বাস্তব সত্য আজব কাহিনী
মোঃ আবু তাহের॥ আমার নানীর বিবাহ হয়েছিল নয় বছর বয়সে। অবশ্য দুই পরিবারের মধ্যে আলাপ করেই শুভ কাজ করে ছিলেন। পরের দিন বিকালে প্রতিবেশীরা বউ দেখতে এসে দেখলেন,নুতন বউ ঘরে নেই। খুঁজ করে পাওয়া গেল বাড়ির সমবয়সীদের সাথে পুকুর পাড়ে বড়ই গাছ তলায়,বড়ই পেরে খাওয়ায় ব্যস্ত।
শুনেছি নানার ঘরে এসেই তাহার দুধ দাঁত বাকী কয়টি পরেছিল। তাহাদের দাম্পত্য জীবন খুব শান্তি সুখের ছিল। নানী বেশী সুন্দর এবং সুস্বাস্থের অধিকারী ছিলেন। তাহার গর্ভে মামা,খালা ও মাসহ মেট ৬ জনের জন্ম হয়,আল্লাহর দয়ায় সকলই দীর্ঘ হায়াত নিয়ে বেঁচে ছিলেন। নানার মৃত্যুর পর তিনি অনেক বছর জীবিত ছিলেন। কোন রুগবালাই ছিল না,শুধু কানে একটু কম শুনতেন। অনুমানিক ৮৫/৯০ বছর বয়সে বার্ধক্য জনিত রুগে তিনি মারাযান।
আমার বড় বোনের বিবাহ হয়েছিল এগাড় বছর বয়সে,একটি ধনী সম্পদশালী গৃহস্থ পরিবারে। তাহার ও ছেলে মেয়ে ৬ জন,সবাই দেশও বিদেশে প্রতিষ্টিত এবং উন্নত জীবন যাপন করিতেছে। দুলাভাই ও বোন নাতিনাতন নিয়ে সুখেই ঘর সংসার করিতেছেন। অবশ্য তাহাদের আরো দুইজন সন্তান জন্মের পর আতুর ঘরে মারাযায়,উন্নত চিকিৎসার অভাবে।
আমাদের একজন বড় ভাইর বউ ১৭ জন সন্তানের জন্ম দেন কিন্তু বেঁচে আছে মাত্র ৩জন। বাকী সব আতুর ঘরে এবং জন্মের কিছু দিন পর মারাযায়। সর্বশেষ দু’টি জজম সন্তান প্রসবের সময় তিনি সরকারি হাসপাতালে মারাযান। ভাবী ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন না। তাহার ১৪টি বাচ্ছা মারা যাওয়ার কারণ, আতুর ঘরে জন্ডিস আক্রান্ত,হলুদ বর্ণ হয়ে যাওয়া,পুষ্টিহীনতা,প্রতি বছর অপরিকল্পিত গর্ভধারণ ও উন্নত চিকিৎসার অভাব। তাহাকে কোন দিন বিশেষজ্ঞ গাইনি ডাক্তার দেখানো হয়নি। সাধারণ ডাক্তার,আয়ুর্বেধিক ঔষধ,কবিরাজী,তাবিজ কবজ, ঝাড়ফুক করা হয়েছে।
এছাড়া আমাদের এলাকায়,ধর্মভীরু পর্দাশীল এবং সুন্দরী একজন দাদী ছিলেন। দাদার মৃত্যুর পর অনেক দিন তিনি বেঁচেছিলেন। ঘটনা হইল দাদীর গর্ভে ২২ জন সন্তান জন্মেছিল আর বেঁচে আছিল মাত্র ৮জন। ভাগ্য ভাল ভাবীর মত সন্তান প্রসবের সময় মারাযান নাই। মনে হয় ঠিক একি কারণে তাহার সন্তানেরা ও মারাগিয়েছিল। আমি একদিন জিজ্ঞাসা করে ছিলাম,সত্যনি দাদী আপনার ২২জন সন্তান হয়ে ছিল। উত্তরে বলে ছিলেন, “ঠিকই ভাই আল্লাহ দিয়েছেন ২২জন আর নিছইনগি ১৪জন। সব তাহার ইচ্ছা”। আমাদের বড় ভাই ও দাদার বয়সের সাথে তুলনা করিলে বুঝা যায়,তাহাদের ও অল্প বয়সে বিবাহ হয়েছিল। সে যুগে অল্প বয়সেই মেয়েদের বিবাহ হইত।
তখনকার সময় অপরিপক্ষ জন্ম, জন্মের পূর্বে গর্ভে থাকতে,আতুর ঘরে,অপুষ্টি,অপরিষ্কার অন্ধকার কক্ষে সন্তান প্রসব,অদক্ষ ধাত্রী,অপরিকল্পিত গর্ভ ধারণ,অন্ধবিশ্বাস,চিকিৎসার অভাব এমন কি সন্তানের নারী কাটা থেকে সংক্রমণ হয়ে ধনুষ্টংকারে অনেক মা ও শিশু মারা যাইত। প্রসূতি মায়ের গর্ভে কোন জঠিলতা দেখা দিলে সিজার বা অপারেশন করে সন্তান বাহির করার ব্যবস্থা খুব কমই ছিল। ছোট শহরে ছিলই না,হাতে গণা ৫/৭ জন সাধারণ ডাক্তার ছিলেন, কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছিল না।অপারেশনের নাম শুনলে মানুষ ভয় পাইত। যাতায়ত ব্যবস্থা ও ভাল ছিল না।
আমাদের ইসলাম ধর্মে বিবাহ ফরয ছেলে মেয়ে,স্বাবালক স্বাবলিকা হইলে বিবাহ দেওয়া উত্তম। ভারত উপমহাদেশে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর প্রভাবে ১৩/১৪ বছর বয়সে মেয়েরা স্বাবালিকা হয়। ৪০/৫০ বছর আগের বিবাহের কাবিন নামায় আমরা দেখতে পাই, মেয়েদের কলামে কোন বয়স লিখা নাই। মেয়ের আকৃতি ও যোগ্যতা বুঝাইতে একই কলামে স্বাবলিকা/কুমারী/তালাক প্রাপ্ত/বিধবা ইত্যাদি শব্দ যথাযত স্থানে স্বাবালিকা এবং যে কোন একটি শব্দ উল্লেখ আছে। স্বাবলিকা বলিতে ১৬ বছরই বুঋায় এবং ১৬বছর মেয়েদের বিবাহের নিম্নতম বয়স উল্লেখ ছিল।
একটি ঘটনা আজ খুবই মনে পরে ১৯৬৪/৬৫ সাল হবে। আমি প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র। কোন এক ধনী লোকের স্ত্রী সন্তান প্রসবের সময়,সিলেট সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার অপারগ হয়ে ঢাকায় রেপার করেন। এখনকার মত ভাল কার,লাইটেস ছিল না। স্থলপথে ঢাকা যাতায়তের একমাত্র উপায় ছিল ট্রেইন তাও ছিল সকাল ও বিকাল দুইবার। ভদ্র লোকের একটি লকেল বাস গাড়ী ছিল। কোন উপায় না দেখে নিজের বাসে করে ঢাকার পথে রওয়ানা দিলেন।রাস্তাও পিচ ঢালা ছিল না। পথি মধ্যে অসহনীয় প্রসব ব্যথায় মহিলা অজ্ঞ্যান হয়ে যান।ভদ্র লোক আমাদের গ্রামের পাশে গাড়ী থামাইয়া গ্রামে আসেন ধাত্রীরির খুঁজে। আমাদের গ্রামের ২/৩জন মহিলার অক্লান্ত প্রচেষ্টায়,আল্লাহর রহমতে গাড়ীতেই মহিলা সন্তান প্রসব করেন। পুরা দিন ও রাত তাহাদের সেবায় সুস্থ হয়ে পর দিন হাসি মুখে বাড়ী ফিরে যান।
পশ্চিমাদেশ এবং তাহাদের সংষ্কৃতির দিকে একটু খেয়াল করিলে দেখা যায়,আমাদের সাথে কোন মিল নাই। মেয়ে ছেলে সবাই সমান তাহাদের স্বাধীনতায় কাহারো কোন অধিকার নাই।মেয়েরা অর্ধনগ্ন পোষাক পরে দিন রাত স্বাধীন ভাবে চলা ফেরা করিতেছে, সবাইর বয়ফ্রেন্ড,গার্লফ্রেন্ড আছে। এখানে বয়স কোন বাঁধা নয়। এমন কি এলিমেন্টারী স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের ও বয়ফ্রেন্ড,গার্লফ্র্ন্ড আছে। অবাদ মেলামিশা,গৃহবাস,দৈহিক সম্পর্ক ও সন্তান জন্মদান সবই তাহাদের জন্য হালাল, কোথাও বাঁধা নেই। অবশ্য জোড় পূর্বক বা মেয়ের মতের বাহিরে কোন কিছু করিলে তাহা হইবে ইভটিজিং বা ধর্ষন এবং আইনে কঠোর দন্ডনীয় অপরাধ।বিবাহের প্রয়োজন হয়না,বিবাহ একটি অইনি প্রক্রিয়া মাত্র।অনেক পরিবারে দেখা যায় তাহাদের ২/১ সন্তান বড় হওয়ার পর মধ্য বয়সে বা বুড়ো বয়সে একদিন বিবাহ রেজিষ্টারী করিতেছে। বৃটেনে বিবাহ রেজিষ্টারীর সর্ব নিম্ন বয়স ১৬ বছর ছিল,বর্তমানে ১৮ বছর।কিন্তু পিতামাতার মতামতের ভিতর যদি তাহাদের মেয়েকে ১৬বছর বয়সে বিবাহ দেন এখানে আইনের কোন বাঁধা নেই।
পশ্চিমা সব দেশের সামাজিক রিতিনীতি সংস্কৃতি প্রায় এক রখম।কানাডায় সামান্য ব্যবধাণ থাকতে পারে।এখানেও বিবাহের সর্ব নিম্ন বয়স ১৮বছর। তবে কোন প্রভিন্সে ১৯বছরও আছে। অনেক সময় দেখায়ায় ১৩/১৪ বছরের স্কুলে পড়োয়া মেয়ের গর্ভে সন্তান।হাসপাতালে গর্ভবতী মায়ের বিশেষ চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা আছে। পিতৃ পরিচয়ের দরকার হয় না। সন্তান প্রসবের পর কিশোরী মাতা,সন্তান লালন পালনে অনিহা প্রকাশ করিলে রাষ্ট্রীয় ভাবে সন্তান লালন পালনের ব্যবস্থাও আছে।
এখানে বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড কোন আইনের বন্ধনে নয়,আর বিবাহ পুর্ণ আইনের আওতায়।স্ত্রী স্বামীর সম্পদের অর্ধেকের মালিক।বিবাহ বিচ্ছেদ হইলেও স্ত্রী অর্ধেক ভাগ পাইবে এবং আইনি প্রক্রিয়ায় বিচ্ছেদ হইবে। ফ্রেন্ডস যদি প্রতি সপ্তাহে,মাসে,ছয় মাসে বা বছরে বদল হয় এতে কোন বাঁধা নেই। কিন্তু যদি তাহাদের কোন সন্তান জন্ম নেয়,তবে বিবাহ না হইলেও বিবাহের সমান মর্যাদা পাইবে।ব্রেকাপ হইলে আইনে যাইতে হইবে এবং বয়ফ্রেন্ডের সম্পত্তির অর্ধেক পাইবে। তাহাদের মধ্যে বিশ্বাসের খুব অভাব তাই সন্তান নেয় নাএবং বিবাহের চিন্তা ও করেনা। কোন ঝুটি ভাল হইলে মধ্য বয়সে সন্তান নেয়। অনেক ধনী পুরুষ বিবাহ করে না,স্ত্রীকে সম্পদের ভাগ দিবে বলি,তাই গার্লফ্রেন্ড বদল করে করেই জীবন শেষ।
যেদেশের সংষ্কৃতিতে অবাধ মেলামিশা বা যৌন সম্পর্কে বয়স কোন বাঁধা নয়। বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড হইলে সব হালাল। বিবাহের প্রয়োজন নাই।সে দেশে বিবাহের বয়স ১৮ কেন,৩৮হইলে অসুবিধা কোথায়?
ইসলাম ধর্মে,বিবাহ ছাড়া কোন
ছেলে মেয়ে যৌন সম্পর্ক করা সম্পুর্ণ হারাম এবং দেশের আইনে নিষেধ। ইসলাম ধর্মে বিবাহ ফরয আর এই বন্ধনই নারী ও পুরুষের জীবনে পরিপূর্ণতা লাভ করে। গভীর ভালবাসার মধ্যে দাম্পত্য জীবনের সুখ ও শান্তি। আমাদের দেশেও পশ্চিমা অপসংষ্কৃতি অনুস্বরণ করে,মেয়েরা নগ্ন পোষাক পরে ছেলেদের সাথে অবাদ মেলামিশা করে। আগেকার সময় শুনতাম ভালবাসা পবিত্র,এখন ভালবাসার নামে ছেলে মেয়েরা (বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড)অবাধ মেলামিশা আর যৌন সম্পর্কে ব্যস্ত। যেখানে সেখানে নারী ধর্ষণ,অপকর্ম ও খুনখারাপীর মত ঘটনা অহরহ ঘটিতেছ। সে দিন খবরের কাগজে দেখলাম তৃতীয় শ্রেনীরএক ছাত্রী ২৩ সপ্তাহের গর্ভবতী।
আমাদের দেশে বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে কমতি নেই। প্রসুতি মা ও শিশু মৃত্যুর হার অনেক কম।আমরা মুসলিম প্রধান দেশে কেন পশ্চিমা অপসংষ্কৃতি অনুস্বরণ করব?আমরা মেয়েদের বিবাহের বয়স ১৮ বছর না করে যদি আগেকার মতন ১৬বছরে ফিরে যাই,তাহা হইলে এই সমস্ত অপকর্ম হইতে কিছুটা হইলেও পরিত্রান পাইতে পারি।আমার এলেখা হয়ত অনেকের ভাল লাগবে না। ইহা আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত।
আমার গল্পের আজব কাহিনী শেষ নয়,মুল গল্প বলা হয়নি। আমাদের শহরে সরকারী হাসপাতালের একজন বড় ডাক্তারের নামডাক ছিল। হাসপাতালের বড় ডাক্তারকে সার্জন বলা হইত তাই তিনি সার্জন নামেই পরিচিত ছিলেন। অবসর গ্রহনের পর আর নিজ এলাকায় ফিরে যান নাই।এখানেই বসতি স্থাপন করেন,সাথে নামে মাত্র একটি ক্লিনিক করে,প্রাইভেট চিকিৎসা আরম্ভ করেন।দুরদুরান্ত থেকে লোক আসত মুমুর্ষু রুগির সেবায় ডাক্তার বাড়ীতে নেওয়ার জন্য। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি বাহিরে রুগি দেখার জন্য যাইতেন। আমাদের কয়েকটি ত্রিহুইলার বেবীটেক্সি ছিল। অতি সহজ সরল একজন ড্রাইবার ছিল। সার্জন সাহেব তাহার গাড়ীতে করে কলে যাইতে তাহাকে পছন্দ করিতেন। সে আর কোথাও না গিয়ে দিন রাত ক্লিনিকের বারান্দায় বসে থাকত।
সে দিন দুর গ্রাম থেকে লোক আসছে একজন প্রসূতি মায়ের সেবায় নেওয়ার জন্য। ধাত্রী বিদ্যায় অভিজ্ঞ একজন মহিলা নার্সকে সঙ্গে করে সন্ধ্যা রাতে সার্জন সাহেব মহিলার গ্রামের বাড়ীতে গেলেন।ডাক্তার নার্স প্রসূতি সেবায় চলে গেলেন। গরমের সময় ছিল,ড্রাইভার বাড়ীর সম্মুখে গাড়ীতে বসে রহিল। চাঁদনি প্রহর রাত,বাঁশ ঝাড় ঝুপের আড়ালে বাড়ী।পঙ্গু পালের মত কচুবনের মশা,তাহাকে কামড়াইতে আরম্ভ করে।বেচারা মশার কামড়ে অতিষ্ট হয়ে পাগলের মত এদিক সেদিক হাঁটিতে থাকে। আর আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করে, “আল্লাহ তুমি সাহায্য কর,তাড়াতাড়ি ভদ্র মহিলাকে খালাছ করে দাও। আমি আর মশার কামড় সহ্য করতে পারছি না।তাহাকে একটি পুত্র সন্তান দিও গো আল্লাহ, বেচারা খুশী হয়ে আমাদেরকে বেশী টাকা দিবে”। বাড়ীর রাস্তায় আর আঙ্গিনায় পায়চারি করিতেছে, হঠাৎ শুনে বড় শব্দ করে নবজাতকের কান্না ,আল্লাহ আমার ডাক কবুল করেছেন নিশ্চয় পুত্র সন্তান হয়েছে।
কিছুক্ষণ পর সার্জন সাহেব বাহিরে আসিলেন,কিরে ‘কনাই’ স্যার মশায় আমার সব রক্ত খেয়ে ফেলেছে,তাই নাকি! ঘরে বসলে না কেন? ঘরে বসলে গাড়ী পাহাড়া দেবে কে? আমরা ঘর থেকে তোমার সব কথা শুনেছি,আল্লাহ তোমার দোয়া কবুল করেছেন।
মন্তব্য করুন