বাঙালী জাতির পথ প্রদর্শক বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি: আছি যার নীতিতে অটুট: থাকবো চীরকাল
মকিস মনসুর॥ ১৭ মার্চ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালন করবে বাংলাদেশ। আজকের আমার এই লেথা বাঙালী জাতির পথ প্রদর্শক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে। কিন্তুু কি দিয়ে শুরু করবো ভেবে উটতে পারছি না. যে নেতার জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। আজকের এই দিনে সেই বঙ্গবন্ধুকে সরণ করছি যার চিন্তায় চেতনায় বাঙ্গালী জাতির সম্পৃক্তি ও অক্ষয় ভালোবাসা মিশ্রিত বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আজকের এই বাংলা ও বাঙ্গালী। যার জন্য জাতি পেয়েছে লাল বৃত্ত সবুজ পতাকা। এই প্রবাসের মাটিতে আজ আমরা গৌরব ও গবের সাথে উচ্চারন করছি বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। যার জন্য বিশ্বের মানচিত্রে স্তান পেয়েছে বাংলাদেশ নামক শব্দটি। লেখার শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানিয়ে মহাণ আল্লাহ্ যেনো জান্নাতবাসী করেন এই দোয়া করার জন্য সবার প্রতি আহবান জানাচ্ছি। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তত্কালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফুর রহমান এবং সায়রা বেগমের ঘরে জন্ম নেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছয় ভাই -বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল ও কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়াশনা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেন। ১৮ বছর বয়সে বেগম ফজিলাতুন্নেসার সাথে তাঁর বিয়ে হয়। তাদের ২ মেয়ে -আজকের প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিন ছেলে- শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল। কিশোর বয়সেই বঙ্গবন্ধু সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় তার বিপ্লবী জীবন।
১৯৪০ সালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠন নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। কট্টরপন্থী এই সংগঠন ছেড়ে় ১৯৪৩ সালে যোগ দেন উদারপন্থী ও প্রগতিশীল সংগঠন বেঙ্গল মুসলিম লীগে। এখানেই সান্নিধ্যে আসেন হুসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে রক্ষণশীল কট্টরপন্থী নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কর্তৃত্ব খর্ব করতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। ভাষা আন্দোলনের সময় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন শেখ মুজিব। ১৯৪৮ সালে ভাষার প্রশ্নে তাঁর নেতৃত্বেই প্রথম প্রতিবাদ এবং ছাত্র ধর্মঘট শুরু হয় যা চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেন দূরদর্শীতা এবং প্রজ্ঞাসম্পন্ন এক কুশলী রাজনৈতিক নেতা। এসময় শেখ মুজিব মুসলিম লীগ ছেড়ে দেন এবং হোসেন সোহরাওয়ার্দী এবং মাওলানা ভাসানীর সাথে মিলে গঠন করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। তিনি দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি মন্ত্রী হন মুজিব। ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রিসভায় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি।
১৯৬৩ সালে হোসেন সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিব। তিনি ছিলেন আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র তত্ত্বের কট্টর সমালোচক। ১৯৬৬ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এই ছয় দফা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের রূপরেখা।
মুজিবের ৬ দফার প্রতি জনগণের ব্যাপক সমর্থনে ভীত হয়ে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার শেখ মুজিবকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বাংলার সমস্ত জনগণ। জনরোষের কাছে নতি স্বীকার করে এক পর্যায়ে তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় শোষকগোষ্ঠী। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে গণসম্বর্ধনা দেওয়া সেখানেই উত্থাপিত হয় এগার দফা দাবি যার মধ্যে ছয় দফার সবগুলোই দফাই অন্তর্ভুক্ত ছিল। লাখো মানুষের এই জমায়ে়তে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়৷
১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আয়োজিত এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। ৫২, ৬২, ৬৬ আর ৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের পথ পেরিয়ে ৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় সবই বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামী ইতিহাসের এক একটি মাইলফলক। আর এই সংগ্রামের উৎস ছিলেন বঙ্গবন্ধু মুজিব। দীর্ঘ পরিক্রমায় ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে সারা দেশ থেকে আগত লক্ষ লক্ষ অপেক্ষামান জনতার. সামনে এসে বাঙ্গালী প্রানের নেতা বঙ্গবন্ধু, কোন কাগজে লেখা কবিতা নয়, কারো বলে দেওয়া কোন ভাষন নয়, তাঁর হৃদয়ের গভীর অনুভুতি, দেশমাতৃকার প্রতি অসীম ভালোবাসা, বাঙ্গালীর প্রতি অসীম মমত্ত্ববোধ সবকিছু মিলিয়ে দরাজ কন্ঠে পাঠ করলেন তার অমর কাব্য এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। সেদিনের দেওয়া ভাষণে তিনি আত্মপরিচয়, স্বাধীনতা, অধিকার এবং মুক্তি অর্জনে যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। তার সেই বজ্রকণ্ঠের ভাষনটি ইতিমধ্যে সর্বকালের সকল বিপ্লবী মহানায়কদের ভাষনের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বলে স্বীকৃতি লাভ করেছে। জেকব এ ফিল্ড বিশ্বজোড়া ভাষণের যে সংকলনটি প্রকাশ করেছেন তার নাম ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেসস: দ্য স্পিচেস ইন্সপায়ারড হিস্ট্রি’। ২০১৩ সালে লন্ডন থেকে এই বইটি প্রকাশিত হয়। এই বইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি ‘দ্য স্ট্রাগল দিস টাইম ইজ দ্য স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেনডেন্স’ শিরোনামে রয়েছে। এই বইটি শুরু হয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩১ সালে দেওয়া ভাষণ দিয়ে। শিরোনাম : ‘ফিউরেনাল ওরেশন’। বইটিতে অন্তর্ভুক্ত দ্বিতীয় ভাষণটি আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটির জন্য আমরা গর্বিত।
পরিশেষে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকহানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর নির্বিচারে গণহত্যা চালানোর অব্যবহিত পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এদিকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন জাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এমন একটি ব্যক্তির নাম চলে আসে, যে ওই জাতির ক্রান্তিকালে জাতিকে সঙ্কট থেকে মুক্তির দিশা দেখিয়ে উত্তরণের পথে নিয়ে যায়। এমন একজন মহামানব বা মহান ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শুধু একটি নামই নয়, একটি মুক্তির পথ, একটি বিশ্বাসের নাম। তিনি ছিলেন বাঙ্গালি জাতির পথ প্রদর্শক ও জাতির মুক্তির নায়ক। যতকাল ধরে পদ্মা-মেঘনা-গৌরী যমুনা বহমান থাকবে, ততকাল বঙ্গবন্ধুর নাম বাঙালী জাতির অন্তরে লালিত হয়ে থাকবে চীরঅম্লান হয়ে। বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখার সুযোগ আমার হয়নি. কারন ১৯৭০ সালে আমার জন্ম। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট ঘাতকরা যদি জাতির জনককে হত্যা না করতো তাহলে আমাদের মত প্রজন্মদের হয়তবা এই বিশাল মনের মহানায়কের সানিদ্য পাবার সুযোগ হতো। এই আপসোস শুধু আমার একার নয়, আমাদের মত নব প্রজন্মদের সন্তানদের আজীবন এই আপসোস বহন করে চলতে হবে। তবুও আমার শৈশবের লালিত স্বপ্ন কৈশোরের উচ্ছ্বাস, যৌবনের অনুভূতি, ভালোলাগা ও-ভালোবাসার প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের স্কুলজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শিক গর্বিত-ছাত্রলীগ কর্মী হিসাবে কাজ করার যে সুযোগ হয়েছিলো। এজন্য নিজেকে ধন্য ও সুভাগ্যবান মনে করছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখতে না পারল ও ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট হত্যাকান্ডের খুনীদের বিচারের আন্দোলনের রাজপথের সৈনিক হিসাবে ছাত্রজীবনে লড়াই সংগ্রাম করেছি। হয়েছে বিচার, এটাই আমার রাজনৈতিক জীবনের চরম পাওয়া। আজ ও বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদশে রয়েছি অটল.থাকবো চীরকাল এই বাসনা রেখে বঙ্গবন্ধুর সপ্ন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলার আলোর মিছিলকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাবো বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবসে হোক আমাদের দীপ্ত শপথ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখক পরিচিতি: বৃটেনের কমিউনিটি সংগঠক সাবেক ছাত্রনেতা ও টিভি সাংবাদিক মকিস মনসুর আহমদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য, ওয়েলস যুবলীগের সাবেক সভাপতি এবং জাস্টিস ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১ ইউকের কনভেনার এর দায়িত্ব পালন করছেন।
মন্তব্য করুন