতে।নিজের পরিবারের মতোই লালন এই জগতের মানুষদের।
সিলেট লেখক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা কমিটির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসাবে একসময় সাহিত্য অঙ্গনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। সম্পাদনা করেছেন কল্লোল নামের সাহিত্য ম্যাগাজিন। দেশে থাকাকালীন সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলেন দেড় যুগ ধরে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। এখন প্রবাসেও সাংবাদিক হিসাবেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। কাজ করছেন ‘রিপোটার্স উইদাউট বোর্ডার্স’র সক্রিয় সদস্য হিসেবে।
এরকম একজন উদ্যমী, প্রাণবন্ত মানুষটির সঙ্গলাভের জন্য তাই আজকের দিনটিকেই মোক্ষম সময় বলে মেনে নিলাম। ভালোবাসার কি টান, কি জোর। সেটা সেলিম ভাইকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। আমাদের অনেক আগেই তিনি পৌঁছান নির্ধারিত স্হান সিলেট বাতিঘরে। বলতে গেলে একেবারেই ইংলিশ টাইমে। আমাকে অবাক করে দিয়ে। অসম্ভব বিনয়ী, সদালাপী ও বন্ধুবৎসল। কোমল হৃদয়ে আমরা ঠাঁই করে নিতে পেরেছি কিনা জানি না। তবে আমরা একটা উপভোগ্য সময় উদযাপন করেহি। একটা কোয়ালিটি টাইম আমরা পার করেছি। বই নিয়ে কথা বলেছি। আমাদের সাম্প্রতিকতম চিন্তাধারা গতি- প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করেছি।
সালেহ ভাই তার লোক-লাহিত্য সংগ্রহের আদ্যপান্ত নিয়ে মনোমুগ্ধকর আলোচনা করেছেন। সেলিম ভাই তার প্রবাস জীবনের সুন্দর অভিজ্ঞতা, সাংবাদিকতা জীবনের মধুর স্মৃতিগুলো সামনে এনে আমাদেরকে আলোকিত করেছেন। তার আলোচনায় শ্রদ্ধার সাথে উঠে এসেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক, সাহিত্যিক মহিউদ্দীন শীরুভাই তার “শতবর্ষের সিলেটের সাংবাদিকতা ” নামক অনন্য কীর্তির মাধ্যমে। আমি তার প্রসঙ্গ আসতেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। কারণ আমার হৃদয়ে তাঁর জন্য অশ্রুত-অব্যক্ত আবেগ যে জমা রয়ে গেছে। “সাংবাদিকদের বাইবেল” বলেই আমি এটিকে মানি। দ্বিতীয় আরেকটি গ্রন্থ এখনো কেউ লিখেননি। সাংবাদিকতার আধুনিক ইতিহাস্ তাই অজানাই থেকে যাচ্ছে। অবশ্য সালেহ ভাই বলছেন তিনি একটা কিছু করতে চান। তাহলেই তিনি আমাদের দায়মুক্ত করবেন বলে মনে করি।
আমরা বাতিঘরেই সন্ধ্যাটি কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। আলোকচিত্রবাজি আর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের আড়ালে সন্ধ্যা রাত হতে যাচ্ছে। দাড়িয়ে আমরা চায়ের কাপে ঝড় তুলেছি। একেবারে শেষভাগে এসে আমাদের সাথে এসে যোগ দিলেন এডভোকেট শাহনাজ শিকদার, এডভোকেট সুলতানা পপি এবং মঈনুদ্দীন কলেজের প্রভাষক রুকাইয়াত রুলি। শাহনাজ তার ছোট্ট মেয়েটিকে সাথে করে নিয়ে এসে একেবারে পারিবারিক পরিমণ্ডলে বেঁধে ফেলেছেন। আমি শিশুসঙ্গ খুব পছন্দ করি। তাই আমাদের আড্ডাতে শিশুসুলভ সরলতা যুক্ত হওয়ায় একটি নতুন মাত্রা পেলো বৃষ্টিহীন ফসফরাসীয় সন্ধ্যা। উজ্জ্বল আলোতে শিশুর কচি মুখটি আমাদের সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলো বৈকি।
সিলেট বাতিঘরে নবীনেরা চক্ষুলজ্জা ভুলে আপনার মাঝেই ডুবে যাচ্ছে। একেকজন বান্ধবী সাথে করে নিয়ে আসছে আর বসার স্থানটি জুড়ে বসছে। ফলে আমরা বাত্তি পোলাপান তাদের সাথে আর পারছিলাম না। দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়েই কাটিয়ে দিলাম। সালেহ ভাই ক্যাফের ট্রেলারকে কানে কানে বলেছেনও, কিন্তু লাভ হয় নি। সবুজ চা পান করে আমরা বাতিঘরকে গুডবাই জানিয়ে সুপার শপে কষ্টের টাকায় নষ্ট জিনিসের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। ফুড প্যালেসে গিয়ে দেখি একটি পার্টি হচ্ছে। সেখান থেকে সরে এসে পাশের আরেকটি ফাষ্টফুডের দোকানে ঢুকে পড়লাম। সেখানে গিয়ে আরেক বিপত্তি। আরো দু’ঘন্টা অপেক্ষাতে কেটে গেলো। অবশেষে স্যাণ্ডুইচ এলো। স্যণ্ডুইচ খেতে খেতে আমরা শাহনাজের মেয়ের শিশুসুলভ চাঞ্চল্য উপভোগ করছিলাম। মৃদুলয়ে মাল্টি মিডিয়াতে তখন বাজছিলো অই দূর দ্বীপবাসিনী…
অনেক চেষ্টা করেও বিলটি আমি দিতে পারিনি। আমাকে দিতেই দিলেন না সেলিম ভাই। আলো আধারের মেলা ফেলে চলে আসার আগে সুলতানা পপিকে আমার ভাবনাবিন্দু বইটি উপহার দিলাম। অবশ্য সেলিম ভাইকে বাতিঘরেই দিয়েছিলাম। সালেহ ভাই তার “কাব্যে বানিয়াচঙ্গের ইতিহাস” গ্রন্থটি সেলিম ভাই এবং প্রভাষক রোকাইয়াত রুলি উপহার দিলেন। শাহনাজদের সাথে আমরা ছবি তুলতে ভুলে গিয়েছিলাম।
রুলেক্স ঘড়ির কাঁটায় রাত তখন দশটা বেজে গেছে। শাহনাজদেরও তাড়া ছিলো। তাই তাদেরকে একটি সিএনজিতে সী-অফ করে আমরা চলে গেলাম সেলিম ভাইয়ের বাসায়। যাবার আগে তিনি ঠেসে ধরলেন খাবার জন্য। নাছোড়বান্দা সেলিম ভাই। খেতেই হলো বাসায় গিয়ে। বাসায় গিয়ে ভাবীর আতিথেয়তায় মুগ্ধ আমরা দু’জনেই। সেলিম ভাই আমাদেরকে পাড়ার রাস্তায় এগিয়ে দিয়ে গেলেম। আর আমরা স্বর্গীয় মুগ্ধতা আর আনন্দ নিয়ে জিক্সার বাইকে নিজেদের ঢেঁড়ায় ফিরে আসলাম।
ঘরে ফিরে আমার ফাইল ম্যানেজার অন করে ‘ আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ শুনতে শুনতে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে সন্ধ্যার স্মৃতি রোমন্থন করছিলাম আর সেলিম ভাইয়ের পাঠানো ছবিগুলির শেয়ারিং নিয়ে ভাবছিলাম। গুণগুণ করে আবৃতি করছি বাংলা কবিতার আত্মা বিনয় মজুমদারের æসর্বদা সত্য অনুরোধ” কবিতা
চৈতন্যোদয়ের পরে এই বলি, ঈশ্বরী কখনো
স্বর্গে কিংবা মর্তে যদি কোনো ভুলত্রুটি ক’রে থাকি
তবে তুমি দয়া ক’রে বিনা শর্তে ক্ষমা ক’রো,সখি,
আরও কাছে টেনে নাও, চিরকাল একত্রিত হয়ে থাকো- এই
আমার সর্বদা সত্য অনুরোধ, তোমার নিকটে।
বংশ-বৃদ্ধিকরণের ক্ষমতা সম্পন্ন এ সকল
বৃক্ষদের প্রতি চেয়ে মানুষের কথা মনে পড়ে।
দেখেছি, মানুষ অর্ধ-সজীবপদার্থ মাত্র। আরও
বংশ-বৃদ্ধিকরণের ক্ষমতা রয়েছে, তবে কোনো
আত্মা নেই; এই ভালো। তাহলে তো শুধু তুমি-আমি-আরও কা|
মন্তব্য করুন