বিপদগ্রস্ত এবং অভাবী মানুষকে সাহয্য করা অন্যতম ইবাদত
এহসান বিন মুজাহির॥ মুমিন মাত্রই একে অন্যের ভাই। এক মুমিন অপর মুমিনের মাঝে এমন ভালোবাসা ও আন্তরিকতা থাকবে যে, পরস্পর একটি দেহের মতো মনে হবে। একজনের ক্ষতি আরেকজনকে ততটাই আহত করবে, যতটা মাথায় আঘাত পেলে তার সারা শরীর আহত হয়। বিপদগ্রস্ত এবং অভাবের সময় একে অন্যের প্রতি আন্তরিকভাবে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে। কোনো ভাই অসুস্থ বা আহত হলে কিংবা কোনো ক্ষতি বা বিপদের সম্মুখীন হলে অপর ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। কারণ দুনিয়ায় কোনো মানুষের পক্ষে একাকী বাস করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ একে অপরের সাহায্য ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। এছাড়াও বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে। কেননা কোনো মানুষ যখন কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়, সে তখন সবচেয়ে বেশি অসহায়ত্ব অনুভব করে। ওই সময় সে আন্তরিকভাবে অন্যের সাহায্য প্রত্যাশা করে। অসহায়-অসচ্ছল মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা অন্যতম ইবাদত। আল্লাহ যাকে অর্থ-সম্পদ দিয়েছেন তিনি সে সম্পদ থেকে অভাবী মানুষকে সাহায্য করলে তাতে আল্লাহতায়ালা খুশি হন। এ ধরনের মানবিক কর্তব্য পালন রাত জেগে অবিরাম নফল নামাজ আদায় ও অবিরত নফল রোজার সমতুল্য।
ইসলাম সবসময় ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়।আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে এরশাদ করেন মুমিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই। (সুরা হুজরাত : ১০)। মহান আল্লাহ আরও এরশাদ করেন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। (সুরা তওবা : ৭১)। হজরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন-নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে। (বুখারি : ১৭৩২)। হজরত রাসুল (সা.) আরও বলেন- ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন। (মুসলিম: ২৫৬৬)। হজরত নোমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন- ‘সব মুমিন দেহের মতো। যখন তার চোখে যন্ত্রণা হয়, তখন তার গোটা শরীরই তা অনুভব করে। যদি তার মাথাব্যথা হয়, তাতে তার গোটা শরীরই বিচলিত হয়ে পড়ে। (মুসলিম : ২৫৮৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও এরশাদ করেন মুমিনরা পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক দেহের মতো। দেহের কোনো অঙ্গ আঘাতপ্রাপ্ত হলে পুরো দেহ সে ব্যথা অনুভব করে। (বুখারি : ৬০১১)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, আল্লাহপাক বান্দার সাহায্যে ততক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ সে অপর ভাইয়ের সাহায্যে থাকে। (মুসলিম : ২৩১৪)। পবিত্র কুরআন কারিমে এরশাদ হয়েছে, ‘তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে’ (সূরা জারিয়াত : ১৯)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে অন্যত্র এরশাদ করেন, ‘তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দীদের খাদ্য দান করে’ (সূরা দাহর : ৮)। হজরত আবু সাঈদ (রা.) বলেন, হুজুর (সা.) বলেছেন যে, ‘কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে বস্ত্রহীনতায় বস্ত্র দিলে আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের সবুজ বস্ত্র পরাবেন’ (তিরমিজি : ২৮৩৫)। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নাও, বস্ত্রহীন লোকদের বস্ত্র দাও এবং বন্দীকে মুক্ত করে দাও’। (বোখারি : ২৪১৭)। রাসূল (সা.) বলেন, ‘হে বনি আদম! যদি উদ্বৃত্ত অর্থ দান করো, তাহলে ভালো হবে আর আটকে রাখলে ক্ষতি হবে’। (আবু দাউদ : ১৯৬৪)। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘বান্দাহ যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ ততক্ষণ বান্দাহকে সাহায্য করে থাকেন’ (মুসলিম : ২১৪৮)। প্রিয়নবী সা: এরশাদ করেন, যে মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন, খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন’ (আবু দাউদ : ১৭৫২)।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজে সেই মানুষেরই একটা অংশ গরিব-দুস্থ। তারা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গরিব-দুস্থসহ সমাজের আশ্রয়হীন, দুর্বল ও অসহায় মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা ইসলামে অন্যতম ইবাদত। অসচ্ছল, বিপদগ্রস্ত এবং অভাবী মানুষের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসলে আল্লাহ খুব খুশি হন। তাই গরিব-অসহায়, দুস্থের প্রিিত আন্তরিক ভালোবাসা প্রদর্শন ও সহানুভূতিশীল হওয়া অত্যাবশ্যক। পরিশেষে বলা যায়-মুসলিম ভ্রাতৃত্বের মৌলিক দাবি হলো, একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং বিপদাপদে পাশে দাঁড়ানো। সহায়তা ও সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করা। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও অধ্যক্ষ, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার
মন্তব্য করুন