ফিরে দেখা-২০১৬ বড়লেখায় আলোচিত যত ঘটনা
আব্দুর রব॥ মৌলভীবাজার জেলার উত্তর প্রান্তিক জনপদ বড়লেখা উপজেলায় গত ২০১৬ সালটি চাঞ্চল্যকর নানা অপরাধের ঘটনায় বেশ আলোচনা-সমালোচনায় অতিবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে প্যানেল চেয়ারম্যান আলম হত্যাসহ দেড়মাসে ছয় খুনের ঘটনায় উপজেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। যদিও এ হত্যাকা-গুলোর রেশ এখনও কাটেনি। পূর্বশত্রুতার জেরেই মূলত এসব হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছিল। ঘটেছে পরকীয়া ও ধর্ষণের পরে হত্যার মতো লোমহর্ষক ঘটনা। উদ্ধার হয়েছিল কয়েকটি লাশও। নৃসংশভাবে কুপানো হয়েছিল সাত বছরের এক শিশুকে। এসব ঘটনা সাধারণ মানুষের মনে এখনও নাড়া দেয়।
দেড়মাসে প্যানেল চেয়ারম্যানসহ ৬ খুন:
২৯ সেপ্টেম্বর সকালে প্রকাশ্যে দিবালোকে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন প্যানেল চেয়ারম্যান ও আইনজীবী সহকারী আবুল হোসেন আলমকে (৩৮) দা দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে কাজল আহমদ (৪৭) নামে স্থানীয় সন্ত্রাসী। এই ঘটনায় আবুল হোসেন আলমের বাবা খলিলুর রহমান কাজল মিয়াকে ১ নম্বর আসামি করে ও আরো ৪-৫ জনকে জনকে অজ্ঞাতনামা রেখে বড়লেখা থানায় হত্যা মামলা করেন।
২১ অক্টোবর রাতের আঁধারে উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের বড় ময়দান গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে আছান উদ্দিন (৩৫) নামের এক বিল পাহারাদারকে কুপিয়ে খুন করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা।
১৪ অক্টোবর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেছরিগুল গ্রামে জমি সংক্রান্ত পূর্ববিরোধের জেরে আপন ভাতিজার ছুরিকাঘাতে আসুক আহমদ (৩৬) নির্মমভাবে খুন হন।
৬ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে উপজেলার দাসেরবাজার ইউনিয়নের পশ্চিম গুলুয়া গ্রামের মৃত ললিত মোহন দাসের স্ত্রী চতুরমায়া রানী দাসকে (৫৭) নিজ গৃহে ঢুকে কাচি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে নিপেশ দাস সুনাই (২৫) নামের এক যুবক।
১৩ সেপ্টেম্বর উপজেলার চান্দগ্রামের নিজ বাড়িতে ঈদের দিবাগত রাতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত বৃটিশ নাগরিক ফাতির আলীর স্ত্রী প্রবাসী মায়ারুন নেছা (৬৬) পুত্রবধূর পরকীয়ার জেরে খুন হন। স্বামীর অবর্তমানে গৃহবধূ ফাহিমা জনৈক এক ব্যক্তির সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার রাতে শ্বাশুড়ি বিষয়টি টের পাওয়ায় তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়।
একইদিন ১৩ সেপ্টেম্বর উপজেলার চান্দেরগুল গ্রামের আব্দুল মতিনের বাড়িতে কোরবানির মাংস বন্টণ নিয়ে প্রতিপক্ষের দায়ের কোপে কুতুব আলী নামের এক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনার পর পরই এলাকাবাসী হত্যাকারী আব্দুল জলিলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
ডিমাইয়ে সাত বছরের শিশুকে কুপিয়ে জখম:
১৮ ডিসেম্বর বড়লেখা সদর ইউপির ডিমাই গ্রামে নাফিয়ান আহমদ নামে ৭ বছরের এক শিশুকে দা দিয়ে নৃসংশভাবে কুপিয়ে জখম করেছে তারই চাচাতো ভাই কাওছার আহমদ (২২)। নাফিয়ান বড়লেখা সদর ইউপির ডিমাই গ্রামের বাসিন্দা শুক্কুর আলমের ছেলে। জানা গেছে, ডিমাই গ্রামের বাসিন্দা শুক্কুর আলমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আপন বড় ভাই আব্দুল খালিকের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এরই জেরে নাফিয়ানকে একা পেয়ে চাচাতো ভাই কাওছার দা দিয়ে মাথায় উপুর্যপুরি কোপাতে থাকে।
দুই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার :
০৯ নভেম্বর উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির শ্রীধরপুর গ্রামের সুরতুন বেগম (৪১) নামে চার সন্তানের এক জননীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এছাড়া ০৩ নভেম্বর রুমী বেগম (২২) নামের এক গৃহবধূর গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
শিশুসহ তিনজনকে ধর্ষণ :
২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর চা-বাগানে আট বছরের এক শিশুকন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে জাহাঙ্গীর মিয়া (২০) নামে এক তরুণকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
একই দিনে উপজেলার কেছরিগুলের দোকানটিলা এলাকায় বিদেশ পাঠানোর নামে এক তরুণীকে (১৯) ধর্ষণ করেছে দুই দালাল। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার পুলিশ ধর্ষক জামাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এছাড়া ১৭ জুলাই গভীর রাতে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুরে কুমারসাইল গ্রামের কিশোরীকে (১৬) বিয়ের প্রলোভনে ঘর থেকে বের করে হুঙ্গালটিলা এলাকায় জোরপূর্বক ধর্ষণ করে প্রেমিক আমির উদ্দিন। এ সময় সহযোগী নিজাম উদ্দিনও তাকে ধর্ষণ করে। পরে আহত অবস্থায় পাশের বেরেঙ্গা চা-বাগানের ব্যবস্থাপকের বাংলোর কাছে তাকে ফেলে যায়। সেখান থেকে রুমাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ২৪ জুলাই সে মারা যায়।
মন্তব্য করুন