প্রায় ৩শ বছর ধরে চলছে এ আয়োজন রাজনগরে হয় উপমহাদেশের একমাত্র লাল দূর্গা দেবীর পূজা
বিশেষ প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে উদযাপিত হয় উপমহাদেশের একমাত্র লাল বর্ণের জাগ্রত দূর্গা দেবীর পূজা। দূর্গার রং লাল হওয়ায় দেবী দর্শনের জন্য উপমহাদেশের মধ্যে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, ময়মনসিংহ, কুমিল্লাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছুটে আসেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তরা। অষ্টমী ও নবমীর দিন এতো ভক্তের আগমন ঘটে যে, এখানে ২ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেটে দেবী দর্শন করতে যেতে হয় ভক্তদের। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া প্রায় তিনশত বছর ধরে ব্যাতিক্রম এই পূজার আয়োজন হয়ে আসছে এখানে। লাল বর্ণের দেবী দূর্গার পূজা উপমহাদেশের আর কোথাও হয় না। ৭ই অক্টোবর সনাতন ধর্মালম্বীদের বৃহৎ এ পূজা শুরু হয়ে ১১ই অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার ও রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার উত্তরে পাঁচগাঁও গ্রামে স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাসের বাড়িতে পালিত হয়ে আসছে ব্যাতিক্রম এই পূজা। প্রতি বছর পূজার সময় মহিষ বলির পাশাপাশি কয়েক শত পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। পাঁচগাঁও পূজা মা-পের তত্ত্বাবধায়ক সঞ্জয় দাস জানান, তাদের পূর্বপুরুষ সর্বানন্দ দাস আসামের শিবসাগরে মুন্সিপদে চাকরি করতেন। তিনি ছিলেন সাধক পুরুষ। একবার আসামের কামরূপ-কামাক্ষ্যার বাড়িতে গিয়ে পূজার জন্য পাঁচ বছরের একটি মেয়ে চাইলে স্থানীয় লোকজন তাকে একটি মেয়ে দেন। মহাষ্টমীর দিনে কুমারীকে ভগবতীর জ্ঞানে সুদীর্ঘ ছয় ঘন্টা পূজা করার শেষে প্রণাম করার সময় সর্বানন্দ দাস দেখেন, কুমারীর গায়ের রং পরিবর্তন হয়ে লালবর্ণ ধারণ করেছে। এই দৃশ্য অবলোকন করার পর মাকে জিজ্ঞাসা করেন, মা আমার পূজা সুপ্রসন্ন হয়েছে কি? উত্তরে ভগবতী বলেন, হ্যাঁ তোর পূজা সিদ্ধ হয়েছে। এই বর্ণে তোর গ্রামের বাড়ি পাঁচগাঁও-এর পূজামা-পে আবির্ভূত হয়েছিলাম। এখন থেকে ভগবতীকে লাল বর্ণে পূজা করবি। পরবর্তী বছর সর্বানন্দ দাস তার নিজ বাড়ি পাঁচগাঁওয়ে শারদীয় দূর্গা পূজার আয়োজন করেন। কুমারীর গায়ের সেই লাল বর্ণের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে লাল বর্ণে রঞ্জিত করেন মাতৃমূর্তিকে। এরপর থেকে প্রায় তিনশত বছর ধরে তাদের বাড়ির ম-পে লাল দূর্গার পূজা হচ্ছে। এখনে পূজা শুরুর পর থেকে একবারও বাদ পড়েনি। শুধু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মূর্তি নির্মাণ করে পূজা করা সম্ভব হয়নি।
ভক্তদের বিশ্বাস পাঁচগাঁও দূর্গা বাড়িতে স্বয়ং দেবী অধিষ্ঠান করেন। এটি জাগ্রত প্রতিমা।
এই দূর্গা পূজা ম-পকে ঘিরে আশেপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলা বসে। প্রায় ৪০০ দোকানে বেচাকেনা হয় বই, ফার্নিচার, খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, জিলাপি, মিষ্টি, খেলনা ইত্যাদি। স্থানীয়দের দাবি, এখানে পূজাকে কেন্দ্র করে কোটি টাকারও বেশি বেচাকেনা হয়। এ বছর রাজনগর উপজেলায় ব্যক্তিগত ও সার্বজনীন মিলে ১১২টি মা-পে শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। রাজনগর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পূজায় প্রত্যেক মা-পে নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। তবে পাঁচগাঁও পূজা ম-পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে অর্ধশত পুলিশ ও আনসার সদস্য। টহলে থাকবে র্যাব সদস্যরাও।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম জানান, এবাররে দূর্গা পূজায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। পাঁচগাঁও ম-পে দেশ-বিদেশের লক্ষাধিক ভক্ত দেবী দর্শনে আসেন। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে এই ম-পকে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। প্রশাসন সর্বাতœক সহযোগিতা করবে।
মন্তব্য করুন