বানের পানিতে ভেসে গেল জুড়ীর অর্ধলক্ষ মানুষের ঈদ আনন্দ
সাইফুল ইসলাম সুমন॥ ত্যাগের মহিমায় সোমবার ১৭ জুন সারা দেশে পালিত হয় পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করেছেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। কিন্তু মৌলভীবাজারের জুড়ীতে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঈদকে ঘিরে যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস থাকার কথা তা ম্লান করে দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। পানিতে ভেসে গেল জুড়ী উপজেলার অর্ধলক্ষ মানুষের ঈদ আনন্দ।
পবিত্র ঈদুল আযহার দিন ভোর থেকে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে এবং উজানের পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের জুড়ীতে অর্ধলক্ষাদিকের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের ৬৫ থেকে ৭০ টি গ্রাম প্লাবিতো হয়েছে। অনেকেই গিয়ে উঠেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
পবিত্র ঈদুল আযহার দিন ভোর থেকেই জুড়ী উপজেলা জুড়ে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে করে ডুবে যায় নিম্নাঞ্চলের রাস্তা ঘাট। ঈদের দিনে এই টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেক ঈদগাহে পানি উঠে যাওয়ায় ঈদের নামাজ আদায় করা হয় উচুঁস্থান সহ স্থানীয় মসজিদগুলোতে। অনেক রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ সহ জুড়ী শহরের সাথে বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
ঈদের দিন দেখা গেছে, জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের বেলাগাঁও, জাঙ্গীরাই, নয়াগ্রাম, ইউসুফনগর, শিমুলতলা, শাহাপুর, ভাটি শাহাপুর, নিশ্চিতপুর, ভুয়াই এবং পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নের বাছিরপুর, খাটটেখা, কালনীগর, নয়াবাজার, আমতৈল, হরিরামপুর গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি ফুলতলা, পূর্বজুড়ী, সাগরনাল ও গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নেরও কয়েকটি গ্রামে পানি বেড়ে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের দিন ঈদগাহে গিয়ে জামাত আদায় করতে পারেননি নিম্নাঞ্চলের মানুষ। পশু কোরবানি দিতে গিয়ে পড়েছেন বিড়ম্বনায়। চারদিকে পানি থাকায় ও টানা বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ সমস্যায় পড়েন মানুষজন। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন অনেকে। জুড়ী নদীর পানি বেড়ে উপজেলার গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বেলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রব জানান, ২/৩ দিনের টানা বৃষ্টিতে এবার পানি বেশি বেড়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। যার কারণে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। পানি বাড়তেই আছে। ঈদের দিন নামাজ আদায় ও পশু কোরবানি দিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে মুসল্লিদের।
একই গ্রামের শাহানা আক্তার বলেন, বছর ঘুরে ঈদ আসে, আর এই ঈদকে কেন্দ্র করে আমাদের অনেক আয়োজন থাকে, কিন্তু এবারের ঈদ কোন দিক দিয়ে আসলো আর কোন দিক দিয়ে গেল আমরা টেরই পেলাম না। বন্যার পানিতে ভেসে গেল আমাদের ঈদ আনন্দ। এখন আমরা পানির সাথে যুদ্ধ করছি।
জুড়ীতে বন্যাকবলিত প্রতিটি এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও আশ্রয় সংকট। কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষদের ঘরে এখন আনন্দের পরিবর্তে বিষাদ। বন্যায় তছনছ হয়ে গেছে তাদের জীবন। অনেকের বসতঘর, গোয়ালঘর, গুদামের ধান, ঘরের আসবাবপত্র সবকিছু ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। ফলে এবার ঈদুল আযহা বন্যাকবলিত এসব মানুষের ঘরে কোন আনন্দের বার্তা নিয়ে আসতে পারেনি।
মন্তব্য করুন