বাংলাদেশের সংবিধানঃ সাংবিধানিক সরকারঃ সংসদীয় গনতন্ত্রঃ সংসদীয় সংস্কৃতিঃ সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এর্শাদের বিলাপঃ পতিত স্বৈর শাসক জাপা চেয়ারম্যান লেঃ জেঃ (অবঃ) এর্শাদের প্রলাপঃ এতক্ষনে অরিন্দম কহিলা বিষাদে॥
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ বাংলাদেশ দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার একটি প্রাচীন ঐতিহ্য মন্ডিত সমৃদ্ধ ভূ-খন্ডের নাম। ১৯৭১ সালে একটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে দেশটির জন্ম। ১৯৭০ সালের সাধারন নির্ব্বাচনে বাংলা ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহানজনক বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করলেও পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল প্রাসাদ ষঢ়যন্ত্রী আমলা- সেনাশাসক চক্র- পাক ফৌজি প্রেসিডেন্ট লেঃ জেঃ এ এম ইয়াহিয়া খান জাতির নির্বাচিত নেতা বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন নি বরং আলোচনার নামে সময় কর্তন করতঃ একাত্তোরের পচিশে মার্চ -অপারেশন সার্চ লাইট- নামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে গনহত্যা, ধর্ষন, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও মানবতা বিরোধী কাজে মেতে উঠেন। ন’মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে পাক হানাদার বাহিনীকে হার মানতেই হয়। অর্জিত হয় আমাদের প্রিয়তম চীর কাংখিত স্বাধীনতা। পাকিস্তানী বন্দী দশা থেকে ফিরে বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিব রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব ভার গ্রহন করেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের আইন মন্ত্রী আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনবিদ ড. কামাল হোসেন মহান জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের খসড়া বিল পেশ করেন। বিলের উপর আলোচনায় সংসদ নেতা বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিব বলেন-“ এদেশের জনগন দীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছে। সংবিধান হবে তাদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের দলিল”- ১৯৭২ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর সংবিধান সর্ব্বোচ্চ আইনের মর্য্যাদা লাভ করে, ১৬ ডিসেম্ভর থেকে তা কার্য্যকর হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লিখিত সংবিধান সমূহের মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধান একটি উৎকৃষ্ট ও শ্রেষ্টতম মানবিক দলিল। বাংলাদেশের লিখিত সংবিধানে গনতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, মানুষের জন্মগত মৌলিক অধিকার-মানবাধিকার, সাম্য, মৈত্রী, ব্যক্তি, বাক ও সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা স্বীকৃত। বাংলাদেশের সংবিধান সকল আইনের আঁধার ও উৎস। বাংলাদেশের সংবিধান মোতাবেক দেশের সরকার পরিচালনার পদ্ধতি হবে সংসদীয় পদ্ধতির। রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার পদ্ধতির মধ্যে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার অপেক্ষাকৃত জবাব দিহিতা মূলক। সংসদ, সংসদীয় কমিটি এবং পার্লামেন্টারী বোর্ড খুবই শক্তিশালী। বৃটেন, জাপান এবং ভারত সংসদীয় পদ্ধতির সরকার পরিচালনায় সাফল্য দেখিয়েছেন। বৃটেন এবং জাপানে দুটি অভিজাত ও প্রাচীন রাজতন্ত্র, রাজা-রানী থাকলেও বৃটেনের হাউস অব কমন্স এবং জাপানের -ডায়েট- খুবই শক্তিশালী। দূর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার এবং সংসদীয় সংস্কৃতির ধারাবাহিক চর্চা নেই। বাংলাদেশের সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির ইতিহাসে হোসেন মোহাম্মদ এর্শাদ একজন বিতর্কিত ব্যাক্তি। ঘৃনিত ও নিন্দিত নাম। একাত্তোর সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় -রংপুরি ছাওয়াল- হোসেন মোহাম্মদ এর্শাদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন লেঃ কর্নেল। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধাচরন কারি এই সেনা কর্মকর্তা পশ্চিম পাকিস্থানে অবস্থান করতঃ পাকিস্তানের অখন্ডতা ও সংহতির পক্ষে জান কোরবান করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙ্গাঁলি অফিসারদের সাহসিকতা ও বীরত্ব মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গৌরবোজ্জল অধ্যায়। একাত্তোরের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক চৌকশ অফিসার স্বদেশ প্রেম ও স্বাদেশিকতায় উদ্ভোদ্ধ হয়ে উচ্চকন্ঠে উচ্চারণ করেন – ও সধলড়ৎ তরধ, ফড় যবৎব নু ফবপষধৎব ঃযব ওহফবঢ়বহফবহপব ড়ভ ইধহমষধফবংয ড়হ নবযধষভ ড়ভ ড়ঁৎ মৎবধঃ ষবধফবৎ ইড়হমড় ইড়হফযঁ ঝযবরশয গঁলরনঁৎ জধযসধহ. পাক বিমান বাহিনীর এক দূঃসাহসী বৈমানিক ফ্লাইট লেঃ মতিউর রহমান পাকিস্তান থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পথে শাহদাত বরন করেন। মেজর আবুল মনজুর (পরে মেজর জেনারেল। এর্শাদের ষড়যন্ত্র ও ইশারায় হত্যা) সহ বিপুল সংখ্যক সেনা কর্মকর্তা পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান কারি বাঙ্গাঁলি সেনা কর্মকর্তাগনকে শাস্তি প্রদানের জন্য যে সামরীক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল তার প্রধান ছিলেন লেঃ কর্নেল হোসেন মোহাম্মদ এর্শাদ। স্বাধীনতার পর প্রত্যাবর্তনকারি সেনা কর্মকর্তা হিসাবে স্বদেশে এসে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে যোগ দেন রিপার্টিয়েটেড অফিসার কর্নেল এইচ.এম এরশাদ। চট্টগ্রাম সফরকালে কতেক বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তা কর্তৃক নির্ম্মমভাবে শাহদাত বরন করেন সফল রাষ্ট্র নায়ক বহুদলীয় গনতন্ত্রের পূনঃ প্রবর্তক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বৃদ্ধ ও অসুস্থ ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি ছাত্তার প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার নিলে উচ্চাভিলাসি ও ক্ষমতা লিপ্সু সেনা প্রধান লেঃ জেঃ হুসেইন মোহাম্মদ এর্শাদ বিভিন্ন অশুভ পায়তারা শুরু করেন এবং অতঃপর একটি নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সংবিধান লংঘনকরে ৮২ সালের ২৪ মার্চ দেশব্যাপী সামরীক আইনজারী করেন। সরকার, সংসদ বাতিল করে নিজেকে ঈযরবভ গধৎংযধষ খধি অফসরহরংঃৎধঃড়ৎ ঈ.গ.খ.অ হিসাবে ঘোষনা করতঃ কোন রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস নেই, সময় মত ব্যারাকে ফিরে যাবার কথা বলেন। ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে দলভাঙ্গাঁ, দল করা, কেনা বেচার রাজনীতি শুর করেন জেনারেল এর্শাদ। এই আপদ এবং বিপদকে বিদায় করতে জাতিকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। তিন জোট এবং ছাত্র সমাজের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শেষে ৯০ সালের ১০ই নবেম্ভর রাষ্ট্র ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন সামরীক স্বৈর শাসক জেনারেল এর্শাদ। ততদিনে অনেক রক্ত ঝরেছে এই বাংলায়। জাফর, জয়নাল, রাউফুন বসুনিয়া, শাহজাহান সিরাজ, ডা. মিলন সহ অনেকের মায়ের বুক খালি হয়েছে। ন’বছরের সামরীক স্বৈরাচার এখন নিজেকে মিষ্টি আমের আচার ভাবতে স্বস্থিপান, স্বৈরাচার বললে নাখোশ ও নারাজ হন, সেদিন এক সংবাদপত্রে দেখা গেল স্বৈরাচারের প্রমান চান তিনি। সেনাপ্রধান এর্শাদের বিসমিল্লাতেই ছিল গলদ। কারন সামরীক আইন জারী করাই সংবিধানের লংঘন, কারন একটি সরকার ও সংসদের বিকল্প আরেকটি সরকার ও সংসদ সেনাপ্রধান নহেন। সামরীক আইনজারী করে জেনারেল এর্শাদ সি.এম.এল. এ হয়েছেন। সকাল-সন্ধ্যায় বুলি পাল্টানো ও আবুল তাবুল কথা বলায় খুবই ওস্তাদ এই এইচ.এম এর্শাদ সাহেব। এই জন্য ‘মার্শাল ল’ সংক্রান্ত পদবী সি.এম.এল. এ -কে বলা হত ঈধযংঃষব সু ষধংঃ ধহহড়ঁহপবসবহঃ। সুদর্শন, সুবেশী, লেডিকিলার জেনারেল এর্শাদ নারী কেলেংকারীতেও পিছিয়ে ছিলেন না। মেরী-বিদিশার কথা ও কাহিনী দেশবাশী জানেন। লন্ডনের বিখ্যাত দৈনিক ওবজার্বার এর্শাদী প্রেমভালোবাসার সচিত্র সংবাদ প্রতিবেদন করেছিল “ জরপযবংঃ সধহ ড়ভ ধ ঢ়ড়ড়ৎবংঃ পড়ঁহঃৎু” শিরোনামে। ২০১৪ সালের পাঁচই জানুয়ারীর জাতীয় সংসদ নির্ব্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাবার ঘোষনা দিয়ে ছিলেন জাপা প্রধান এইচ.এম এর্শাদ। বি.এন.পির নেতৃত্বাধীন বিশদলীয় জোট এবং সি.পি.বি বাসদের নেতৃত্বাধীনে বাম জোট ডা, প্রফেসর এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ডক্টর কামাল হোসেন, বঙ্গঁবীর কাদের সিদ্দিকী, আশম রব, মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ জাতীয় নেতা একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অংশ গ্রহন মূলক নির্ব্বাচনের দাবী জানিয়ে ছিলেন। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে আওয়ামীলীগ ছাড়া বাদ বাকী দল সমূহের কোন গন ভিত্তি নেই। এসব ছোট দলের বড় নেতারা নৌকায় সওয়ার না হলে নির্ব্বাচনী বৈতরনীপার হবার কোন সম্ভাবনা নেই। জেনারেল এর্শাদ বলেছিলেন আওয়ামীলীগের সঙ্গেঁ তিনি বেহেশতে যেতেও রাজী নন, নির্বাচনে গেলে জনগন তাকে থুথু দেবে। ডিগবাজি বিশারদ জেনারেল এর্শাদ বনানীর বাসা থেকে পেছনের পথে কথিত চিকিৎসার জন্য সি.এম.এইচ.এ. গেলেন। ভর্ত্তি হলেন। চিকিৎসা নিলেন। গলফ ও খেল্লেন। জাপার রাজনীতির মঞ্চ থেকে চেয়ারম্যান এর্শাদ আউট হলেন। ইন হলেন কো-চেয়ারম্যান প্রিয় জীবন সঙ্গিঁনী বেগম রওশন এরশাদ। সিট ভাগাভাগি বাটা-বাটির নির্ব্বাচনে সোয়া তিন ডজন সিট ও পেলেন বেগম সাহেবা। সাহেব হাসপাতাল থেকে থেকেই ফাউ-মাগনা এম.পি. হলেন। কত নাটক করে শফথও নিলেন। বাজিমাত করলেন পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদায় মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়ে। বেগম রওশন এর্শাদ সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হলেন। তাঁর দলজাপা দেশ জাতি ও বিশ^বাসীকে অবাক করে দিয়ে একজন পূর্ন ও দুই জন হাফ মন্ত্রী পেলেন। নিলেন। সংসদীয় পদ্ধতির মন্ত্রী পরিষদ শাসিত সরকারে সংসদ নেতা এবং সংসদে বিরোধী দলীয় নেতাও থাকেন। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে লিডার অব দি অপজিশন ছায়া সরকার- বিকল্প সরকার। সংসদে গার্ডিয়ান অব দি গবর্নমেন্ট। কোন কারনে লিডার অব দি হাউজ সংসদে সংখ্যা গরিষ্টতা হারালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি লিডার অবদি অপজিশনকে সংখ্যা গরিষ্টতা প্রদর্শণ পূর্বক সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। এখানে সরকার ও বিরোধী দল মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। সংসদীয় পদ্ধতির জবাবদিহি মূলক সরকারের চেতনায় আঘাত হানা হয়েছে। সংবিধান লংঘন-অবজ্ঞা-অবমাননা করা হয়েছে। পৃথিবীতে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় এমন জগাখিছুরি মার্কা সরকার আর কোথাও নেই। মন্ত্রী সভায় পাশ হওয়া কোন বিল সংসদে এলে মন্ত্রী সভার কোন সদস্যের বিরোধিতা করার অবকাশ নেই, সংবিধানের সত্তোর অনুচ্ছেদে সেই বিধি নিশেধ রয়েছে। ফলতঃ চার বাৎসরিক কাল এর্শাদী জাতীয় পার্টি ছিলেন না ঘরকা না ঘাটকা। খন্ডিত জাপার চেয়ারম্যান জেনারেল এর্শাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়ে পূর্ণ মন্ত্রীর মর্য্যাদায় বেতন, ভাতা, দপ্তর দাপ্তরিক সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন, নিয়েছেন। জনগনের টেক্সের টাকায় লক্ষ-কোটি টাকার সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন ফাউ-মাগনা কোন কাজ কর্ম্ম না করেই। সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সংকটে জাতি জাতীয় সংকটের সম্মুখীন। সরকারি কুটনৈতিক দূর্বলতা-ব্যর্থতার কারনে ভারত, রাশিয়া, চায়না আমাদের পাশে নেই। জাতির এই ক্রান্তিকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছু সিট পাবার, ক্ষমতার কাছাকাছি যাবার প্রচেষ্টায় আছেন। বিগত দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে তিনি তার বেগ সাহেবা এবং তার দল ধান্দামান্দা-ধানাই-পানাই এবং দৃশ্যতঃ দূনম্বরী করে ভোটার বিহীন নির্ব্বাচনে সংসদের দু,নম্বর দল হয়েছিলেন-এখনও বহাল তবিওতে আছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্ব্বাচনে আওয়ামীলীগের সঙ্গেঁ আতাত করে আবার অধিক আসন এবং বাড়তি সুযোগ সুবিধা সমেত সংসদে দু,নম্বর দল কিংবা তাঁর ভাষায় ক্ষমতায় যাবার সিড়ি হতে চান। সেই চেষ্টায় স্বামী স্ত্রী মিলে সকাল সন্ধ্যায় প্রলাপ-বিলাপ কথার ফুল ঝুরি আর মুচকি মিরমিরি হাসি হাসছেন। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর বিশেষ দূত জাপা প্রধান জেনারেল এর্শাদের প্রিয় পতিœ সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, জাপার কো-চেয়ারপার্সন বেগম রওশন এর্শাদ বিগত সাতাইশে ফেব্রুয়ারী আঠারো সালে মহান জাতীয় সংসদে ভাষন দান কালে বিশুদ্ধ বাংলা ভাষায় বলেন প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম আমাদের মন্ত্রী গুলোকে উইথড্রো করে নেন। আমাদের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে দেন। কিন্তু আমি জানি না কেন সেটা হয় নি। আমরা সরকারি দল না বিরোধী দল কোনটা আমরা ? এইভাবে টানাটানি করে বিরোধী দল হওয়া যায় না। না হয় আমরা চল্লিশ জনকে সরকারে নিয়ে নেন। বিরোধী দল দরকার নেই। ” দৈনিক প্রথম আলো শেষ পৃষ্টায় পরদিন গুরুত্ব সহকারে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন “সরকারি দল না বিরোধী দল কোন টা আমরা? প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন রওশনের” শিরোনামে। সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়- জাতীয় পার্টির সম্মান বাচাতে মন্ত্রী সভা থেকে দলটির সদস্যদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার এই অসহায় আর্তনাদ ও করুন বিলাপে বাংলা ও বিশ^বাসী অবাক হলেন। টক অবদি টাউন নয় টক অবদি নেশনে পরিনত হয় বিরোধী দলীয় নেতার এই বোমা ফাটানো বক্তব্য। পৃন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ভূবনে তোলপাড় শুরু হয়। মধ্য রাতের টক শো সমূহে এহেন বুর্বকি বক্তব্যের নেতিবাচক সমালোচনা হয়। দৈনিক ইনকিলাবে ষ্টালিন সরকার লিখেন রওশনের বিলাপ ও ইতিহাসে এর্শাদের দায়। প্রতিবেদনে বলা হয় – এতক্ষনে অরিন্দম কহিলা বিষাদে- জাতীয় সংষদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এর্শাদের বক্তব্য শুনে দেশ-বিদেশের মানুষ কবি মাইকেল মধুসুধন দত্তের এই পংক্তি মনে করছেন। এতদিনে বুঝতে পারলেন আত্ব পরিচয় হীনতায় ভূগছেন তিনি। একটি জাতীয় দৈনিকের তথ্য মতে “ক্যেরি কেচারের এই নির্ব্বাচনের বদৌলতে হোটেলবয়, মুদি দোকানদারও এম.পি হয়েছেন-” জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো দোসরা মার্চ সংখ্যায় দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিষ্ট কামাল আহমদ “আত্ব পীড়ন না তামাশা নাকি অন্য কিছু” শিরোনামে যথার্থই বলেন -“ প্রশ্ন হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কৃপা নির্ভর বিরোধী দলীয় নেতার পদে আসীন রওশন এর্শাদের এই আত্বোপলব্ধিতে চার বছর সময় লাগল কেন-? ”সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এর্শাদের এই বিলাপে দেশব্যাপী ধিক্কার ও তোলপাড় হলেও নাটের গুরু এবং অঘটন ঘটন পটিয়সী জাপা একাংশের স্বঘোষিত চেয়ারম্যান পতিত স্বৈরাচার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূত অবঃ লেঃ জেঃ হু.মু এর্শাদ নির্লজ্জের মত প্রিয় পতিœর পক্ষে সাফাই গাইলেন, তিনি নিজেও যুক্তি দেখালেন মন্ত্রী সভায় যোগদান রাজনৈতিক কৌশল ছিল। সম্প্রতি তিনি পত্র পত্রিকায় প্রেস ও মিডিয়ায় বলছেন, নিজে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর উপদেষ্টার পদ এবং জাপা দলীয় সরকারের তিন মন্ত্রী শিঘ্রি পদত্যাগ করবেন। এতদিন জাপা সরকার দল ও বিরোধী দল, উভয় দল হয়ে গাছের টাও নীছের টা খেলেন এখন মনে হয় সম্পূর্ণ খাছ খাওয়ার ইচ্ছায় আছেন। নবোতিপর বিশ^বেহায়া হু.মু. এর্শাদ এখন জীবনের পড়ন্ত বেলায়, এখন তার আর- বেইল নাই। তিনি খন্ডিত এই মানব জীবনে- একজীবনে অনেক কিছু হয়েছেন, অনেক কিছু পেয়েছেন। পেশাদার সৈনিক হিসাবে কৃতিত্ব ও ক্ষমতার শীর্ষ বিন্দুতে আরোহন করেছেন। সেকেন্ড লেঃ থেকে লেঃ জেনারেল হয়েছেন। সামরীক আইন জারী করে সি.এম.এল.এ. হয়েছেন। হয়েছেন দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতিও। জীবনে কোনদিন মিটিং মিছিলে না গিয়ে একটি দল গঠন করে নিজেই চেয়ারম্যান হয়েছেন এখনও আছেন। হয়ত আজীবনই থাকবেন। তার স্বৈর শাসনামলে জীবনের যত সুখ-যত প্রাপ্তি তার পদতলে লুটুপুটি খেয়েছে। সর্ব্বোপরি হয়েছেন কবিও তবুও এই জীবন সায়াহ্নে এসেও তার ক্ষমতার স্বাদ যায় নাই। এখনও তার চাই চাই পাই পাই মনোভাব। আবার ক্ষমতায় যাবার কি আকুল আকুতি। কি স্বাপ্নীক আকাঙ্খা। অথছ এখন এই বয়সে দেশ ও জাতির কাছে মাফ চেয়ে আল্লাহর দরবারে তওবা-তায়ীদ করে তার দিবা রাত্রি আল্লাহ আল্লাহ এবাদত বন্দেগী করার কথা, তা না করে এখনও তিনি ষ্ট্রং হেয়ার ডাই, ক্লিন শেভ, কড়া মেকআপ করে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে মিডিয়ার সম্মুখে আসছেন-কথার ফুলঝুরি ছুটিয়ে আবুল তাবুল বকছেন- যা ন্যাক্কার জনক ও নিন্দনীয়। বেগম রওশন এর্শাদের অসহায় বিলাপে দেশ জাতি ও বিশ^বাসির কাছে প্রমানিত হল দেশে কোন বিরোধী দল নেই, চলছে একদলীয় শাসন। তার কথাই বলে দেয়, প্রমান হয় ভোটার বিহীন প্রশ্নবিদ্ধ অগ্রহনযোগ্য নির্ব্বাচনের দশম জাতীয় সংসদ কার্যকর ছিলনা, ছিল নিস্প্রান। নিস্প্রভ। হাওর-বাওর-বিল-বাদালের দেশ বৃহত্তর সিলেট। মৎস সম্পদে ভরপুর,সিলেটি জিওল মাছ খুবই প্রসিদ্ধ। শীত কালে বিল বাদালের কই, শিং, মাগুর, শোল, গজার মাছ আহরন বরে চীনা মাটির মটকায় রাখা হয়। ঢাকায় যায়। আত্বীয় স্বজনকেও উপহার দেওয়া হয়। এই জিওল মাছ মটকায় (কলস আকৃতির একটি বৃহৎ পাত্র) বেশিদিন থাকলে পোকায় ধরে স্বাদ হীন হয়ে যায়, সাইজ ও ছোট হয়। পুরাতন জিওল মাছ যেমনি পছা, পুকা যুক্ত ও স্বাদহীন তেমনি রাজনৈতিক- জিওল এই সাবেক বিশ^ বেহায়ার জাতীয় রাজনৈতিক মঞ্চে রাজনৈতিক অঙ্গঁনে, জনতার কাতার মূল্যহীন। রংপুর সিটি কর্পোরেশন এর নির্ব্বাচন ছাড়া বিগত দিনে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্ব্বাচনে বাংলাদেশের বুঝদার ও বিজ্ঞ ভোটার সমাজ হু.মু.এর্শাদীয় জাতীয় পার্টিকে লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের সংগ্রামী মহাজনতা ভোটার গনকে বেআক্কল ভাবা আহাম্মকি ও বুর্বকি। আশা করা যায় দেশীয় রাজনীতি, দেশ ও জাতির ভাগ্য এবং নির্বাচন নিয়ে সাহেব-বিবি হু.মু.এর্শাদ এবং বেগম রওশন এর্শাদ আর আহাম্মকি ও বুর্বকি করবেন না, দেশ ও জাতির এই ক্রান্তি কালে জাতি তাই প্রত্যাশা করেন।
[ষাটের দশকের সাংবাদিক। মুুক্তিযোদ্ধা। সিনিয়র এডভোকেট হাইকোর্ট। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব]
মন্তব্য করুন