প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার মাঝেও কমলগঞ্জে মদনমোহনপুর চা বাগানে যাত্রাপালা আর জুয়ার আসর
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ ২০ নভেম্বর রোববার থেকে সারা দেশে শুরু হওয়া প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সময় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মদনমোহনপুর চা বাগানে শুরু হয়েছে যাত্রাপালা ও আর জুয়ার বড় আসর। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা আর আসন্ন বার্র্ষিক পরীক্ষার সময় রাতে যাত্রাপালা ও আর জুয়ার আয়োজনে সাধারন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রা আর জুযার কারণে বাড়ছে চুরি। যাত্রাপালা ও জুয়া বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও উপজেলা প্রশাসনে এলাকাবাসী লিখিত আবেদন করেছেন।
মঙ্গলবার ২২ নভেম্বর দিবাগত রাত ১০টায় মাধবপুর ইউনিয়নের মদনমোহনপুর চা বাগানে জুয়াড়িদের অর্থায়নে যাত্রাপালা শুরু হয়েছে। যাত্রাপালার আড়ালে চা বাগানের ভিতরে কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের জুয়ার আসর বসে। যেখানে সারা জেলার পেশাদার জুয়াড়িরা এসে অংশ গ্রহন করে। মদনমোহনপুর চা বাগান পঞ্চায়েত সাধারন সম্পাদক অসনী ভর, চা শ্রমিক পবন রায় ও রামজনক চাষা অভিযোগ করে বলেন, রোববার ২২ নভেম্বর প্রাথমিক পরীক্ষা শুরু হবে তার পর সবগুলো বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হবে। অথচ পেশাদার জুয়াড়িদের অর্থায়নে মদনমোহনপুর চা বাগানে যাত্রার নামে জুয়ার আসর বসবে বলে চা বাগানের পক্ষ থেকে যাত্রাপালা ও জুয়ার আসর যাতে না বসে সেজন্য গত ২০ নভেম্বর জেলা প্রাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছিল। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগাম প্রশাসনে আবেদন করেও কোন লাভ হয়নি। ২২ নভেম্বর মঙ্গলবার রাত থেকে একটি প্রভাবশালী মহলের প্রভাবে অবৈধভাবে মদনমোহনপুর চা বাগানে যাত্রাপালা ও জুয়ার আসর বসেছে।
আবেদনকারী চা শ্রমিকরা আরও বলেন, আগে পূজার সময় চা শ্রমিকরা চাঁদা দিয়ে যাত্রা পালার আয়োজন করতো চিত্ত বিনোদনের জন্য। আর এখন জুয়াড়িদের টাকায় নামমাত্র যাত্রাপালা হয় জুয়ার ঢাল হিসাবে। আয়োজকরা এবার আয়োজনের প্রাথমিক সমাপনী ও বার্ষিক পরীক্ষাকেও গুরুত্ব না দিয়ে শুরু করেছে যাত্রাপালা ও জুয়ার আসর। যাত্রাপালা ও আর জুয়ার কারণে চা বাগানগুলোতে বেড়ে গেছে গরু, ছাগল ও দোকান চুরি। এমনকি মুন্সীবাজার সদরে বেঙ্গল ফুডসের পরিবেশকের একটি দোকানে বড় ধরনের চুরি সংঘটিত হয়েছে।
কমলগঞ্জ থানার একটি নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, মদনমোহনপুর চা বাগানে শুধু যাত্রাপালার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে জুয়ার আসর বসেছে বলে থানা কর্তৃপক্ষ জানে না। তবে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, যাত্রাপালায় উপজেলা প্রশাসনের একটি মতামত নিতে হয়। মদনমোহনপুর চা বাগানে কারা যাত্রা পালা করছে? কে তাদের অনুমতি দিয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে তাঁর জানা মতে জেলা প্রশাসন থেকে যাত্রা পালার কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি। চা বাগানের শ্রমিকদের করা আবেদন তার হাতে পৌছায়নি দাবি করে নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত দুই সপ্তাহে কমলগঞ্জের শমশেরনগর ইউনিয়নের কানিহাটি চা বাগান, আলীনগর ইউনিয়নের কামারছড়া চা বাগান, মাধবপুর ইউনিয়নের পদ্মছড়া চা বাগানে পর্যায়ক্রমে যাত্রাপালার আড়ালে জুয়ার আসর বসেছিল।
বুধবার ২৩ নভেম্বর দুপুরে একটি মুঠোফোনে (০১৭১১২৮০৬৫৫) অপরিচিত এক ব্যক্তি কমলগঞ্জের একজন সিনিয়ির সাংবাদিককে বলেন, জুয়া একটি ব্যবসা। এ ব্যবসার জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট স্থানীয় দপ্তর, কয়েকজন সংবাদকর্মীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেই যাত্রাপালা ও জুয়ার আসর বসেছে। অহেতুক পত্রিকায় লিখে তাদের ক্ষতি করে কি লাভ ? এর আগে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা মোবাইল ফোনে স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মীকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়।
মদনমোহনপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বলেন, যাত্রাগানের একটি দল আমাদের বাগানের মধ্যে ঢুকেছে। তবে যাত্রাপালার অনুমতি না থাকায় তাদেরকে আজকের মধ্যে বাগান ত্যাগ করার জন্য বলেছি।
এ ব্যাপারে আলাপকালে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বুধবার সন্ধ্যায় এ প্রতিনিধিকে বলেন, মদনমোহনপুর চা বাগানে যাত্রাগানের কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি, হবেও না। বাগান ব্যবস্থাপককে নির্দেশ দিয়েছি যাত্রাপালার দলকে বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে বাগান থেকে বের করে দেয়ার জন্য।
মন্তব্য করুন