বন্যায় ভাসলো রাজনগর লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি, নিখোঁজ ১
শংকর দুলাল দেব : প্রবল বর্ষণ! উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং মনু, ধলাই, লাঘাটা নদীর উপচেপড়া পানিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ভাসলো মৌলভীবাজার জেলার রাজনগরের শতাধিক গ্রাম। ফলে এবছরে তৃতীয় দফা বন্যায় উপজেলার শতাধিক গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানিতে এক কিশোর নিখোঁজ হবার খবর পাওয়া গেছে। পানি কিছুটা কমলেও মনু ও ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু নদী ডাইক ও প্রতিরক্ষা বাধের ৮টি এবং ধলাই নদীর কুলাউড়া, কমলগঞ্জের এলাকায় ৫টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিলে রাজনগরের বিস্তীর্ণ এলাক প্লাবিত হয়।
রাজনগর উপজেলা প্রশাসন, মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দুর্গত এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রবল বর্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও মনু, ধলাই ও লাঘাটা নদীর উপচে পড়া পানিতে উপজেলার শতাধিক গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ২১ আগষ্ট মনু নদীর ডাইক ও প্রতিরক্ষা বাধের ৮টি স্থানে এবং ধলাই নদীর কুলাউড়া, কমলগঞ্জের এলাকায় ৫টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিলে রাজনগরের এসব এলাকা প্লাবিত হয়। এদিকে ২২ আগষ্ট রাজনগরের ময়নার দোকান নামক স্থানে মাছ ধরতে গিয়ে হৃদয় আহমদ (১৯) নামে এক কিশোর পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হবার খবর পাওয়া গেছে। জানাযায় নিখোঁজ হৃদয় আহমদ উপজেলার মেদিনীমহল গ্রামের সোনাওর আলীর ছেলে।
এবারের বন্যায় রাজনগরে ১০ হাজার হেক্টর আমন ফসল নষ্ট হয়েছে বলে কৃষি অফিস জানায়। এছাড়াও খাদ্য গোদামে মজুদকৃত ২৫ টন ধান ও চাল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। পানি কিছুটা কমলেও বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় দুর্গত এলাকার লোকজন পানি ও খাদ্য সংকটে পড়েছেন। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের জন্য ৩০ মেঃ টন চাল ও নগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জন প্রতিনিধিহীন রাজনগরের বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলাম, বিএনপি, খেলাফত মজলিশ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ত্রান সহায়তা করে যাচ্ছেন।
এদিকে ২৩ আগষ্ট বিকাল ৪টায় মনু নদীর চাঁদনীঘাট পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ১৩২ সেন্টিমিটার ও মাতারকাপন সুইচ গেইট পয়েন্টে ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা দুর্গত মানুষের আশ্রয়ের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭টি সহ মোট ৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টিম কাজ করছে। দুর্গত মানুষের খাদ্য ও পানীয় জল, গোখাদ্য সহ নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ায় দুর্গত এলাকার লোকজন আত্মীয়-স্বজন ও পাশর্^বর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে রাজনগরের উত্তরাঞ্চলে বহমান কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় রাজনগরের উত্তরভাগ ও ফতেহপুর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী ৫০টি গ্রামের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ আশংকায় রয়েছেন। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, মনু নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে নদী গুলোর বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় রাজনগর সহ জেলার বিভিন্ন এলাকা পলাবিত হয়েছে। আশারাখি ২/১ দিণের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এছাড়াও সৃষ্ঠভাঙ্গন সংস্কারে সব ধরণের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
এ ব্যাপারে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা বলেন, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক মহোদয় রাজনগরের বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। স্যারদের নির্দেশনা অনুযায়ী দুর্গত মানুষের প্রয়োজনীয় সহযোগিতায় কাজ করছি। তাদের খাদ্য সহায়তার কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যার্তদের জন্য ৩০মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। দ্রুত ভুক্তভোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
মন্তব্য করুন