বাংলাদেশে কলেজ ছাত্রদের ড্রপআউট ও আমাদের করণীয়
মোছাঃ সাবিনা ইয়াছমিন॥ আমাদের শিক্ষার ধরণে নানা রকম বৈচিত্র্য রয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে ৪ টি ক্যাটাগরির শিক্ষা রয়েছে যার মধ্যে সরকারী ও অন্যান্য শিক্ষা ব্যবস্থা অন্যতম।
সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে ব্যাপক বৈষম্যও রয়েছে। শিক্ষার প্রসারে বড় অঙ্কের বরাদ্দ রাখা হলেও সরকারি পর্যায়ে তা ততটা ফলপ্রসু হচ্ছে না এবং প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধান প্রক্রিয়ার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো খুবই দুর্বল।
কলেজ ড্রপআউটকে এমন একজন ছাত্র হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যে মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনো কারণে বা অন্য কলেজে স্থানান্তর ছাড়াই শিক্ষা শেষ করার আগে কলেজ ত্যাগ করে।
শিক্ষিত পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের কলেজ কর্তৃক প্রদত্ত অ্যাসাইনমেন্ট প্রস্তুত করতে সহায়তা করে। অন্যদিকে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা পরিবার বা গৃহ শিক্ষকের কাছ থেকে সেরুপ সাহায্য পায় না।
এইভাবে, অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী ক্লাস কার্যক্রমে কোন আগ্রহ না পেয়ে এক সময় বাদ পড়ে যায়। অশিক্ষার কারণে বেশিরভাগ অভিভাবক তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার যত্ন নিতে পারেন না।
পরিবারের চাপে চাকরি নেয়া এটাও ঝরে পড়ার একটা বড় কারণ। কখনও কখনও ছাত্ররা তাদের বন্ধুদের প্রভাবেও স্বেচ্ছায় স্কুল ছেড়ে যায়।
অনেক ঝরে পড়া ছাত্ররা বাড়িতে তাদের বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে তাদের ছোট ভাইবোনদের যত্ন নেয়। তারা তাদের পরিবারকে সমর্থন করার জন্য আয় তৈরির কাজেও জড়িত হন।
ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে সমাজে কাজ করছে। তাদের আয় খুবই কম। তারা কখনো কখনো বেআইনি কাজ করেও বেশি অর্থ উপার্জন করতে চায় এবং কদাচিৎ তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেল পুনর্বাসন কেন্দ্রেও যায়।
ড্রপআউটের হার এবং মাদকের প্রভাব একে অপরের সাথে যুক্ত। ঝরে পড়া বন্ধ করা না গেলে এবং মাদকের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে জাতির জন্য বিরাট ক্ষতি হবে।
ঝরে পড়ার কারণ : ১ম সর্বোচ্চ = ৩২% দারিদ্র্য। ২য় সর্বোচ্চ = ৩০% অসচেতনতা। ড্রপআউটের সর্বোচ্চ প্রভাব হচ্ছে অদক্ষ শ্রমিক হিসাবে বাড়িতে কাজ করা। মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির পরিসীমা ১০০% পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
ভালো শিক্ষকরা কলেজে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করে। কলেজে শিক্ষকদের নিয়মিত উপস্থিতি ড্রপআউট কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হতে পারে এবং ছাত্রছাত্রীদের পড়লেখায় বেশি করে উৎসাহিত করাটাও একজন শিক্ষকের অন্যতম দায়িত্ব হিসেবে গণ্য বলে মনে করতে হবে।
২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নারীদের ঝরে পড়ার হার ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে। বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ভালো অগ্রগতি অর্জন করেছে।
এখনো ঝরে পড়া আমাদের দেশে শিক্ষার অগ্রগতিতে একটি বড় বাঁধা। নারী পুরুষ বৈষম্যও কিছু ক্ষেত্রে সার্বজনীন শিক্ষার প্রবেশাধিকারে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই ব্যবধান কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবসম্মত কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে।
শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমাদের যেভাবেই হোক ঝরে পড়ার হার কমাতে হবে এবং তালিকাভুক্তির হার বাড়াতে হবে।
এখন প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উঠছে- আমরা কি আমাদের শিক্ষার বিদ্যমান মান দিয়ে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত? পরিবর্তনের জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি এবং ইতিবাচক মনোভাব দরকার।
শিক্ষাকে উৎসাহী ও শিক্ষার্থীবান্ধব করতে হবে। মানসম্পন্ন শিক্ষাসহ পরীক্ষায় ১০০% সাফল্য আমাদের অগ্রাধিকার হবে।
আমরা বিশ্বাস করি আমাদের সন্তানদের সহজাত প্রতিভা অবশ্যই ফুটে উঠবে যদি সঠিক নার্সিং করা যায়। শুধু প্রয়োজন তাদের প্রতি দেশের মানুষের ভালোবাসা ও সহানুভূতি দেখানো।
একজন যোগ্য নাগরিক হিসেবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং একটি মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষিত শ্রেণি তৈরি করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।
তাহলেই আমরা আমাদের জনগণের দীর্ঘদিনের লালিত “ভিশন-২০৪১” কে বাস্তবায়িত করতে পারব ইনশাআল্লাহ।
লেখক : মোছাঃ সাবিনা ইয়াছমিন, প্রভাষক (ইংরেজি), এম এ গনি আদর্শ কলেজ, কুলাউড়া।
মন্তব্য করুন