বিগত পাচই অক্টোবর ছিল ভাষা সৈনিক, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ এম. সাইফুর রহমানের ৮৭তম জন্ম দিন। স্মরনঃ শদ্ধাঞ্জলি 

October 9, 2017,

মুজিবুর রহমান মুজিব: বিগত পাচই অক্টোবর ছিল ভাষা সৈনিক, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ট ও বিশ^স্থ সহচর, বাংলাদেশের দীর্ঘ মেয়াদী সফল অর্থ  পরিকল্পনা মন্ত্রী মরহুম এম.সাইফুর রহমানের সাতাশি তম শুভ জন্মদিন। বৃটিশ ভারতের শেষ ভাগে, রাজ্য হারা মুসলমান সমাজের ঘোর দুর্দিনে তৎকালীন দক্ষিন শ্রীহট্ট মহকুমাধীন সদর থানার ঐতিহ্যবাহী বাহার মর্দান গ্রামে এক মধ্যবিত্ত সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে এম. সাইফুর রহমানের জন্ম। তাঁর পিতা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আব্দুল বাছির এবং মাতা সুগৃহিনী বেগম তালেবুন্নেছা। মাত্র আট বৎসর বয়সে পিতৃহারা হন বালক সাইফুর। ঘাতক ব্যাধি কলেরায় আক্রান্ত হয়ে শিক্ষাবিদ আব্দুল বাছির আকস্মিকভাবে ইন্তিকাল করলে স্বীয় ভ্রাতা মোঃ সফি ভ্রাতস্পুত্র গনের দেকভাল ও লেখাপড়ার দায়িত্ব ভার গ্রহন করেন। সাইফুর জননী সদ্য বিধবা বেগম তালেবুন্নেছা শোককে শক্তিতে পরিনত করে সংসারের হাল ধরেন। বাল্যকাল থেকেই অসম্ভব রকমের মেধাবী ছিলেন এম. সাইফুর রহমান। ফলতঃ তিনি কৃতিত্ব ও সুনামের সাথে মৌলভীবাজার বহুমুখী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৯ সালে এস.এস.সি, ১৯৫১ সালে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মদনমোহন কলেজ থেকে এইচ. এস. সি. পাশ করতঃ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন এর জন্য ঢাকা গমন করতঃ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্ত্তি হন এবং ১৯৫৩ সালে সুনাম ও কৃতিত্বের সাথে বানিজ্য অনুষদ থেকে ডিগ্রি লাভ করেন। দেশের সর্ব্বোচ্চ বিশ^বিদ্যালয় থেকে বানিজ্যে ¯œাতক ডিগ্রি নিয়েই ছাত্র জীবনে পরিসমাপ্তি ঘটাননি মেধাবী ও কৃতি ছাত্র এম. সাইফুর রহমান এবং তাঁর পরিবার বর্গ। তখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে উচ্চ শিক্ষার্থে বিলেত গমনে ছাত্র ছাত্রীদের সংখ্যা ছিল হাতে গুনা। তাও শুধুমাত্র ধনিক বনিক উচ্চ বিত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। মা-চাচার ইচ্ছা ও উদ্যোগে এম. সাইফুর রহমান ১৯৫৪ সালে বিলেত গমন করতঃ ১৯৫৯ সালে চাটার্ড একাউন্টেসী-তে সর্ব্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে- সি.এ হন। বিলেত থেকে কৃতিত্বের সাথে সি.এ ডিগ্রি নিয়ে সফল শিক্ষা জীবনের অবসান ঘটান কৃতি ছাত্র এম সাইফুর রহমান। তাঁর সফল ছাত্র জীবনে কোন ব্রেক অফ ষ্টাডি নেই। এস.এস.সি থেকে সি.এ. পর্য্যন্ত তিনি তরতর করে সাফল্যের সিড়ি গুলি মাড়িয়ে গেছেন-আরোহন করেছেন সাফল্যের শিখরে।

 সফল ছাত্র জীবন ও ডিগ্রি অর্জন শেষে শুরু হয় এম.সাইফুর রহমানের বর্নাঢ্য ও বর্নীল কর্ম জীবন। বিলেত থাকাঅবস্থায়ই তিনি বিলেতের বিখ্যাত কোম্পানী বৃটিশ অক্সিজেনের পাক সাবসিডিয়ারীতে উচ্চপদ ও উচ্চ বেতনে চাকরি লাভ করেন। আকর্ষনীয় বেতনের সঙ্গেঁ অভিজাত এলাকা ক্লিফটনে বিশাল বাংলো, একাধিক মার্সিডিজ গাড়ী সহ আরো বহুবিদ সুযোগ সুবিধা ছিল। করাচিতে থাকাকালে চৌকস হিসাব বিজ্ঞানী বৃটিশ অক্সিজেনের পদস্থ কর্ম্মকর্তা এম. সাইফুর রহমান ১৯৬০ সালের ১২ই জুলাই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তৎকালীন ষ্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের পেশোয়ার শাখার ব্যবস্থাপক জনাব বি.এস চৌধুরীর কৃতি কন্যা দুররে সামাদ এর সঙ্গেঁ। জনাব চৌধুরী চট্টগ্রামের অভিজাতও খান্দানী পরিবারের কৃতি সন্তান। এম. সাইফুর রহামন-দূররে সামাদ রহমানের সুখময় দাম্পত্য জীবনের ফলও ফসল- মহান আল্লাহর দান তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তান। পুত্র ত্রয় এম. নাসের রহমান, কাওসার রহমান এবং শফিউর রহমান উচ্চ শিক্ষিত- কর্ম্ম জীবনে সু-প্রতিষ্টিত। প্রথম পুত্র এম.নাসের রহমান পিতার পদাংক অনুসরন করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার আদর্শে উদ্ভোদ্ধ হয়ে বি.এন.পি তে যোগদান করতঃ জেলা সদরের এম.পি নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। বর্ত্তমানে জেলা বি.এন.পির সভাপতির গুরু দায়িত্ব পালন করছেন। একমাত্র কন্যা সাইফা রহমান ও সুশিক্ষিতা, চট্টগ্রামের আরেকটি অভিজাত- খান্দানী পরিবার- ভালো বরে উচ্চ ঘরে পাত্রস্থ। ব্যাক্তিগত জীবনেও এম. সাইফুর রহমান ছিলেন আদর্শ স্বামী, সফল পিতা। ছাত্র জীবন থেকে পেশাদার-চাদ্দরি-নেতা না হলেও বরাবরই রাজনীতি সচেতন এবং দেশ প্রেমিক ছিলেন এম. সাইফুর রহমান। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রবস্থায় তিনি ভাষা আন্দোলনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেন। পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন। কারা যাতনা ভোগ করেন। জনাব এম. সাইফুর রহমান একজন সক্রিয় ভাষা সৈনিক। ২০০৫ সালে তিনি রাষ্ট্র কর্তৃক একুশে পদকে ভূষিত হন। স্বাধীনতা উত্তরকালে বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারামলে একজন চাটার্ড একাউন্টেন্ট হিসাবে জাতীয় বেতন কমিশনের সদস্য হিসাবে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন হিসাব বিজ্ঞানী এম. সাইফুর রহমান।  প্রসঙ্গঁত উল্লেখ্য: এম সাইফুর রহমান ৬১ সালে পাকিস্তান অক্সিজেনের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং ৬২ সালে সি.এ.ফার্ম, রহমান-রহমান-হক- এন্ড কোম্পানী খুলে ঢাকা, চট্টগ্রাম-খুলনায় তিনটি শাখা নিয়ে পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ অডিট ফার্ম হিসাবে খ্যাত হন।

পঁচাত্তোরের পনেরোই আগষ্টে যখন জেনারেল শফিউল্লাহ্ বীর উত্তম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান তখন আওয়ামীলীগের প্রতিষ্টাকালীন প্রভাবশালী নেতা, বঙ্গবন্ধুর আজীবনের বন্ধু এবং মন্ত্রীসভার প্রভাবশালী বানিজ্য মন্ত্রী খন্দকার মুশ্তাক আহমদ এর নেপথ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কতেক বিপদগামী সাবেক কর্মকর্তা লেঃ কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লেঃ কর্নেল শরীফুল হক ডালিম, মেজর নূর, রশীদ, হুদা গং এক আধা সামরীক অভ্যোত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে ক্ষমতার পালাবদল ঘটায়- খন্দকার মুশÍাক আহমদ কে রাষ্ট্রপতি বানায়। তেছরা নবেম্ভরের জেল হত্যা, বঙ্গঁভবনে বিদ্রোহী অফিসার দেরঔদ্যত্ব ও আস্ফালান, সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহ দুই বাহিনী প্রধান সহ বেতার মারফত খুনী মুশÍাক সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন জ্ঞাপন, কাউন্টার ক্যু-তে জেনারেল খালেদ মোশাররফ এর করুন মৃত্যো বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে এক চুড়ান্ত বিশৃঙ্খলা ও উত্তেজনা পরিলক্ষিত হয়। এমতাবস্থায় সাতই নভেম্বরের সিপাহী অভ্যোত্থানের মাধ্যমে বীর মুক্তি যোদ্ধা জেনারেল জিয়াউর রহমান এর গৃহবন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি, সেনাপ্রধানের দায়িত্বভার গ্রহনে স্বস্থি ফিরে আসে। সেনাবাহিনীতে চেইন-অব-কমান্ড ফিরিয়ে আনেন সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। এরই ধারা বাহিকতায় দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে দেশে পূর্ন গনতন্ত্র চালুর লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হন জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। দেশে পূর্ন গনতন্ত্র পূনঃ প্রতিষ্টার জন্য রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রয়োজনে একটি- টেলেন্টেড ক্যেবিনেট- গঠন করেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। এম.সাইফুর রহমান ১৯৭৬ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট জিয়ার আহ্বানে রাষ্ট্রপতির বানিজ্য উপদেষ্টা হিসাবে শফথ গ্রহন করতঃ তার রাজনীতিও রাষ্ট্র পরিচালনার জীবনের শুভ সূচনা ঘটান।

অর্থনীতিবিদ এম. সাইফুর রহমান বানিজ্য উপদেষ্টা হিসাবে যোগ দিলেও পরে তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মন্ত্রীসভায় অর্থমন্ত্রী হিসাবে যোগদেন। ২০০১ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার গঠিত হলে অর্থের সঙ্গেঁ পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়েরও দায়িত্ব পান এম. সাইফুর রহমান। বি.এন.পি সকল মেয়াদের সরকারামলে সফল অর্থ মন্ত্রী ছিলেন তিনি। নেতা মন্ত্রীদের পদ-পদবী পরিবর্তন হলেও অর্থমন্ত্রীর পদটি তার জন্য ছিল চীরস্থায়ী। বাংলাদেশের অর্থনীতির নাড়ি নক্ষত্র ছিল তাঁর নখদর্পনে। তার দীর্ঘ কার্য্য কালে অর্থ মন্ত্রনালয়ের পিয়ন থেকে মাননীয় সচিব, কেন্দ্রীয় ব্যাংক-বাংলাদেশ ব্যাংক এর মাননীয় গভর্নর পর্য্যন্ত একটা কর্মচাঞ্চল্য-কর্ম্ম তৎপরতা ছিল। একটি কঠিন চেইন অব কমান্ড ছিল। মন্ত্রনালয়ে গাছাড়া ভাব কিংবা- হ,য,ব,র,ল- অবস্থা ছিল না। তার বলিষ্ট ও গতিশীল নেতৃত্বে ব্যাংকিং সেক্টারে লুটপাট ছিল না- শৃঙ্খলা ছিল। মুদ্রা স্ফিতি ছিল না, মুদ্রাবাজার ছিল নিয়ন্ত্রনে, শেয়ার বাজার ছিল চাঙ্গাঁ। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং  এম.এল. এম কোম্পানীর নামে হলমার্ক, বিছমিল্লা, ইউনিপেইড টু-দের দু’নম্বরি কার্য্যক্রম – ঔদ্যত্ব ও আস্ফালন ছিলনা। তিনি ছিলেন উন্নয়ন ও অগ্রগতির অগ্রদূত-বিনিয়োগের বর পুত্র। বহু আলোচিত সমালোচিত – ভ্যেলু এ্যাডেড ট্যেক্স-ভেট- এর প্রবর্তক ছিলেন তিনি। ভ্যেট- প্রথা চালুর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নূতন গতি সঞ্চার করেছিলেন তিনি। সরকার পরিবর্তনের পর আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এলে সাবেক সরকারের সব কিছু ওলট পালট হলেও এম. সাইফুর রহমান প্রবর্তিত ভ্যেট সিষ্টেমের পরিবর্তন হয় নি, বরং এর পরিধি বেড়েছে ব্যাপক ভাবে। বর্ত্তমান মহাজোট সরকারের উচ্চভিলাসী বিশাল বাজেটের বিরাট অংকের টাকার যোগান দাতা সংস্থা-পন্থা ভ্যেলু এডেড ট্যেক্স- ভ্যেট। এম.সাইফুর রহমান হিসাব বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও রাজনীতির মধ্যে একটি চমৎকার সমন্বয় সাধন ঘটিয়েছিলেন।

রাজনীতিবিদ হিসাবেও এম. সাইফুর রহমান ছিলেন সফল সার্থক। জাগদল প্রতিষ্টায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি দলের স্থায়ী কমিটির চীরস্থায়ী প্রবীন ও প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। ছিলেন একজন সাচ্চা দেশ প্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী। সামরীক স্বৈরশাসক লেঃ জেনারেল এইচ.এম এর্শাদ সামরীক আইন জারী করতঃ তাকে গ্রেপ্তার করায়, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা চালু করে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে দলত্যাগ করতঃ এর্শাদী মন্ত্রীসভায় যোগদানের চাপ দেয়, জিয়ার সৈনিক এম. সাইফুর এর্শাদী প্রস্তাব ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করতঃ কারা যাতনা ভোগ করেন, অতঃপর মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পান। সেনা সমর্থিত তত্তাবধায়ক সরকার আমলে তিনিও তার পরিবারের উপর মামলা মোকদ্দমা ঝুলুম নির্য্যাতন হলেও তিনি দল ত্যাগ-দেশ ত্যাগ করেন নি। দলের কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবে সমগ্র বৃহত্তর সিলেট- সিলেটের উনিশটি আসন চষে বেড়িয়েছেন, দলকে সংঘটিত করেছেন।

 দেশের প্রথম বিরোধী দল জাসদের প্রতিষ্টাকালীন সংঘটক ছিলাম। কালক্রমে জাসদের হটকারিতা বিভ্রান্তি ও বহুধাবিভক্তিতে হতাশ হয়ে নিস্কৃয় হয়ে থাকি। সামরীক সৈর শাসক এইচ. এম এর্শাদামলে মেজর আলী (লেঃ কর্নেল সৈয়দ আলী আহমদ (অবঃ)) বাসায় এসে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর প্রস্তাব দিলে আমি তা প্রত্যাখ্যান করি- বলি সামরীক স্বৈরাচারকে সমর্থন করব না।

অতঃপর এম. সাইফুর রহমানের আহ্বানে স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়ন এবং গনতন্ত্রকে প্রতিষ্টানিক রূপ প্রদানের আশায় বি.এন.পি তে যোগদান করি। তার সঙ্গেঁ কোন পদ পদবীর দাবী দাওয়া করিনি- তিনি আমাকে জেলা কমিটির সদস্য করেন। নব্বইর দশকে আমাকে আমার জেলায় পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ করিয়েছিলেন, শতকরা একশত ভাগ সততা ও আন্তরিকতার সাথে দৈনিক শ’কয়েক টাকা ভাতায় কাজ করেছিলাম কোন সাইলেন্স ফি কোন দিনই নেই-নি, লাশ বানিজ্য করিনি। অতঃপর অর্থ ও পরকিল্পনা মন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান আমাকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ব বানিজ্যিক ব্যাংক এর পরিচালক নিয়োগ করেছিলেন, দু’বছর পর বোর্ড আমাকে নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান নিয়োগ করেছিলেন, পাঁচ বছরই মাসিক চার হাজার টাকা ভাতা এবং কিঞ্চিত টি.এ নিয়েছি; কমিশন খাইনি- নিয়োগ বানিজ্যও করিনি- তার মানসম্মান রক্ষা করায় তিনি আমার উপর খুবই খুশী ছিলেন। তিনি এবং তাঁর সহ ধর্মিনী বেগম দুররে সামাদ রহমান আমাকে পুত্র বৎ ¯েœহ মমতা করতেন। আমি তাঁকে কাছে থেকে দেখেছি তিনি একজন কর্ম্ম চঞ্চল কর্ম্ম তৎপর সহজ সরল সাদা মনের মানুষ, সাচ্চা জাতীয়বাদী নিখাদ দেশ প্রেমিক ছিলেন। দৃশ্যত রাশভারী হলেও মনের দিক দিয়ে তিনি ছিলেন সহজ সরল ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী। শিশু কিশোর ও ছাত্র ছাত্রীকে তিনি খুবই ভালোবাসতেন। তার সঙ্গে দলীয় কম্মসূচীতে গিয়ে দেখেছি তার সঙ্গেঁ শিশুদের জন্য থাকত চকলেট।

এহেন কর্ম্মবীর এবং কোমল হৃদয়ের অধিকারী এম. সাইফুর রহমান মৌলভীবাজার থেকে ঢাকায় বাসায় যাওয়ার পথে মারাত্মক সড়ক দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে মৃত্যো বরন করেন।

সম্প্রতি তাঁর সম্মান ও স্মরনে গঠিত হয়েছে এম. সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ। বিশিষ্ট সাংবাদিক বকশি ইকবাল আহমদকে সভাপতি এবং বিশিষ্ট আইনজীবি এডভোকেট আব্দুল মতিন চৌধুরীকে সম্পাদক নির্বাচিত করে একটি শক্তিশালী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। গত পাঁচই সেপ্টেম্বর মরহুমের অষ্টম মৃত্যোবার্ষিকী উপলক্ষে স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে স্থানীয় পৌর মিলনায়তনে এক স্মরন সভার আয়োজন করা হয়েছিল। বৃহত্তর সিলেটের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবি-আইনজীবী-সাংবাদিক-রাজনীতিবিদ দের উপস্থিতিতে অনুষ্টিত স্মরন সভায় বক্তাগন মরহুমের কর্ম্ম ও জীবন দর্শনের আলোকপাত করতঃ দেশীয় উন্নয়নে তার অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরন করেন।

পাঁচই অক্টোবর ছিল মরহুম এম. সাইফুর রহমান এর সাতাশি তম শুভ জন্মদিন। এই উপলক্ষে স্মৃতি সংসদ আদালত সড়কস্থ জাহাঙ্গীর কমিউনিটি সেন্টারে শিশু কিশোরদের জন্য চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভার আয়োজন করেন। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপুল পরিমানে শিশু-কিশোর এর উচ্ছল পদভারে কেন্দ্র মুখরিত ছিল। পরিষদের সভাপতি বকশি ইকবাল আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত উক্ত কেক কাটা ও পুরস্কার বিতরনী অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে কেক কাটেন এবং বিজয়ীদের মধ্যে প্রসংসাপত্র ও ক্রেস্ট প্রদান করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্ষীয়ান সাংবাদিক-প্রবীন আইনজীবী মুজিবুর রহমান মুজিব। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কাজি মৌলানা মোফাজ্জল হোসেন, মহিলা কলেজের প্রিন্সিপাল মোঃ ইকবাল এবং পরিষদ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল মতিন চৌধুরী। দৈনিক মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার এবং স্মৃতি পরিষদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মু. ইমাদ উদ্দীন এর উপস্থাপনায় অনুষ্টিত এই প্রানবন্ত অনুষ্টানে সুধীবৃন্দ ছাড়াও বিপুল সংখ্যক শিশু কিশোর এবং অভিভাবক মন্ডলি উপস্থিত ছিলেন। জেলা সদরে এই জাতীয় অনুষ্টান এই প্রথম।

কর্ম্মবীর এম. সাইফুর রহমান আর আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই। বাহার মর্দানের পারিবারিক গোরস্থানে তিনি চীর শয়ানে। মহান মালিক তার বেহেশত নসীব করুন এই মোনাজাত। তার সাতাশি তম জন্ম দিনে তাঁর উজ্জল স্মৃতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

[মরহুম এম. সাইফুর রহমানের ¯েœহ ধন্য কর্মি। বীর মুক্তিযোদ্ধা। সিনিয়র এডভোকেট

হাই কোর্ট। জজ কোর্ট। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব। কলামিষ্ট]

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com