বরাদ্দ বৃদ্ধির জোর দাবী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর হাকালুকি পারে কৃষকের হাহাকার এক ঘন্টায় ওএমএসের চাল শেষ
আবদুর রব॥ হাকালুকি হাওর তীরের বড়লেখা উপজেলার ৪ ইউনিয়নের বোরো ফসল হারানো ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ৮ মে সোমবার থেকে ওএমএস এর চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ডিলারদের দোকানে চাল বিক্রি শুরুর একঘন্টার মধ্যেই ওএমএসের সব চাল শেষ হয়ে যাওয়ায় শত শত দুর্গত নারী-পুরুষ চাল না নিয়েই ফিরে গেছেন। হাওরপারের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের দাবী হাওরপারে যেন ডিলার ও চালের সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয়।
জানা গেছে, হাকালুকি হাওরপারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নে রেজাউল হোসেন, সদর ইউনিয়নে সায়ফুর রহমান, বর্নি ইউনিয়নে সুমন চন্দ্র দাস ও সুজানগর ইউনিয়নে মো. ছায়াদ আহমদ নামে ৪ ডিলারকে ন্যায্য মূল্যে ওএমএসের চাল বিক্রির জন্য নিয়োগ করা হয়।
রোববার বিকেলে ডিলাররা খাদ্য গোদাম থেকে ১ টন করে চাল উত্তোলন করে সোমবার সকাল থেকে বিক্রি শুরু করেন।
সরেজমিনে চাল বিক্রি শুরুর একঘন্টার মধ্যে চালের মজুত শেষ হতে দেখা গেছে। তালিমপুর ইউনিয়নের ডিলার রেজাউল হোসেনের বিক্রয় কেন্দ্রে শত শত দুর্গত মানুষকে চালের জন্য হাহাকার করতে দেখা যায়। সদর ইউনিয়নের ডিলার সায়ফুর রহমান, বর্নি ইউনিয়নের সুমন চন্দ্র দাস ও সুজানগর ইউনিয়নের ডিলার ছায়েদ আহমদ জানান, প্রতিদিন জনপ্রতি ৫ কেজি করে ২০০ জনের নিকট ১৫ টাকা দামে বিক্রির জন্য তাদেরকে ১টন করে চাল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বিক্রি শুরু করতেই দোকানে ৪-৫ শ’ মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। চালের সরবরাহ বৃদ্ধি না করলে খোলাবাজারে চাল বিক্রিতে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশংকা রয়েছে।
হাওরপারের বাসিন্দা ওকিল দাস, সুজিত দাস, সাহাব উদ্দিন, আব্দুল খালিক অভিযোগ করেন ওএসএসের ডিলার নিয়োগ সঠিক হয়নি। তালিমপুর ও সদর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ওএমএসের বুথ না খোলে অনেকটা শহর এলাকায় ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। এতে হাওরপারের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে ৮০-১০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে চাল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তারা হাওরপারের খোঠাউরা, কানুনগোবাজার, সোনাতোলা এলাকায় ডিলার নিয়োগের ও ১ টনের স্থলে প্রতিদিন ৩-৪ টন করে চাল সরবরাহের দাবী জানান।
এদিকে উপজেলায় ৪ ডিলারের মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যের এই চাল বিক্রির কার্যক্রম শুরু হওয়ায় হাওরপারের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। এখন থেকে একমাস প্রতিদিন বড়লেখার নি¤œাঞ্চলের ৮শ’ লোক তাদের পরিবারের জন্য ৭৫ টাকায় ৫ কেজি চাল পাবেন। তবে এই বরাদ্দ ক্ষতিগ্রস্তের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দূর্ভোগগ্রস্তরা।
জানা গেছে, এবছর চৈত্র মাসের অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হন দেশের বৃহত্তম হাকালুকি হাওর পারের বোরো চাষী ও মৎস্যজীবীরা। । হাওর পাড়ের এলাকাগুলোতে দেখা দেয় হাহাকার। সব হারিয়ে দিশেহারা হাওর পাড়ের মানুষের এখন একমাত্র ভরসা সরকারী সহযোগিতার। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্থরা বঞ্চিত হন সরকারী তরফে প্রাপ্ত নানা সহযোগিতার। ক্ষগ্রিস্তদের জন্য সরকার ঘোষিত ওএমএসের চালের জন্য প্রতীক্ষায় ছিলেন হাওর তীরের বাসিন্ধারা। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর হাওরপারের বিভিন্ন এলাকায় সোমবার থেকে শুরু হয় ন্যায্য মূল্যে নির্দিষ্ট দোকানে ওএমএসের চাল বিক্রির কার্যক্রম।
ওই দোকানগুলো থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবার ১৫ টাকা দরে প্রতিদিন ৫ কেজি করে চাল ক্রয় করতে পারবেন। অসহায় কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে সরকারী উদ্যোগে ডিলার নিয়োগ করা হয়। ডিলাররা জানান প্রতিদিন তারা যে বরাদ্ধ পান সেই অপ্রতুল চাল দিয়ে আগতদের সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। তাই বরাদ্ধ বাড়ানোর দাবী তাদের।
বড়লেখা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল জানান, ৪ ডিলারের মাধ্যমে হাওরপারের চার ইউনিয়নে খোলা বাজারে সোমবার থেকে চাল বিক্রি চলছে। চালের সরবরাহ ও ডিলার বৃদ্ধির ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন।
মন্তব্য করুন