“বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রীক আন্দোলনের আপোষহীন লড়াকু সৈনিক, কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদ এর প্রয়ানঃ স্মরনঃ স্মৃতি কথাঃ

July 4, 2019,

মুজিবুর রহমান মুজিব॥ সাত সকালে দুঃসংবাদটি প্রথমই দিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিক মেয়াদের সফল সাবেক সাধারন সম্পাদক, বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট মিজানুর রহমান- মুজিব ভাই, জাফর ভাই আর নাই, তিনি ইন্তিকাল করেছেন। শক্তিমান সংঘটক ও সুবক্তা এডভোকেট মিজানের কন্ঠ স্তব্দ হয়ে আসছে। আমিও একজন শুভাকাঙ্কী ও স্বজনের মৃত্যোতে শোকাহত হলাম। কোন মতে উচ্চারন করলাম ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। উজ্জল ফর্সা চেহারার দীর্ঘ দেহী সুঠাম শরীরের অধিকারী সুদর্শন সৈয়দ আবু জাফর আহমদ ষাটের কোঠায় এসেই ডায়বেটিস, হার্টট্রাবুলস ও কিডনী জটিলতায় ভূগছিলেন। পূর্বে জেলা বারের সহ-সম্পাদক বিশিষ্ট আইনজীবী ¯েœহ-ভাজন এডভোকেট মাসুক মিয়া মারফত সংবাদ পেয়েছিলাম সৈয়দ আবু জাফর আহমদ এর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সিপিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ কমরেড মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম এর উদ্যোগে সৈয়দ আবু জাফরকে বঙ্গঁবন্ধ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্ত্তি করা হয়। এখানে তাঁর অবস্থার অবনতি ও কিডনি জটিলতা দেখা দিলে তাকে উন্নতর চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্ত্তি করা হয়। সেখানে অত্যাধুনিক চিকিৎসা শেষেও শেষ রক্ষা হয় নি, মৃত্যের কাছে হার মানতে হল আজীবন লড়াকু আপোষহীন সৈনিক সিপিবি কেন্দ্রীয় প্রিসিডিয়াম মেম্বার, বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রীক আন্দোলনের আপোষহীন নেতা কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদকে। তাঁর মৃত্যো সংবাদে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। সৈয়দ জাফর এর পিতা মরহুম সৈয়দ মনোয়ার আলী কবর বাসি, ভ্রাতাগণ প্রবাসে ফলত সাথে সাথেই নামাজে জানাজার আয়োজন করা গেল না। এডভোকেট মিজানুর রহমান এবং এডভোকেট মাসুক মিয়া জানালেন লাশ হিমঘরে রাখা হবে, প্রবাস থেকে মরহুমের ভ্রাতাগণ এলে জানাজার নামাজের আয়োজন করা হবে। ঢাকা থেকে লাশ আসার পর মৌলভীবাজার জেলা জামে মসজিদ হিমাগারে লাশ রাখা হল। পহেলা জুন শনিবার কমরেড জাফর-কে শেষ বিদায় জানানো হয়। সকালে জেলা সিপিবি অফিসে শ্রদ্ধা শেষে লাশের গাড়ি সামনে নিয়ে কালো পতাকা এবং লাল পতাকা মিছিল সহকারে শোক মিছিলটি ছিল আকর্ষনীয় ও দর্শনীয়। কালোব্যজ ধারনকারি বিপুল সংখ্যক কমরেড শোক মিছিলে অংশ গ্রহণ করেন। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী মোতাবেক শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক মনু বার্তার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ আবু জাফর আহমদ এর লাশ কোর্ট রোডস্থ মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে নিয়ে যান। জেলা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে লাশ গ্রহণ এবং পুস্পস্তক দিয়ে বিদায়ী শ্রদ্ধা জানান প্রেসক্লাব সভাপতি, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ছড়াকার আব্দুল হামিদ মাহবুব এবং প্রেসক্লাব সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক সালেহ এলাহী কুটি। এ সময় পৃন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। অতঃপর শেষ শ্রদ্ধার জন্য সর্বশেষ শ্রদ্ধানুষ্টান মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গঁনে মরহুমের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা মঞ্জুরুল আহসান খাঁন, রুহীন হুসেন প্রিন্স সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, জেলার সর্বদলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জেলা সদরের গন্যমান্য নাগরিক ও পেশাজীবি বৃন্দ, সিপিবি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মরহুমের কফিনে পুস্পিত শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানানো হয়। এই সময় অনুষ্ঠিত স্মৃতি চারন মূলক শোক সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি- জেলা সদরের মাননীয় সাংসদ, জননেতা নেছার আহমদ, জেলা পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান-সাবেক সাংসদ-বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.আজিজুর রহমান, পৌর মেয়র আলহাজ্ব মোঃ ফজলুর রহমান  বিশিষ্ট চিকিৎসক ও প্রবীন বাম রাজনীতিবিদ ডা.গোপেশ চন্দ্র দাস প্রমুখ। ঐ দিন বাদ জোহর মৌলভীবাজার টাউন ঈদগাহে মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফার মাজার প্রাঙ্গঁনস্থ গোরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়, তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। কমলগঞ্জের আদি বাসিন্দা এবং জেলা সদর-শহরের আধিবাসি সৈয়দ আবু জাফর আহমদ এর সঙ্গেঁ আমার পরিচয়, সম্পর্ক ও সখ্যতা সেই সত্তোর দশকের শুরু থেকেই। তাঁর পিতা সৈয়দ মনোয়ার আলী তৎকালীন মহকুমা মুন্সেফি আদালতে কর্মরত ছিলেন। আমি আইন পেশায় যোগদান করার পরও তাঁকে পেয়েছি। তিনি একজন সৎ কর্মকর্তা ধর্ম প্রাণ মুসলিম ছিলেন। পারিবারিক ভাবে একজন শিক্ষিত ও সম্ভান্ত পরিবারের সন্তান হিসাবে সৈয়দ আবু জাফর আহমদ বাল্য কাল থেকেই ছিলেন সহজ সরল নিরহং-কারিও মানব দরদি। মামা সৈয়দ মতিউর রহমান ছিলেন ষাট সত্তোর দশকে বাম প্রগতিশীল আন্দোলনের বলিষ্ট সংঘটক, ন্যাপনেতা এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক। তিনিও একজন সুবক্তা সৎ মানুষ ছিলেন। মামা সৈয়দ মতিউর রহমান এবং বাম ভাবাদর্শে ও গনমুখী রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সৈয়দ জাফর ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যামে ছাত্র রাজনীতির খাতায় নাম লেখান। ষাটের দশকে সাম্রাজ্য বাদ বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গেঁ, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন দেশব্যাপী একটি শক্তিশালী ছাত্র ও জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠন। বর্ত্তমানে বাম প্রগতিশীল আন্দোলন এর জাতীয় পর্য্যায়ের অনেক নেতাই ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন।

আমি ছাত্র জীবনে সেই ষাটের দশকের শুরু থেকে ছাত্র লীগের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করি এবং পারিবারিক দায়রাবদ্ধ ও সীমাবদ্ধতা না থাকার কারনে ছাত্রলীগের একজন সার্বক্ষনিক কর্মি, সংঘটক, নেতা হিসাবে কাজ করি। ষাটের দশকে ঐতিহ্যবাহী মৌলভীবাজার কলেজের ছাত্রাবস্থায় প্রথমে মৌলভীবাজার কলেজ শাখা অতঃপর তৎকালীন মহকুমা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হই ও কাজ করি। সে সময় ছাত্র ইউনিয়ন একটি শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন। তখন ছাত্রলীগ-ছাত্র ইউনিয়নের মধ্য দারুন সোহার্দ, সস্প্রিতী ছিল, সামরীক স্বৈরশাসক ফিল্ড মার্শাল আয়ূব খাঁন বিরোধী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এর ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রলীগ-ছাত্র ইউনিয়নের বলিষ্ট ভূমিকা ছিল। সৈয়দ আবু জাফর আহমদ আমার বেশ ক-বছরের কনিষ্ট, তবুও তাঁর সততা পরিছন্ন রাজনীতি সাফ সুতরা পরিচ্ছন্ন পোষাক-পায়জামা-পাঞ্জাবী, সাংঘটনিক দক্ষতা, বাগ্মিতা, বিয়নাচরন, শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ আমাকে বিমুদ্ধ ও আকৃষ্ট করে। স্বাধীনতা উত্তর কালে ছাত্র ইউনিয়নের দায়িত্ব ও নেতৃত্ব শেষে সরাসরি তাঁর প্রিয়দল সিপিবি-তে যোগ দিয়ে জেলা সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন। জেলা সিপিবি-র-সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন কালে কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদ সকল গণতান্তীক প্রগতিশীল আন্দোলন-বিশেষত-সামরীক স্বৈরশাসক লেঃ জেনারেল হোসেন মোহাম্মদ এর্শাদ বিরোধী আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল খুবই আপোষহীন ও সমুজ্জল। ঐ সময় রুগবালাই বিহীন আমার পূর্ণ যৌবনকাল। এর্শাদ বিরোধী আন্দোলনে আমি ও ছিলাম প্রথম কাতারে। আমি তখন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এর জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক। আমার মুসলিম কোয়ার্টারস্থ পৈত্রিক বাসগৃহ রসূলপুর ইউসে প্রায়ই পনেেেরা দলীয় জোট বৈঠক হত। তখন রাজনৈতিক পরিবেশ ভিন্ন ও বৈরী ছিল। কিন্তু দলে দলে-নেতায় নেতায় সৌহার্দ্য- সম্প্রীতি ছিল। নব্বইর দশকে রাজনীতিবিদ সৈয়দ আবু জাফর আহমদকে দেখেছি একজন মেধাবীও পরিশ্রমী সাংবাদিক ও সুদক্ষ সম্পাদক হিসাবে।

রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ-পৃন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ভূবনের প্রতি ও আমার দূর্বলতা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। পেশা হিসাবে সাংবাদিকতার প্রতি আমার প্রচন্ড ঝোক ছিল। ষাটের দশক থেকে সাংবাদিকতার সঙ্গেঁ সম্পৃক্ত ছিলাম। স্বাধীনতা উত্তর কালে ঢাকাস্থ জাতীয় সাপ্তাহিক বাংলাদেশ এর কার্য্য নির্বাহী সম্পাদক হিসাবে পেশাগত জীবন শুরু করে ছিলাম। সে সময় দৈনিক বাংলার বানীও দৈনিক বাংলায় ফিচার ও কলাম লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করে ছিলাম-কিন্তু নানান কারনে টিকে থাকতে পারিনি-টিকে রয়ে ছিলেন পরিশ্রমী সাংবাদিক অনুজ প্রতিম মতিউর রহমান চৌধুরী। টিকে রয়েছিলেন বলে আজ তিনি বাংলাদেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক-শক্তিমান সম্পাদক-প্রতিভাবান টিভি ব্যক্তিত্ব। একটি রাজনৈতিক দর্শনের প্রতি মোহাচ্ছন্ন হয়ে স্বপ্নের ঘোরে চলে এসেছিলাম নিজ এলাকায়। সাংবাদিকতায় সম্পৃক্ত থেকে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি/সভাপতি হিসাবে দীর্ঘ দিন কাজ করেছি। সম্পাদনা ও প্রকাশ করেছি রাজনীতি ও রম্য সাপ্তাহিক মৌৗলভীবাজার দর্পন। বিগত কেয়ার টেকার সরকারামলে আমাকে বেকায়দায় ফেলে আমার প্রিয় পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিল করে দেয়। আমি দর্পনকে টিকিয়ে রাখতে পারিনি। সাংবাদিকতা-সম্পাদনা-প্রকাশনা সংক্রান্ত কর্ম সুখকর নয়, কঠিন এবং জটিল কাজ। সৈয়দ আবু জাফর আহমদ কোর্ট রোড চৌমুহনা এলাকায় সাপ্তাহিক মুন বার্তা ও মনু কম্পিউটার্স এর অফিস স্থাপন করে জাক-জমকের সঙ্গেঁ সাপ্তাহিক মনু বার্তা-প্রকাশনা ও সম্পাদনা করেছেন। মনু বার্তা কেন্দ্রীক একেটি প্রগতি শীল সাহিত্য-সাংবাদিকতার আন্দোলন গড়ে উঠে ছিল। মনু বার্তার একঝাঁক পরিশ্রমী তরুণ বর্তমানে পৃষ্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ভূবনে পেশাদার সাংবাদিক হিসাবে দাপটের সঙ্গেঁ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছেন প্রতিভার ছাপ রাখছেন। বয়সের ব্যবধান ও রাজনৈতিক ভিন্নতার মাঝেও মনুর সান্ধ্যকালীন আসরে অনিয়মিত সদস্য ছিলাম। মনু কম্পিউটার্স থেকে আমার দূখানা গ্রহ্ণ ছাপিয়ে ছিলাম- ১. ঐতিহ্য ২. এ প্রজন্মের প্রিয় নেতা তারেক রহমান পুষ্পিত শুভেচ্ছা। মনু কম্পিটার্স এর ম্যানেজার মিষ্ট ভাসি রিংকু পাল গ্রাহক সেবায় খুবই আন্তরিক ছিলেন। মনু কম্পিউটার্স থেকে আমি দীর্ঘ দিন দর্পন-বের করেছি, সেখানেও তাঁর আন্তরিক সহযোগিতা ছিল।

নব্বইর দশকে আমাকে কিছুদিন আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা মরহুমে অর্থমন্ত্রী এম.সাইফুর রহমানের দাবীর প্রেক্ষিতে শ্রমিক সমাজকে সংঘটিত করতে, শ্রমিক সংগঠন করে তুলতে কাজ করতে হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে আমার কোনই পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। একজন পেশাদার আইনজীবী হিসাবে মহামান্য হাইকোর্টে তালিকা ভূক্ত হয়েগেছি, আমাদের জেলা বারে সম্পাদক-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে গেছি। ইতিপূর্বে মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধু মাত্র চা-শ্রমিক সমাজের সাথে আমার সম্পৃক্ততা ও যোগাযোগ ছিল। আমি পরিবহন শ্রমিক, রিক্সা শ্রমিক ইমারত নির্মাণ শ্রমিক অঙ্গঁনে যোগাযোগ ও কাজ করে শহরের সুইপার-ক্লিনার হিসাবে পরিচিত বাসফার সম্প্রদায়ের সঙ্গেঁ কাজ করি। তখন আমি মৌলভীবাজার ক্লাব-এর সক্রিয় সদর এবং ক্লাব প্রাঙ্গঁনস্থ টেনিস গ্রাউন্ড এ নিয়মিত লন টেনিস খেলোয়াড়। ক্লাবের উত্তরাংশেই শ্রীনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রাতের বেলায় আমি এখানেই বাসফার সম্প্রদায় এর ফ্রি নাইট স্কুল খুলি। বাসফার সমাজের ভদ্রতা, বিনয় ও সারল্য আমাকে বিমুদ্ধ করে। এরা আমাদের অনেকের মত বে-আদব, অনেকের বেদতমিজ, মোনাফিক ও বেঈমান নয়। এই সমাজ এর কান্তি লাল বাসফার সবার প্রিয় একটি পরিচিত মুখ। এই সম্প্রদায়ের নেতারা আমাকে এসে ধরলেন সিলেট বিভাগীয় হরিজন সমিতির মহাসম্মেলন হবে মৌলভীবাজারে আমাকে সহযোগিতা করতঃ প্রধান অথিতি হতে হবে। আমি সানন্দে সম্মতি জানিয়ে ¤্রমিক রাজনীতি সম্মন্ধে অভিজ্ঞ একজন শ্রমিক নেতাকে আনার এবং শ্রমিক শ্রেণীর রাজনীতির অনুসারি সি.পি.বি সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদ এর নাম প্রস্তাব করলে নেতৃবৃন্দ আমার উপর সেদায়িত্ব ভার অর্পন করেন। মার্কসবাদলেনিনবাদ এবং শ্রমিক শ্রেণীর রাজনীতির তাত্বিক নেতা-সুবক্তা সৈয়দ আবু জাফর আহমদকে আমি এ প্রস্তাব দিলে তিনি সানন্দে

সম্মতি জ্ঞাপন করতঃ শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে একটি তাত্বিক বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দানের জন্য আমাকে ধন্যবাদ জানালেন। মৌলভীবাজার পৌরসভা প্রাঙ্গঁন ও মিলনায়তনে সিলেট বিভাগীয় হরিজন সম্প্রদায়ের মহা সমাবেশ হয়েছিল। সেই মহা সমাবেশের প্রধান অতিথি হিসাবে বাংলা, হিন্দী-উর্দ্ধূ মিলিয়ে একটি আবেগি বক্তৃতা দিয়েছিলাম আমি। শ্রমিক নেতা নাহওয়াতে তাত্বিক ও প্রায়োগিক প্রাসঙ্গিঁক বক্তৃতা দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয় নি। তবে টেলিভিশন এর বদৌলতে আমি হিন্দী-উর্দ্ধু ভাষায় কথা বলতে পারি। সম্মেলনে-মার্কসীয় চেতনা ও চিন্তাধারার শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলার জন্য কমরেড জাফরের তাত্বিক বক্তৃতা স্মরণ রাখার মত। সুবক্তা সৈয়দ জাফর ছিলেন একজন আবৃত্তি শিল্পী। তাঁর-নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গঁ-কবিতাটি এখন ও আমার কানে বাজে। মানুষ হিসাবে ও সৈয়দ জাফর ছিলেন সংবেদনশীল। সহকর্মি, বিশেষত কনিষ্ট কর্মিদের প্রতি তিনি ছিলেন সহানুভূতিশীল। মানবিকবোধ সম্পন্ন সৈয়দ জাফর ছিলেন বন্ধু বৎসল। ভ্রাতৃ বৎসল। কর্মি বৎসল। বেশ কয়ছর আগে আমাকে বেশ প্রশংসা করে আমার পেশাগত নাম ডাকে সুনামের শুভেচ্ছা জানিয়ে একজন সুদর্শন তরুন মাসুক মিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিলেন, রাজনগর থানার তাঁর দলের প্রিয় কর্মি-তখন যুব ইউনিয়ন হবে-নবীন আইনজীবী হিসাবে আমাদের বারে যোগদান করেছে। আমি কিঞ্চিত লাজুক ও বিব্রত বোধ করে রল্লাম-ঠিক আছে ঠিক আছে, দেখব, এ-আর এমন-কি। এডভোকেট মাসুক তার মেধা ও শ্রমের ফলে খুব কম সময়ে নাম ডাক করল। আমি চার বার জেলা বারের সভাপতি ছিলাম। একবার সে আমার কমিটির সদস্য হল। বর্তমানে সে জেলাবারের সহ-সাধারণ সম্পাদক। আমি তার প্রস্তাবক ছিলাম। এডভোকেট মাসুক মিয়ার বর্তমান অবস্থানে কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদ খুবই খুশী হয়ে ছিলেন। একবার এডভোকেট মাসুক মিয়া এর চেম্বারে সৈয়দ জাফরকে বলেছিলাম এখন আমার চেয়ে সে ব্যস্ত আইনজীবী। তারই এখন আমাকে খেয়াল করা উচিত। সৈয়দ জাফর এর চোখে-মুখে তৃপ্তি দেখে আমিও তৃপ্ত হয়ে ছিলাম- তাঁর সলাজ মিষ্টি হাসি উপভোগ করেছিলাম।

সি.পি.বি কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হলে তাকে মৌলভীবাজারে নাগরিক সম্ভর্ধনা দেয়া হয়। আমি তাঁর সততা ও কর্ম ক্ষমতার প্রশংসা করে তাঁর সুস্বাস্থ ও দীঘায়ূ কামনা করে ছিলেন। একটা পরিকল্পনাতার ছিল আমাকে ও বলে ছিলেন, লেখাও সহযোগিতা চেয়ে ছিলেন। তাঁর মরহুম মামা সৈয়দ মতিউর রহমান স্মৃতির গভীরে হারিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান প্রজন্ম তার নামই জানে না। তাঁর কর্ম ও জীবন দর্শন নিয়ে একখানা স্মারক সংকলন বের করতে চান। আমি শর্তহীন সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে ছিলাম। সে কাজটি সৈয়দ জাফর করে যেতে পারেন নি। আমার ও লেখা দেয়া হয়নি, যদি ও আজ তাকে নিয়েই স্মৃতি কথা লিখতে-হচ্ছে-যা খুবই বেদনা দায়ক বটে।

মানুষের জন্মও মৃত্যোর মধ্যবর্তী-অন্তবর্ত্তী কালীন সময়ের নাম জীবন। এই জীবন খুব ক্ষনস্থায়ী। মৃত্যো অবধারিত সত্য। বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী প্রতিভা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন- মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচি বারে চাই। কবি গুরুর এই বেঁচে থাকার আকুতি শারিরীক ছিল না, ছিল কার্য্যকি। কাব্যিক। কবি গুরু এখনও বেঁচে আছেন বাঙ্গাঁলি জাতির চিন্তায়, চেতনায়, মনও মন নে। মানুষ বেঁচে থাকে তার কাজে মাঝে। কবি বলেন-

শিল্পী গেয়ে যান

কাগজে লিখনা নাম, কাগজ ভিজে যাবে,

পাথরে লিখনা নাম, পাথর ক্ষয়ে যাবে,

হৃদয়ে লিখনা নাম সে নাম থেকে যাবে,

কারা নির্য্যাতিত রাজনীতিবিদ, আজীবন লড়াকু সৈনিক জননেতা কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদ আমাদের হৃদয়ে তাঁর নাম লিখিয়েছেন, সে নাম থেকে যাবে, অনাদি- অনন্ত কাল। মরহুম সৈয়দ আবু জাফর আহমদ এর স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

[ মুক্তিযোদ্ধা। সিনিয়র এডভোকেট, হাইকোর্ট। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব ]

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com