বাঙ্গালী জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা…
মকিস মনসুর॥ ২৬ মার্চ বাঙালির শৃঙ্খল মুক্তির দিন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ আর ১৯৭১-২০১৭ চড়াই-উৎরাইয়ের সাড়ে চার দশক, রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে-পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লে জনযুদ্ধের আদলে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে। ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ঢাকায় অজস্র সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ ও ই.পি.আর.-কে হত্যা করে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল আওয়ামী লীগ প্রধান বাঙালিদের তৎকালীন জনপ্রিয় নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেফতারের পূর্বে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৯৭১ সালের এইদিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ভবন) থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইপিআরের ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ডাক দেন। ইংরেজিতে ঘোষণা করা সেই স্বাধীনতা ঘোষণার বাংলা অনুবাদ হলো, ‘এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’ একই সঙ্গে তিনি বাংলায় যে বার্তা পাঠান সেটি হলো, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি।
১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকেই জাতি এই দিনটিকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস হিসাবে পালন করে আসছে। বাঙ্গালী জাতির বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে আমাদের মহান স্বাধীনতা..।
১৯৫২, ৬২,৬৪. ৬৬ আর ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ পেরিয়ে ৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় সবই বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামী ইতিহাসের এক একটি মাইলফলক। আর এই সংগ্রামের উৎস ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘ পরিক্রমায় ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে সাড়া দেশ থেকে আগত লক্ষ লক্ষ অপেক্ষামান জনতার সামনে এসে বাঙ্গালী প্রানের নেতা বঙ্গবন্ধু, কোন কাগজে লেখা কবিতা নয়, কারো বলে দেওয়া কোন ভাষন নয়, তাঁর হৃদয়ের গভীর অনুভুতি, দেশমাতৃকার প্রতি অসীম ভালোবাসা, বাঙ্গালীর প্রতি অসীম মমত্ত্ববোধ সবকিছু মিলিয়ে দ্বরাজ কন্ঠে পাঠ করলেন তার অমর কাব্য এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। সেদিনের দেয়া ভাষণে তিনি আত্মপরিচয়, স্বাধীনতা, অধিকার এবং মুক্তি অর্জনে যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। তার সেই বজ্রকণ্ঠের ভাষনটি ইতিমধ্যে সর্বকালের সকল বিপ্লবী মহানায়কদের ভাষনের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বলে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষনের পর একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক জনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গোটা জাতি। পাকিস্তান সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাব ও বহুমাত্রিক শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সুদীর্ঘকালের সংগ্রাম, আপোসহীন আন্দোলন এবং একাত্তরের নয়মাস সশস্ত্র জনযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু এই দেশেরই কিছু কুলাঙ্গার হানাদারদের সহযোগিতা করেছিল, যারা রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামে পরিচিত। তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে গণহত্যায় শুধু সহযোগিতাই করেনি, নিজেরাও সংঘটিত করেছিল মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য অপরাধ। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে একাত্তরের এই দিনে যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ, দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। দেরিতে হলেও হয়েছে জাতিরজনক হত্যাকান্ডের বিচার। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার চলছে । ইতিমধ্যে বেশ কিছু মামলার দ-ও কার্যকর হয়েছে, আমরা আশা করি, বিদেশে পালিয়ে থাকা সকল দ-প্রাপ্ত অপরাধীদের ধরে এনে এই বিচার-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে রায় কার্যকর করে জাতিকে পুরাপুরি কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল জাতীয় ঐক্য, ন্যায় ও গণতন্ত্র; স্বাধীনতার মর্মবাণী ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিকÍসব ধরনের অন্যায়-অবিচার ও বৈষম্য থেকে মানুষের মুক্তি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ সামনের পথে এগিয়ে চলছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশ সরকারের সফল প্রধানমন্ত্রী, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার গনতন্ত্রের মানস কন্যা বঙ্গবন্ধুর তনয়া দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলার আলোর মিছিলকে এগিয়ে নিতে সবার সহযোগীতা কামনা সহ মহান এই স্বাধীনতা দিবসের আজকের আমার লিখনির মাধ্যমে গভীর শ্রদ্ধা জানাই স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ জাতীয় ৪ নেতা সহ মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী. ও সকল সেক্টর কমান্ডারবৃন্দ এবং বাঙ্গালী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ত্রিশ লক্ষ শহীদান এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবার ও নৃশংসতার শিকার দু লক্ষ মা-বোনদের প্রতিও রইল আন্তরিক সংহতি ও সহমর্মিতা, সালাম ও শ্রদ্ধা জানিয়ে যে কথাটি বলতে চাই যাদের অবদানের কারনে ভালোবাসা মিশ্রিত বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আজকের এই বাংলা ও বাঙ্গালী। যাদের জন্য জাতি পেয়েছে লাল বৃত্ত সবুজ পতাকা। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের এই গৌরব উজ্জ্বল কাহিনী জানে না, চলে আসছে ইতিহাস বিকৃতির নগ্ন রাজনীতি, এথেকে আমাদের বের হয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নব প্রজন্মের সামনে তুলতে ধরতে হবে এই হোক আজকের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে আপনার -আমার – আমাদের দীপ্ত শপথ।
লেখক পরিচিতি: বৃটেনের কমিউনিটি সংগঠক সাবেক ছাত্রনেতা ও টিভি সাংবাদিক মকিস মনসুর আহমদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য, ওয়েলস যুবলীগের সাবেক সভাপতি এবং জাস্টিস ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১ ইউকের কনভেনার এর দায়িত্ব পালন করছেন।
মন্তব্য করুন