বাংলাদেশের বিটি টু ক্লোনের অর্থডক্স বিশ্বমানের, দুই হাজার কেজি অর্থডক্স যাচ্ছে লন্ডনে
March 30, 2024,
বিকুল চক্রবর্তী॥ ইউরোপের ফেমাস পানীয় অর্থডক্স চা এর মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। প্রয়োজন যথাযত উদ্যোগ। ইতিমধ্যে বিশ্ব বিখ্যাত চা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান লন্ডন টি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ চা বোর্ডের সাথে দুই হাজার কেজি অর্থডক্স চা ক্রয় করার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর মাধ্যমে চায়ের রপ্তানী বাজার পুনরায় সতেজতায় ফিরবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এক সময় বাংলাদেশে উৎপাদিত চায়ের অধিকাংশই আন্তরজাতিক বাজারে রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হতো। কিন্তু বাংলাদেশে চা এর অভ্যান্তরিন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে রপ্তানি ঠেকেছে প্রায় শুন্যের কোটায়। অন্যদিকে কিছু মুনাফা লোভী মানুষ উল্টো কম দামে নিন্মমানের চা আমদানী করে দেশে বিক্রি করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ চা বোর্ড চায়ের সেই সোনালী অতিত ফিরিয়ে আনতে প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে প্রানান্তকর চেষ্টা। এরই একটি প্রয়াস লন্ডনে অর্থডক্স রপ্তানী।
বাংলাদেশ চা গবেষনা কেন্দ্রের পরিচালক চা বিজ্ঞানী ড. ইসমাইল হোসেন বলেন, এক সময় হাতে মলে চা তৈরী হতো। এর পর হাতে ও ছোট পাইজি মেশিনে তৈরী হতো অর্থডক্স। বর্তমান ব্ল্যাকটি তৈরীর সিটিসি মেশিন আবিস্কারের আগে বিশে^ অর্থডক্স চাই বেশি তৈরী হতো। তিনি বলেন, এটি বিশে^র প্রাচীন চা হিসেবেও পরিচিত। সংক্ষেপে এটিকে ওপি টিজি বা অরেঞ্জ পিকো টি-গোল্ডও নামেও অনেকে বলে থাকেন। তিনি বলেন, এর স্বাদ ও গুনাগুনের কারনে ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে রয়েছে এর বিপুল জনপ্রিয়তা।
চা বিজ্ঞানী শেফালী বুনাজী বলেন, অর্থডক্স গতানুগতিক ব্ল্যাক টি এর মতো নয়, এটি সম্পুর্ণ আলাধা ও উন্নত। ডায়বেটিসসহ বিভিন্ন রোগব্যাধিতেও এর কার্যকরিতা প্রবল। বিশেষ করে এ চা পানের সময় সতেজ পাতার ঘ্রাণ মনকে চাঙা করে।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রান্স চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, আমাদেরকে বেশি বেশি চা রপ্তানী করতে হলে ভালো মানের ব্ল্যাকটি এর পাশাপাশি গুনগতমানের অর্থডক্স চা তৈরী করতে হবে। ইউরোপের বাজারে এ চায়ের জনপ্রিয়তা বহুকালের।
লন্ডন টি এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অলিউর রহমান বলেন, বিটি টু ক্লোনের অর্থডক্স চায়ের গুনাগুন বিশ^মানের। তিনি একাধিকবার চা গবেষনা ইনস্টিটিউটে এসেছেন এবং অর্থডক্স চায়ের গুনাগুন পরীক্ষা করেছেন যা বিশ^মানের। এর ফলশ্রুতিতে প্রাথমিক ভাবে শ্রীমঙ্গল বিটিআরআই থেকে দুই হাজার কেজি চা নিচ্ছেন তাঁর লন্ডন টি এক্সচেঞ্জ এর জন্য।
বাংলাদেশ চা বোর্ডর প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট এর পরিচালক ড. রফিকুল হক বলেন, তারা লন্ডন টি এক্সচেঞ্জ এর জন্য দুই হাজার কেজি অর্থডক্স চা তৈরী করছেন। তবে দেশে চা বোর্ড ও দুএকটি চা বাগান ছাড়া এ চা কেউ তৈরী না করায় বর্তমানে মার্কেটে এ চা নেই বললেই চলে । তিনি বলেন, এর লিকার, স্টেন্থনেস ও মলটি ট্রেস্টেও জন্য ইউরোপিয়ানরা এটি বেশি পছন্দ করে।
এদিকে ইউরোপসহ বিশ^ বাজারে রপ্তানীর জন্য এর উৎপাদন বৃদ্ধি ও সামগ্রীক উন্নয়ন প্রয়োজন বলে জানান চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মুহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলদেশের চায়ের অতিত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চা বোর্ড, চা গবেষনা কেন্দ্র প্রানান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চায়ের গুনগত মান ঠিক রাখতে লন্ডন থেকে প্রশিক্ষক এনে চা সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছেন। এ সময় দেশের অনান্য চা বাগান মালিকদের রপ্তানীযোগ্য গুনগতমানের ক্লোন চা তৈরীর পাশাপাশি গুনগতমানের কিছু অর্থডক্স চাও তৈরীর পরামর্স চা বোর্ড চেয়াম্যানের।
শ্রীমঙ্গল মাস্টার টি এর পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বুলবুল ও রুদ্রা টি এর পরিচালক অমিতাভ জানান, মৌলভীবাজার ও সিলেটে প্রচুর পরিমানে লন্ডন ও ইউরোপ প্রবাসী রয়েছেন তারা যখন দেশে আসেন যাওয়ার সময় এই অর্থডক্স চা কিনে নিয়ে যান। কিন্তু বর্তমানে কোন অকসনেই এই চা উঠছেনা। তাই বাজারে অর্থডক্স চা নেই বললেই চলে।
চা শ্রমিক মিনা তাঁতী বলেন, অর্থডক্স চা এর প্রস্তুত প্রনাণী অনান্য চায়ের মতো না। এ চায়ের জন্য বাগান থেকে চা পাতা তুলে আনার পর প্রথমে নিঁখুতভাবে উপরের কুঁড়ি বাছাই করতে হয়। তার পর এক ঘন্টা ফেনের বাতাস দিয়ে উইদারিং করতে হয়। এর পর পাইজি মেশিনে রোলিং করতে হয়। রোলিংএ পর দেড় থেকে দুই ঘন্টা ফার্মেন্টেশন করতে হয়। ফার্মেন্টেশন শেষে দিতে হয় ডায়িং এ। এর পর তৈরী হয় অর্থডক্স। এটি অনেকটা গ্রীন টির এর মতো হলেও এর লিকার লালছে সোনালী।
চা বিজ্ঞানীরা জানান, এ চায়ে প্রচুর পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। প্রতি দুই গ্রাম চা পাতা কাপে দিয়ে ৩ থেকে ৪ বার চা পান করা যায়।
চা সংশ্লিষ্টরা বলছেন এই অর্থডক্স চায়ের মাধ্যেমে আবারও ফিরে আসতে পারে চা রপ্তানীর সেই স্বর্ণালী যুগ।
মন্তব্য করুন