প্রেসক্লাব ও জেলা পুলিশ মাদক নির্মূল ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে সোচ্চার : মাদকের সাথে যুক্ত কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা
স্টাফ রিপোর্টার॥ “আসুন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করি” এই স্লোগান নিয়ে সাংবাদিক ও পুলিশ মাদক নির্মূল ও মাদক-সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে সোচ্চা হয়ে উঠেছেন।
সোমবার ৬ মে দূপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের আয়োজনে এবং জেলা পুলিশ এর সহযোগিতায় মাদক নিয়ে আমাদের করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য, ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নেছার আহমদ।
মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুল হামিদ মাহবুবের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য সৈয়দা জহুরা আলাউদ্দিন, জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আজিজুর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল, বিপিএম, পিপিএম, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সালেহ এলাহী কুটি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ারুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সারওয়ার আলম, অতিরিক্ত পুলিশ (সদর সার্কেল) রাশেদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার সদর থানার ওসি আলমগীর হোসেনসহ মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সদস্যবৃন্দ, আইনশূংখলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও সদস্য বৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক ও সাস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।
বক্তারা বলেন, মাদক নির্মূল করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে মাদকাসক্তির দুষ্ট চক্র থেকে রক্ষা করতে হবে। যারা মাদক বিক্রেতা, মাদক সেবী ও সহযোগীতাকারী এরা দেশ ও জাতীর শত্রু, এদের কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।
প্রধান অতিথি নেছার আহমদ তার বক্তবে বলেন, মৌলভীবাজার জেলাকে আমরা মাদকমুক্ত জেলা চাই। মাদক ব্যবসা ও সেবনের সাথে যারা জড়িত তাদের তালিকা পুলিশের কাছে আছে। মাদক নির্মূলে সরকারের যেমন দায়িত্ব আছে তেমনি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। মাদকের সাথে যারা জড়িত তাদের হাত অনেক লম্বা। যার জন্য দরিদ্র পরিবারের অনেক লোক তাদের ব্যাপারে তথ্য দিতে চায় না। মাদকের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরোদ্ধে শতভাগ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে পুলিশকে।
তিনি আরো বলেন, আমি একজন এমপি হয়েও যদি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকি আমাকেও আপনারা ছাড় দিতে দিবেননা, আমাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। পুলিশ কোন মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করলে ছাড়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক কোন নেতা তদবীর করলে তাকেও গ্রেপ্তার করার জন্য বলেন।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ওয়ার্ড ও পাড়ায় পাড়ায় মাদক বিরোধী কমিটি গঠন করুন। দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে যেখানেই মাদক সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সংসদ সদস্য
সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন বলেন, আগে মাদক নিয়ে সচেতনতা ছিল না। এক সময় মৌলভীবাজারে মাদকের ভয়াবহতা ছিল এখন তা অনেকটা কমে এসেছে। অনেক সময় কথা উঠে থাকে রাজনীতিবীদরা মাদকসেবীদের ব্যাপারে সুপারিশ করেন। আমরা যতদিন ক্ষমতায় ছিলাম কোন দিন অন্যায় আবদার নিয়ে যাইনি।
তিনি আরোও বলেন, অনেক সময় মাদকের সাথে সরকারি অনেক লোক জড়িত থাকেন। যা মিথ্যা নয়। আমাদের মধ্যে যেভাবে খারাপ লোক রয়েছে তেমনি সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেও খারাপ লোক রয়েছে। তাই সবার বিরোদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
।
জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম বলেন, কোন মাদক সেবীকে ছাড় দেওয়া হবে না। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে আইনের চোখে সবাই সমান। জঙ্গিবাদ ও মাদকে যারা জড়িত থাকে তারা সুস্থ থাকতে পারে না। মাদক সেবনের ফলে সে তার শরীর ধ্বংস করে দেয়। মাদক ও জঙ্গিবাদ একটি আরেকটির পরিপূরক।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মাদক মুক্ত করার জন্য কয়েকটি জেলা ও উপজেলায় কাজ করে যাচ্ছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে জেলার জুড়ী উপজেলা। তার জন্য সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন স্থানে মতবিনিময় করা হচ্ছে।
তিনি আরোও বলেন, নায়কোচিত ভাব দেখানোর জন্য অনেক উচ্চ পরিবারের ছেলে মাদকে আসক্ত হয়। শুধু তারা না তাদের দলবল নিয়েও মাদক সেবন করে।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান
আজিজুর রহমান বলেন, আমরা একটি সংকটের মুখোমুখি হয়েছি। ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু দেশে এসে রেসকোর্স ময়দানে গাজা বন্দ করেছিলেন। পরবর্তীতে সারা দেশে মাদককে নিষেধ করা হয়। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে মাদককে নির্মূল করতে হবে। মাদককে নির্মূল করতে হলে জনবিপ্লব করতে হবে। প্রথমেই এ জনবিপ্লবের কাজ করতে হবে পরিবার থেকে।
পুলিশ সুপার
মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, আমাদের সকলের দায়িত্ব হচ্ছে মাদকের বিরোদ্ধে কাজ করা। মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব যেভাবে মাদকের বিরোদ্ধে এগিয়ে এসছে তেমনি প্রতিটি কাজেও এগিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, মাদক একজন গ্রহণ করে অন্যজন মাদক ব্যবসায়ী। এখানে সবাই সচেতন আছেন এ ব্যাপারে। তবে অনেক সময় ভালো কোন পরিবারের সন্তান মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়লে আমরা তাদের ভালো হওয়ার সুযোগ দেই। এরকম কিছু ছেলের ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিরা সুপারিশ করে থাকেন।
তিনি আরোও বলেন, মাদক ব্যবসা করে মৌলভীবাজারে অনেক পরিবার আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছে। আমরা তাদের বিরোদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা করব। পুলিশ সুপার জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য করে বলেন, মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের কেউ শেল্টার দিলে তাদের বিরোদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আমরা কোন দল বিবেচনা করব না। এসময় তিনি সকলের কাছে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের তথ্য দিয়ে সহযোগীতার আহবান জানান।
মৌলভীবাজার
পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর পরই সারা বাংলাদেশে অনেক মাদকসেবী মারা গেছে। আমরা কাউকে প্রশ্রয় দেবো না। মাদকসেবীদের তালিকা প্রশাসনকে দিতে হবে।
তিনি বলেন, মৌলভীবাজারকে আমরা টেকনাফ আর নারায়নগঞ্জ দেখতে চাই না। আমরা একটি সুশূংখল মৌলভীবাজার দেখতে চাই। এসময় তিনি বলেন, স্কুল সময়ে শিক্ষার্থীরা হোটেল রেস্টুরেন্টে গেলে তাদের বিরোদ্ধে অভিযান চালাতে হবে।
জেলা আওয়ামীলীগ
সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান বলেন, মাদক হচ্ছে একটি ব্যাধি। এই ব্যাধিকে দূর করতে না পারলে কেউ শান্তিতে থাকতে পারব না। মাদকের কারণে সন্তান পিতা-মাতাকে মারধর করে। যা জগণ্য কাজ। তাই মাদক নির্মূলে প্রথমে আমাদের পরিবারকে সচেতন হতে হবে। শহরে পুলিশ মাদকসেবীদের তাড়ালে গ্রামে গিয়ে আতœগোপন করে। তাই মাদকের বিরোদ্ধে আমাদের যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে হবে মাদকের বিরোদ্ধে।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাফি উদ্দিন, মৌলভীবাজার টাউন সিনিয়র কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ শামসুল ইসলাম, জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, জেলা জাতীয় পার্টি সভাপতি সৈয়দ শাহাবউদ্দিন, বাসস প্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিক ডা. ছাদিক আহমদ, সিনিয়র সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সরওয়ার আহমদ, দৈনিক বাংলার দিন সম্পাদক বকসি ইকবাল আহমদ, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার এস এম উমেদ আলী, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্ণালিষ্ট এসোসিয়েশন (ইমজা) সভাপতি শাহ অলিদুর রহমান, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সুবোধ কুমার বিশ্বাস, একাটুনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান, নাট্যকার আব্দুল মতিন ।
মন্তব্য করুন