ফলো আপ: জাফলং থেকে কিশোরীকে এনে কমলগঞ্জে নির্যাতন থানায় মামলা দায়ের ॥ মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য কিশোরীকে হাসপাতালে প্রেরণ
প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং পাহাড় টিলার এক কিশোরীকে (১৫) প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে (সৌদি আরব) পাঠানোর নাম করে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে এনে একটি বাড়িতে আটকিয়ে নির্যাতন করার ঘটনায় নির্যাতিতা কিশোরী কমলগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছে। কিশোরী মেয়েটিকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। মৌলভীবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার মোল্লা শাহীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কিশোরী মেয়েকে দেখতে হাসপাতালে যান। ১ মে রোববার “জাফলং থেকে কিশোরীকে এনে কমলগঞ্জে নির্যাতন” শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর সর্বমহলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
জানা যায়, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং বাজারের আপন মার্কেট নামক স্থানের রজব আলীর কন্যা (১৫) এর বাড়ীতে গিয়ে গৃহ পরিচালনার কাজে বিনা খরচে সৌদি আরবে পাঠানোর প্রলোভন দেখায় কমলগঞ্জ উপজেলার বাদে উবাহাটা গ্রামের লতিফ মিয়া (৩০)। মেডিকেল করানোর কথা বলে লতিফের শাশুড়ি ২৭ এপ্রিল রাত ১১ টার দিকে অভাবী সংসারের সহজ সরল নিরীহ প্রকৃতির মেয়ে (রোজিনা আক্তার)-কে তার এলাকা জাফলং থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার ৫নং কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাদে উবাহাটা নামক গ্রামে জামাতা কালা মিয়ার পুত্র লতিফ মিয়ার হাতে তুলে দেয়। ওই রাতেই মেয়েটিকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে চলে যায় শাশুড়ি জুসু বেগম । ২৭ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত কিশোরী মেয়েকে বাড়ীতে বন্দি করে বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখিয়ে কখনও পিতা কালা মিয়া আবার পিতার অনুপস্থিতিতে কখনো পুত্র লতিফ মিয়া মিলে মেয়েটিকে একাধিক বার শারীরিক নির্যাতন (ধর্ষণ) করে। ২৯ ্এপ্রিল সন্ধ্যায় ভোট চাওয়ার কাজে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফ কালা মিয়ার বাড়ীতে গেলে তালাবদ্ধ ঘরে একটি মেয়ের কান্নার আওয়াজ শুনে সন্দেহ জাগে। পরে প্রতিবেশির কাছে বিষয়টি জানতে পেরে সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফ সহ স্থানীয় মাইন উদ্দিন, সোনাওর মিয়া, শেখ আহমদ, সেলিম মিয়া, ইউনুস মিয়া, শাহীন মিয়া, জালাল মিয়া প্রমূখরা কালা মিয়ার কাছে ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে। প্রথমে সে অস্বীকার করে বলে আমার বাড়ীতে কোন মহিলা নেই। পরে এলাকার লোকজন ঘরের তালা ভেঙ্গে কিশোরীকে মুমুুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করেন।
নির্যাতিতা কিশোরী (রোজিনা) জানায়, লতিফ আমাদের এলাকায় তার শাশুড়ির বেড়াতে গিয়ে আমাদের পরিবারের সাথে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে আমার পরিবারের লোকজনের সাথে আলাপকালে সে জানা, আমার কাছে অনেক সুযোগ সুবিধা আছে, যদি আপনাদের মেয়েকে গৃহ পরিচালনার কাজে বিনা খরচে সৌদি আরবে পাঠাতে চান তাহলে আমি সে ব্যবস্থা করে দিতে পারি। পরবর্তীতে তার কথার বিশ্বাসে আমার মা রোবিনা বেগম আমাকে লতিফের শাশুড়ির সাথে পাঠান লতিফের কমলগঞ্জের বাড়িতে। ওই রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে তাকে একটি ঘরে থাকার জন্য জায়গা দিলে আমি একা ঘরে শুয়ে পড়ি। এরপর থেকে পিতা আবার পিতার অনুপস্থিতিতে পুত্র লতিফ মিলে আমাকে বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখিয়ে একাধিকবার পাশবিক শারীরিক নির্যাতন (ধর্ষণ) করে। এ ব্যাপারে কিশোরী মেয়েটি বাদী হয়ে ৩০ এপ্রিল শনিবার কমলগঞ্জ থানায় পিতা ও পুত্রের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কমলগঞ্জ থানার এসআই আজিজুর রহমান জানান, এ ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১)/৩০ ধারায় মামলা (নং ১৩) করা হয়েছে। পুলিশ মামলার আসামীদের গ্রেফতারে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ বদরুল হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। নির্যাতিতা কিশোরীকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। মেডিকেল রির্পোট পাওয়ার পর তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
মন্তব্য করুন