বিশ্বের বিস্ময়- বিস্ময়কর সাহাবি বৃক্ষঃ সর্ব শক্তিমান মহান আল্লাহ তাআলার উদারতা ও একত্ব-রহমত-বরকতের নিদর্শনঃ বৃক্ষ রোপনের এখনও সময়॥

October 26, 2017,

মুজিবুর রহমান মুুিজব॥ আদর্শ মানব-মহামানব-রসূলে খোদা হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (দঃ) স্যাঈয়েদুল মুরছালীন-খাতেমুন্নবিয়্যীন ও বটেন। শ্রেষ্ট নবী ও আখেরী নবীর ছাহাবীগন অশেষ সম্মান ও মর্য্যাদার অধিকারি। প্রিয় নবীর (দঃ) বিশ^স্থ সহচর-ছাহাবীগন মহামানব-মহানবী মোহাম্মদ মোস্তফা (দঃ) এর সাহচর্য্য লাভ করেছেন-মানব জীবন ধন্য করেছেন। মহানবী (দঃ)-র ছাহাবী-সাহচর্য্য থেকে গাছপালা বৃক্ষ রাজিও বাদ যায়নি। পবিত্র মক্কা-মদিনার মাটি মহানবীর পদস্পর্শে পূণ্য হয়েছে, পশু পক্ষী বৃক্ষ রাজিও ধন্য হয়েছে। এই খুশ নসিবী ও সৌভাগ্য থেকে বাদ যান নি মক্কা-মদিনার বাহিরের মানুষ ও বৃক্ষ রাজিও । তেমনি একটি বৃক্ষ-সাহাবি বৃক্ষ- “ঞযব ইষবংংবফ ঞৎবব” হিসাবে দেড় হাজার বৎসরাধিক কাল যাবত মাথা উচু করে মহান আল্লাহর শক্তি, সার্বভৌমত্ব-মহত্ব-কৃতিত্ব–ঘোষনা ও প্রমান করেছে জর্ডানের মরুভূমির মধবর্তী সাফাঈ নামক স্থানে। বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক যুগান্তরে “বিস্ময়কর সাহাবি গাছ” শিরোনামে এ.রিয়াজ পরিবেশিত তথ্য ও তত্ব মতে ৫৮২ খৃষ্টাব্দে বারো বৎসর বয়সে হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা(দঃ) চাচা আবু তালিবের সঙ্গেঁ বানিজ্যিক কারনে মক্কা থেকে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। বানিজ্যিক কাফেলাটি সিরিয়ার নিকটবর্ত্তী জর্ডানে এসে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তির কারনে যাত্রাবিরতি করেন। জর্ডানের এই এলাকাটি ছিল শত শত মাইল ব্যাপী বিস্তৃত মরুভূমি-বৃক্ষ বিহীন। চাচা আবু তালিব ভ্রাতৃস্পুত্র এতিম বালক মোহাম্মদ (দঃ) কে নিয়ে বিশ্রামের জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা খুজছিলেন, কিন্তু সেই উত্তপ্ত মরুভূমিতে বিশ্রামের জন্য কোন জায়গা কিংবা বৃক্ষরাজি খুঁজে না পেয়ে অনতিদূরে একটি মৃত প্রায় বৃক্ষ দেখতে পেয়ে নিরুপায় হয়েই সেই মৃত বৃক্ষের নিচে আশ্রয় নেন। এ. রিয়াজ তার বিস্ময়কর সাহাবী গাছ- প্রতিবেদনে বলেন “-কথিত আছে মোহাম্মদ (দঃ) তাঁর চাচাকে নিয়ে যখন গাছের তলায় বসেছিলেন তখন তাদের ছায়া প্রদানের জন্য আল্লাহর নির্দেশে মৃত প্রায় গাছটি সজিব হয়ে উঠে এবং গাছটির ডালপালা সবুজ পাতায় ভরে উঠে। সেই গাছটিই এখন বর্ত্তমানে সাহাবি গাছ নামে পরিচিত। সেই সময় অদূরে দাড়িয়ে বুহাইরা নামক একজন পাদ্রী এইসব কুদরতি দৃশ্য দেখছিলেন। আবু তালিব মোহাম্মদ (দঃ) কে নিয়ে পাদ্রীর নিকটবর্ত্তী হলে খৃষ্টান পাদ্রী বলেন তিনি কোন দিন এই পাতা বিহীন বৃক্ষের নিচে কাউকে বসতে দেখেন নি এবং এই পাতা বিহীন বৃক্ষ এখনই লতাপাতায় পরিপূর্ন হল। জ্ঞানীও বিদ্বান ও বুদ্ধিমান খৃষ্টান পাদ্রী এই বালকের নাম ঠিকানা ও পরিচয় জানতে চাইলে চাচা আবু তালেব বালক মোহাম্মদ (দঃ) এর নাম পিতার নাম আব্দুল্লা এবং মাতার নাম আমিনা বেগম বল্লে পাদ্রী বুহাইরা বালক নবিজীকে দেখে পিতা মাতার পরিচয় শুনে বুঝলেন যে ইনিই বহু প্রতিক্ষিত শেষ নবী মোহাম্মদ (দঃ)। পাদ্রী বল্লেন এই বালকটিই হবে সারা জগতের সর্দার, সারা বিশে^র নেতা এবং শেষনবী। ধর্ম গ্রন্থ বাইবেলে তিনি তাই পাঠ করেছেন। খৃষ্টান পাদ্রী বালক মোহাম্মদ (দঃ) কে শেষ নবী হিসাবে ঘোষনা করলেন। সেই ৫৮২ খৃষ্টাব্দ থেকে অদ্যাবধি ২০১৭ সাল পর্য্যন্ত বিশে^র বিস্ময়- বিস্ময়কর সাহাবি গাছ এই বিশাল বালুকাময় মরুভূমির মাঝে বেঁচে আছে। অথছ এই গাছের চারিদিকে শত বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বৃক্ষহীন বিশাল মরুভূমি। জর্ডানের বাদশা আব্দুল্লাহ সর্ব প্রথম এই স্থানকে পবিত্র স্থান বলে ঘোষনা দেন।
মিডিয়ার কল্যানে এই পবিত্র বৃক্ষ ও স্থানটি বিশ^বাসির দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। ইসলামী ঐতিহ্য সচেতন অনুসন্ধানী গবেষক মৌলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী সরেজমিনে জর্ডান গমন করতঃ বিশে^র বিস্ময় বিস্ময়কর সাহাবি বৃক্ষের উপর একটি আকর্ষনীয় প্রতিবেদন প্রচার করে নবীপ্রেমিক তৌহিদী জনতার প্রশংসা ও শ্রদ্ধাভাজন হয়েছিলেন। আফসোস ইসলাম ও বিশ^নবীর অদৃশ্য দুশমনগন মৌলানা ফারুকীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মহান আল্লাহ শহীদ মৌলানা ফারুকীকে বেহেশত নসীব করুন এবং ঘৃন্যতম ঘাতক গনকে লান্নত দিন- এই মোনাজাত।
বৃক্ষ, লতাগুল্ম, গাছ, গাছালি ভূ-প্রকৃতির অলংকার- মহান আল্লাহর উপহার রহমত বরকত এবং নিয়ামত ও বটে। আমাদের জীবন ধারনের জন্য অক্সিজেন দেয় বৃক্ষ। ঔষধী বৃক্ষ মানুষের জীবন রক্ষায় ঔষধ-পথ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। প্রকৃতিতে ভারসাম্য রক্ষা-ইকোলজিক্যাল ব্যালান্স-রক্ষা করে বৃক্ষ। মানব সভ্যতার ক্রম বিকাশও অগ্রাভিজানে বৃক্ষ রাজির গুরুত্ব অপরিসীম।
একটি দেশের মোট আয়তনের আনুমানিক ত্রিশভাগ ভূমিতে বৃক্ষরাজির প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞগন মনে করেন। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ হওয়াতে আবহাওয়া জনিত কারনেই বৃক্ষরাজির বেড়ে উঠা সহজতর। কিন্তু বৃক্ষ ও ভূমি খেকো এক শ্রেনীর আদম সন্তানগন বৃক্ষ রোপন-লালনের চাইতে কর্তনেই অতি উৎসাহী। বনরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কতেক অসাধু বনকর্মকর্তা ফরেষ্ট গার্ড থেকে সি.সি.এফ. পর্য্যন্ত কতেক বনদস্যুদের সঙ্গেঁ অশুভ আঁতাত করে বাংলাদেশের বন সম্পদ মূল্যবান বৃক্ষরাজি উজার করছে। দেশীয় বনভূমির পরিমান ত্রিশ শতাংশ নয়, হয়ত তিন ভাগেই নেমে এসছে। বিগত তত্বাবধায়ক সরকারামলে সি.সি.এফ ওসমানগনী সাহেবের কলশ ও বালিশ ভর্তি টাকায় বুঝা গেছে প্রধান বন সংরক্ষক হিসাবে বন রক্ষা নয় বন উজার করেই তিনি বালিশ-কলশ ভর্ত্তি টাকার কুমীর হয়েছিলেন।
অপরপক্ষেঃ দেশব্যাপী বৃক্ষ রোপন, পরিচর্য্যা ও লালনের চিত্রটি আশাব্যাঞ্জক নয়। বর্ষাকালে জাতীয় পর্য্যায় থেকে জেলা উপজেলা পর্য্যায় পর্য্যন্ত উৎসবাকারেই বৃক্ষ মেলা অনুষ্টিত হয়। বৃক্ষ মেলায় নানান প্রজাতির বৃক্ষরাজির সঙ্গেঁ বর্ত্তমান প্রজন্ম পরিচিত হন। চারাও বিক্রি হয় প্রচুর। বৃক্ষ মেলা শেষে এর আবেদন শেষ হয়ে যায়। ফলতঃ স্বল্পমেয়াদী বৃক্ষ মেলা ও প্রদর্শনী বৃক্ষ চর্চায় ইতিবাচাক অবদান রাখতে পারে না। আমাদের ব্যাক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৃক্ষ মেলা ও বৃক্ষ রোপনকে দিবস ভিত্তিক আনুষ্টানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সামাজিক আন্দোলনে পরিনত করতে হবে, সাংবাৎসরিক কার্য্যক্রমে রুপান্তরিত করতে হবে। নতুবা বৃক্ষ নিধন বৃক্ষ কর্তনী কার্য্যক্রম, বৃক্ষ রোপন-লালনি কার্য্যক্রমের চাইতে অধিক হয়ে যাবে। জাতীয়ভাবে বৃক্ষ ও প্রকৃতি প্রেমিদের সংখ্যাও হাতে গোনা -দু’চারজন মাত্র। বাংলাদেশে বৃক্ষমানব ছিলেন একজনই- উদ্ভিদ বিজ্ঞানী নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্ম্মা সম্প্রতি লোকান্তরিত হয়েছেন। দেশে উন্নয়ন ও গনমুখী উন্নয়ন কর্মি, মাটি মানুষের বন্ধু শাইখ সিরাজ একজনই, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের প্রধান মুকিত মজুমদার বাবুও একজনই। তরুলতা, বৃক্ষবিষয়ক জীবনবাদি আন্দোলন রাজধানী ঢাকায়ই সীমাবদ্ধ। ঢাকা-চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ, খুলনা, সিলেট অঞ্চলে পাহাড়-পর্বত-বৃক্ষরাজি থাকলেও মফস্বলে বৃক্ষ পরিচর্য্যার আন্দোলন বেগবান হয় নি। সিলেট অঞ্চলে প্রকৃতি ও নিসর্গ প্রেমী সাংবাদিক-কলামিষ্ট আফতাব চৌধুরী নিজ উদ্যোগে দীঘদিন যাবত বৃক্ষ রোপন করে তাঁর প্রিয় ভূবনকে সবুজাত করে তুলেছেন- সমাজ কর্তৃক প্রসংশিত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে- জাতীয় পর্য্যায়ে বৃক্ষরোপনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার-স্বর্নপদক পেয়ে বৃক্ষরোপন আন্দোলনের ইতিহাসে নিজের নাম স্বর্নাক্ষরেই লিখিয়ে রেখেছেন। পাক আমলের প্রথম ভাগে ঐতহ্যিবাহী জেলা হবিগঞ্জের এক খান্দানী ও অভিজাভ পরিবারের সু- সন্তান সৈয়দ আবরু শুভ বিবাহের পর দিনই ঘর সংসার ছেড়ে আল্লাহর নামে ফানাফিল্লাহ হয়ে বেড়িয়ে পড়েছিলেন অজানার পথে। থেকে যান বৃক্ষ ও বানিজ্যের শহর শ্রীমঙ্গলে। হাল আমলে এই ওলিআল্লাহ-গাছপীর হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন-তাঁর পৈত্রিক নামটি হারিয়ে গিয়েছিল। চারাও বৃক্ষ ছিল তার সন্তানের মত। এই গৃহহীন ফকির আজীবন রাস্তাঘাটে বৃক্ষ রোপন করে গেছেন। তিনিও এখন সিরাজনগরে-চীর শয়ানে। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলেও গাছপীর হুজুর ছিলেন একজনই।
বাংলাদেশের মাটি উর্বর। আবহাওয়া আদ্র। এদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ থাকার কারনে বৃক্ষ রোপন, পরিচর্য্যা ও লালনের প্রকৃত পরিবেশ বিদ্যমান। বৃক্ষ রোপন সুন্নত। ছদকায়ে জারীয়া। গাছ মানুষের বন্ধু। জীবনে মরনে প্রয়োজনীয়। ছেলেমাস্তান-নেশাখোর হতে পারে- বৃদ্ধ পিতা মাতাকে ওল্ডহোমে পাঠাতে পারে, ভরন পোষন না দিতে পারে, ঐশীর মত খুনীয় হতে পারে, কন্যা সন্তান পিতা মাতাকে পরিত্যাগ করে প্রেমিকের হাত ধরে অজানার উদ্দেশ্যে চলে যেতে পারে কিন্তু বৃক্ষ প্রতারনা করেনা, আওয়াজ করে সময় মতো কাজ দেয়, ফুল দেয়, ফল দেয়, সবুজাভ করে আমাদের বিবর্ন পৃথিবী-বর্নহীন ভালোবাসাকে। দেশের আবহাওয়া এখনও আদ্র। বৃক্ষরোপনের এখনও সময়।
[সিনিয়র এডভোকেট হাই কোর্ট। মুক্তিযোদ্ধা। প্রকৃতি ও বৃক্ষ প্রেমি। সাবেক সভাপতি জেলা আইনজীবী সমিতি ও মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব]

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com