বিশ্ব ভালোবাসা দিবস : কী বলে ইসলাম

February 14, 2022,

এহসান বিন মুজাহির॥ ভালোবাসা শব্দটি পবিত্র। সৃষ্টি জগতের প্রতি ভালোবাসার টান হওয়াটই স্বাভাবিক। ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি, যা মানুষের মনের গহিনে প্রবাহমান থাকে। ভালোবাসা সব মাখলুকাতের মাঝে রয়েছে। পরস্পরের মধ্যে প্রীতি স্থাপনের জন্য আল্লাহ প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই ভালোবাসা তৈরি করে দিয়েছেন। ভালোবাসার কারণেই শ্রদ্ধাময়ী মা গর্ভে সন্তান ধারণ করেন। পিতা কঠোর পরিশ্রম করে সন্তানকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। ভালোবাসার কারণেই বন-জঙ্গলের হিংস্র প্রাণীগুলোও স্বজাতিদের নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করে। ভালোবাসার স্রোত সবসময় বহমান। ভালোবাসার জন্য কোনো ক্ষণ, দিবস-রজনী নির্দিষ্ট নেই। বিয়ের পূর্বে তরুণ-তরুণীদের অবৈধ ভালোবাসা ইসলামে গুরুতর অপরাধ। অবৈধ ভালোবাসা মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের সকল অকল্যাণ বয়ে আনে। কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে ভালোবাসা কেবল বিয়ের পরই। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়, এর মধ্যে অনেক সওয়াবও কল্যাণ রয়েছে।
চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে, দুই শত সত্তর সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। তখন রোমের সম্রাট ছিলেন কর্ডিয়াস। সেই সময় ভ্যালেন্টাইন নামে একজন সাধু, তরুণ প্রেমিকদের গোপন পরিণয়-মন্ত্রে দীক্ষা দিতেন। এ অপরাধে সম্রাট কর্ডিয়াস সাধু ভ্যালেন্টাইনের শিরচ্ছেদ করেন। তার এ ভ্যালেন্টাইন নাম থেকেই এ দিনটির নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশে এ দিবসটির সূচনা হয় হয় ১৯৯৯ সালে। এখন বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ তথা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি এলেই দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে যুবক-যুবতীরা প্রেমের জোয়ারে বেসামাল হয়ে ওঠেন। নিজেদের রূপ- সৌন্দর্য উজাড় করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসেন। শুধু তাই নয়, অঙ্কন শিল্পীরা উল্কি আঁকার জন্য পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন রাস্তার পাশে। তাদের সামনে তরুণীরা পিঠ, বাহু আর হস্তদ্বয় মেলে ধরে পছন্দের উল্কিটি এঁকে দেয়ার জন্য। তারপর রাত পর্যন্ত নীরবে-নিভৃতে প্রেমিক প্রেমিকার খোশগল্প, অসামাজিকতা, অনৈতিকতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নগ্নতা, সবশেষে কখনও কখনও অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক ও ধর্ষণ! এটাই হলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের বাস্তব চিত্র!
অবৈধ ভালোবাসা সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন-‘তোমর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (সূরা বনি ইসরাঈল : ৩২)। আল্লাহ আরও বলেন-‘স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ কিংবা গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করবে না’। (সূরা আল মায়িদা : ৫)। সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদের চোখ নীচু রাখতে এবং লজ্জা স্থান হেফাজত করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুরা নুরের ৩১ নং আয়াতে নারীদের বেলায়ও পর্দা করার কথা বলা হয়েছে। সূরা আহজাবের ৫৯ নং আয়াতে পর্দা করার নির্দেশ আরো পরিস্কার ভাষায় বলা হয়েছে। যেখানে দৃষ্টি নীচু ও সংযত রাখা, লজ্জা স্থান হেফাজত করার কথা এবং পর্দা করার কথা বলা হয়েছে।
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালার বান্দাগণের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছেন, যারা নবীও নয়, আর শহীদও নয়। কিন্তু বিচার দিবসে তাদের মর্যাদা দেখে নবী ও শহীদগণ তাদের ওপর ঈর্ষা করবেন। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল (স.) তারা কারা? উত্তরে তিনি বললেন, সেসব লোক, যারা শুধু আল্লাহর মহব্বতে একে অপরকে মহব্বত করেছেন। তাদের মধ্যে নেই কোনো রক্তের সম্পর্ক, নেই কোনো বংশের সম্পর্ক। তাদের মুখমণ্ডল হবে জ্যোতির্ময় এবং তারা নূরের মিম্বরের ওপর অবস্থান করবেন।কেয়ামতের বিভীষিকাময় অবস্থায় মানুষ যখন ভীত-সন্ত্রস্ত্র থাকবেন, তখন তারা ভীত হবেন না। আর মানুষ যখন দুঃখে থাকবে, তখন তাদের কোনো দুঃখ থাকবে না। (তিরমিজি : ১৯৩৭)।
অবৈধ ভালোবাসা সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন, নারী কিংবা ছোট বাচ্চাদের প্রতি আসক্তি কোনো ব্যক্তিকে এমন বিপর্যয়ে নিপতিত করতে পারে, যা থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা কারো নেই। এর পরিণতি খুবই ভয়াবহ, তার পূণ্যের ভাণ্ডার একেবারে শূন্য হয়ে যায়। প্রথম পর্যায়ে কারো চেহারার প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়, দ্বিতীয় পর্যায়ে সে তার প্রেমে মগ্ন হয়ে যায়। যার প্রভাবে সে ধীরে ধীরে নানা অপকর্ম ও অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ে যা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। তবে সবচেয়ে বড় মসিবত হচ্ছে, আল্লাহর রহমত থেকে দূরে নিক্ষিপ্ত হওয়া। কারণ, বান্দা যখন আল্লাহর ইবাদত ও তার প্রতি নিবিষ্ট চিত্ত থাকে, তখন তার কাছে আল্লাহর মহব্বতের চেয়ে মধুর ও সুখকর কোনো জিনিস হতে পারে না। (মাজমুউল ফাতওয়া, খন্ড ১০, পৃষ্ঠা, ১৮৭)। ভালোবাসার মধ্যে যখন দুনিয়াবি কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকে না, তখন সে ভালোবাসার মাধ্যমে মানবজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। ভালোবাসা দিবসের নামে ইসলামবহির্ভূত নির্লজ্জ দিবস উদযাপন ইসলামে হারাম। অশ্লীলতা- নোংরামিতে ভরপুর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপনের নামে এমন বেহায়াপনা কর্মকাণ্ড থেকে মুসলিম উম্মাহকে দূরে থাকতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও প্রিন্সিপাল, শ্রীঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com