ফিরে আসা যুবকের লোমহর্ষক বর্ণনা, বড়লেখার ২ যুবককে ভারতে পাচারারের অভিযোগ, নির্যাতন  মুক্তিপন দাবি : গ্রেফতার ১

April 8, 2025,

আব্দুর রব : বড়লেখা উপজেলার সীমান্ত এলাকার দুই যুবককে কাজের কথা বলে ভারত পাচারের ঘটনা ঘটেছে। কৌশলে অপর এক যুবক ফিরে এসে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। পাচারের এমন ঘটনায় উপজেলা জুড়ে তোলপাড় চলছে।

এ ঘটনায় রোবার রাতে বড়লেখা থানায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মানব পাচার আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৮ জনকে। পাচারের শিকার যুবক আব্দুল কাদিরের মা নেছা বেগম মামলাটি করেছেন। মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাচারের ঘটনায় জড়িত আব্দুল মালিক (৩৬) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। সে সদর ইউনিয়নের ডিমাই গ্রামের ইছহাক আলীর ছেলে তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে সীমান্ত দিয়ে মহিষ চোরাচালানের দ্বন্দ্বে ওই যুবকদের ভারতে পাঠিয়ে সেখানে নির্যাতন করানো হয়। ওই যুবকরা এখন ভারতের স্থানীয় প্রশাসনের হেফাজতে রয়েছে।

পাচারের শিকার যুবকরা হলেন- বড়লেখা উপজেলার বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ডিমাই গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে মো. আব্দুল কাদির (২৩) ও একই ইউনিয়নের পূর্ব সাতকরাকান্দি গ্রামের আব্দুল শুক্কুরের ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৩৫)।

নানা কৌশলে পাচারকারিদের কবল থেকে ফিরে আসা যুবকের নাম শাহিন আহমদ (১৮)। সে বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ডিমাই গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে।

মামলার আসামিরা হচ্ছে- বড়লেখা সদর ইউনিয়নের কেছরিগুল গ্রামের সরফ উদ্দিন নবাব (৪০), একই ইউনিয়নের ডিমাই গ্রামের ফখর উদ্দিন (৩৮), আব্দুল খালিক (৪০), কুটু মিয়া (৩৮), আদুল শুকুর (৪০), খয়রুল ইসলাম (৩৯), আব্দুল মালিক (৩৬),  কেছরিগুল গ্রামের ইছহাক আলী (৪২) ও ডিমাই গ্রামের ইমাম উদ্দিন (৪০), গৌরনগর গ্রামের রুবেল আহমদ (৩৫)।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল দিবাগত রাতে (অর্থাৎ ৫ এপ্রিল ভোররাতে) মামলার এজাহার নামীয় আসামিরা ডিমাই গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে মো. আব্দুল কাদিরের বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে তারা কাজ আছে জানিয়ে গভীর রাতে আব্দুল কাদির ও তার প্রতিবেশী শাহিন আহমদকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। একই গ্রুপ (আসামিরা) গিয়াস উদ্দিন নামের আরও এক যুবককে তার বাড়ি থেকে ডেকে আনে। পরদিন দুপুরে শাহিন আহমদ আহত অবস্থায় বাড়িতে ফিরে এসে ঘটনার বর্ণনা জানায়।

শাহিন জানায়, আসামিরা আব্দুল কাদির ও গিয়াস উদ্দিনকে টাকার লোভ দেখিয়ে অবৈধভাবে ভারত পাঠিয়ে দিয়েছে। অবৈধভাবে ভারত পাঠানোর সময় শাহিন আহমদ আসামিদের কবল হতে কৌশলে পালিয়ে আসে। এর আগে শাহিনের উপর নির্যাতন চালানো হয়। আহত শাহিনকে তার স্বজনরা বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়েছেন।

মামলার বাদী নেছা বেগম বলেন, শাহিন ফিরে এসে তাদের উপর চালানো নির্যাতনের খবর জানায়। এরমধ্যে আমার ছেলে কাদির ও গিয়াসের উপর ভারতে নির্যাতন চালানোর একটি ভিডিও ফেসবুকে দেখতে পাই। এরপর আসামিদের সাথে যোগাযোগ করি। তাদের (আসামিদের) কাছে অনেক আকুতি-মিনতি করি। কিন্তু আসামিরা আমার নিকট ৬ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। টাকা না দিলে তারা আমার ছেলে ফিরিয়ে দিবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

বড়লেখা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম সরকার সোমবার সন্ধ্যায় জানান, এ ঘটনায় মানব পাচার আইনে থানায় মামলা হয়েছে। এজাহার নামীয় এক আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের  গ্রেফতার চেষ্টার পাশাপাশি ঘটনার নেপথ্য কারণ নিয়েও তদন্ত চলছে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com