বরুণা মাদরাসা প্রাঙ্গনে লক্ষাধিক মানুষের অশ্রুসিক্ত নয়নে ‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত
এহসান বিন মুজাহির॥ লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অশ্রুসিক্ত নয়নে আমিন আমিন ধ্বনিতে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে সিলেট বিভাগের বরেণ্য বুজুর্গ, শায়খুল আরব ওয়াল আজম মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.) এর খলিফা, কুতবে দাওরান,মুজাদ্দিদে যামান আল্লামা শায়খ লুৎফুর রহমান বর্ণভী (রহ.) প্রতিষ্ঠিত, ফেদায়ে ইসলাম শায়খুল হাদিস আল্লামা শায়খ খলিলুর রহমান হামিদি (রহ.) এর স্মৃতিবিজড়িত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বহুমুখী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা মাদরাসার বার্ষিক ইসলামী মহাসম্মেলন (ছালানা ইজলাস) ২০২৩।
শুক্রবার ২২ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় বরুণা মাদরাসার সদরে মুহতামিম মাওলানা শায়খ সাইদুর রহমান বর্ণভীর উদ্বোধনী বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া দিবা রাত্রব্যাপী সম্মেলনের আখেরি মোনাজাত শুক্রবার শেষ রাতে অনুষ্ঠিত হয়। সারা জাহানের মুসলমানদের সুখ, শান্তি, কল্যাণ, অগ্রগতি, হেদায়েত, সমৃদ্ধি, ভ্রাতিত্ববোধ কামনা করে আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন আমীরে আঞ্জুমানে হেফাজাতে ইসলাম ও বরুণার পীর শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী।
বরুণার ছালানা ইজলাস কেন্দ্র করে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওর প্রান্তর থেকে শুরু করে গোটা এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। এ সম্মেলনে প্রতি বছরই লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। আর এটি ছিল সিলেট বিভাগের বৃহত্তম ধর্মীয় মহাসম্মেলন।
সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ এই মহাসম্মেলনে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মাদরাসা ময়দানে এস জমায়েত হয়েছেন। বিশেষ করে বরুণার ছালানা ইজলাসের মাঠে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় জুমআর জামাতে শরীক হতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আলেম-ওলামা, ইমাম-খতিব, বুজুর্গ, বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, সাধারণ মানুষসহ হজরত শায়খে বর্ণভীর (রহ.) মুরিদানের ঢল নামে বরুণা মাদরাসা ময়দানে।
গতকাল শ্রীমঙ্গলের বরুণায় সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় জুমআর জামাত বরুণা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জুমআর নামাজের পূর্বে বয়ান এবং জুমআর নামাজের ইমামতি করেন বরুণা মাদরাসার প্রিন্সিপাল ক্বারী মাওলানা শেখ বদরুল আলম হামিদী।
বরুণা মাদরাসার সদরে মুহতামিম মাওলানা শায়খ সাইদুর রহমান বর্ণভীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে দেশের প্রখ্যাত আলেম, ইসলামি চিন্তাবিদ, বরেণ্য ইসলামি স্কলার ও বুজুর্গানে দ্বীন বয়ান পেশ করেন।
এবারের সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য আলেমদের মধ্যে বয়ান পেশ করেন আমীরে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব শায়খুল হাদিস আল্লামা শায়খ সাজিদুর রহমান, মুনাজিরে জামান আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী, শায়খুল হাদিস হাফিজ মাওলানা ওলীউর রহমান বর্ণভী, বরুণা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ বদরুল আলম, সদরে নায়েবে মুহতামিম মাওলানা শেখ নুরে আলম হামিদী, মাওলানা নজরুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা আতাউল হক জালালাবাদি, মাওলানা হাবীবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমি, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দাল হোসেন খান, মাওলানা মমতাজ উদ্দিন বড়দেশী, মাওলানা আশরাফ আলী হরষপুরী,মাওলানা গাজি সানাউল্লাহ রাহমানি, মাওলানা আলী হাসান উসামা, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা সাদ আমীন বর্ণভী, কেন্দ্রীয় মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আব্দুস সবুরসহ অর্ধশতাধিক দেশবরেণ্য আলেম-উলামা ও ইসলামী স্কলারগণ। এছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিল্পপতি অলিলা গ্লাস কোম্পানির সত্ত্বাধিকারী জিল্লুর রহমানসহ আরও অনেকেই।
বরুণা মাদরাসায় দারুল উলুম দেওবন্দের সিলেবাস অনুসরণের পাশাপাশি কম্পিউটার প্রক্ষিণ, কারিগরি শিক্ষা ও ইলেকট্রিকসহ বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়। দ্বীনি এই প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক উন্নয়ন ও মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। এই মাদরাসার উদ্যোগে সমাজের গরিব ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণের পাশাপাশি টিউবওয়েল, সেলাই মেশিন ও প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইল চেয়ার বিতরণ করা হয়। বরুণা মাদরাসার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে মসজিদে আবু বকর। এখানে একসঙ্গে ৭ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। এত বড় মসজিদ সিলেট বিভাগে আর নেই। বরুণা মাদরাসাটি ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আল্লামা শায়খ লুৎফুর রহমান বর্ণভী।
মন্তব্য করুন